Ajker Patrika

‘আফসোস তিস্তা মহাপরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি’

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ মে ২০২৩, ২২: ৩৮
‘আফসোস তিস্তা মহাপরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বৈষম্য দূরীকরণ, দারিদ্র্যের হার কমানোসহ নদী নির্ভর উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে তিস্তা চুক্তির পাশাপাশি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। তিনি উত্তর জনপদের মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষি ও প্রকৃতি বাঁচাতে দ্রুত এ খাতে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রতি জোর দাবি জানান। 

আজ শনিবার রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের এক গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা তার উদ্যোগে আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু আফসোস সেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আজ তিস্তা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চরের ওপর চর পড়েছে। আর ভাঙনের পর ভাঙনে তিস্তাপাড়ের মানুষ আজ নিঃস্ব।’ 

তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তা আমার নদী, আমাদের নদী। তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন আমাদের সবার দাবি, এটা আমাদের প্রাণের দাবি। এর মধ্যে যারা নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি ও চীন-ভারতের সম্পর্কের প্রশ্ন খোঁজেন, আমি তাদের বলল এই খেলা আমাদের নিয়ে খেলবেন না। তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন কোনো চক্রান্ত, বাঁধা আমরা মানব না। আগামী জাতীয় বাজেট অধিবেশন আমরা সংসদেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাইব।’ 

গণসমাবেশে জাসদের সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর হয়েছে। আপনার (শেখ হাসিনার) হাত ধরেই আপনার ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এবারের বাজেটে টাকা চাই। এবারের বাজেটে আমাদের এক নম্বর দাবি হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য টাকা দেও, টাকা দেও।’ 

সাবেক তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তার পানি ভারত থেকে আসে। সেটা নিয়ে পানি চুক্তির ব্যাপার রয়েছে। ২০১২ সালে ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক থেকে তা নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। তিস্তার পানি চুক্তি হবে বলে একমতও হয়েছে ভারত। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিবছর সরকার তাগাদা দিচ্ছে, কিন্তু হচ্ছে হচ্ছে করেও হচ্ছে না। আমরা শুধু তিস্তার পানি চুক্তি চাই না, আমরা চাই তিস্তা মহাপরিকল্পনারও বাস্তবায়ন হোক।’ 

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গণসমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকাগণসমাবেশের উদ্বোধক রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘পদ্মা সেতু যদি দেশের টাকায় নির্মাণ করা সম্ভব হয়, তাহলে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপের কারণে দেশের মানুষের অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়েছে। ওই পদ্মা সেতুতে রংপুর বিভাগের মানুষের ট্যাক্স ও ভ্যাটের টাকা দেওয়া রয়েছে। বর্তমানে দেশে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। কিন্তু উত্তরের মানুষের জন্য কোনো মেগা প্রকল্প নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই।’ 

সংসদে রংপুর অঞ্চলের এমপি-মন্ত্রীরা মনোনয়ন হারাবার ভয়ে তিস্তা নিয়ে কথা বলেন না অভিযোগ করে সিটি মেয়র বলেন, ‘আমরা চীন-ভারত বুঝি না। পদ্মা সেতুর মতো আমরা নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। এটি গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমাদের এমপি-মন্ত্রীরা সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিস্তার দাবি তুলে ধরতে ভয় পায়। কারণ তারা মনোনয়ন হারানোর ভয় করে। যারা জনগণের গণ দাবি নিয়ে কথা বলতে চান না তাদের রংপুরের মানুষ আগামীতে লাল কার্ড দেখাবে।’ 

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর বসবাস রংপুরে। তারপরও বিশেষ কোনো বরাদ্দও নেই। বরং রংপুরকে পিছিয়ে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দের এক শতাংশের চেয়ে কম বরাদ্দ রংপুর বিভাগের জন্য দেওয়া হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘দেশে চলমান তিন লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প চললেও রংপুর বিভাগের জন্য কোনো মেগা প্রকল্প নেই। তিস্তা সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ তিস্তা নদীর ভাঙন-বন্যায় প্রতিবছর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ নিঃসন্দেহে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বহুগুণ বেশি।’ 

অধ্যক্ষ নজরুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে, সাড়ে আট হাজার কোট টাকা ব্যয় করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তার পরিচর্যা নিশ্চিত করা। এটি হলে প্রতিবছর ভাঙন ও বন্যা থেকে রক্ষা পাবে হাজার হাজার কোটি টাকা। রংপুরের সঙ্গে সারা দেশের বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্যও তিস্তা সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই।’ 

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গণসমাবেশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। ছবি: আজকের পত্রিকাসংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য গেরিলা লিডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান। 

এ ছাড়া তিস্তা নদী বেষ্টিত রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলা থেকে আগত তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের পাশাপাশি সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। 

গণসমাবেশ থেকে আগামী ১ জুন রংপুর বিভাগীয় শহরসহ তিস্তা বেষ্টিত পাঁচ জেলায় তিস্তা মহাপরিকল্পনাসহ ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সকাল ১০টায় ৫ মিনিট স্তব্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া দাবি আদায়ের সপক্ষে জনমত সৃষ্টিতে প্রতিটি জেলায় সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: ফেসবুকে বাকের মজুমদার

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় এক দিনে ১০০ ডলার কমল সোনার দাম

যুদ্ধ বলিউডের সিনেমা নয়: ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

টাকা চুরি করতে দেখে ফেলায় দুই খালাকে হত্যা করে কিশোর: ডিবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত