Ajker Patrika

‘ঘটনার আগে প্রশাসন হামাক ডাকি কলো আর সমস্যা নাই’

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১৬: ৫৭
‘ঘটনার আগে প্রশাসন হামাক ডাকি কলো আর সমস্যা নাই’

রাত তকন ৮-৯টা। প্রশাসন হামাক ডাকি কলো আর কোনো সমস্যা নাই। তোমরা বাড়িত যাও। তার কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ওরা মিছিল নিয়া আসে। তারপর ওরা গোয়ালঘর, ঘরে, পলের পুন্জে (খড়ের গাদা) আগুন লাগিয়ে দেয়। হামরা জীবনের ভয়ে বাড়ি ছাড়ি পালি যাই।

আজ মঙ্গলবার বড় করিমপুর কসবা হিন্দুপল্লির (মাঝিপাড়া) বাসিন্দা সোহাগী রানী মাইকে কথাগুলো যখন বলছিলেন, তখন তাঁর পাশে ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এ সময় শতাধিক নারী-পুরুষ নির্বাক হয়ে রোববার রাতে হিন্দুপল্লিতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বর্ণনা শুনছিলেন।

সর্বস্ব হারানোদের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনতে নিজেই মাইকে নাম ডেকে ডেকে হিন্দু নারীদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দেন হাসানুল হক ইনু।

এ সময় আরেক নারী পুঁথি রানী বলেন, ‘আমরা সকলে বাড়িত ছিলাম। ওরা এক দেড় শ লোক আসি আমার ভাসুরের ঘরে আগুন লাগে দেয়। তকন আমার স্বামী আগুন নেভাতে গেলে ওরা আমার স্বামীকে মারপিট করে আগুনে পোড়া দিতে ধরে। তকন আমি ওদের পা ধরলে আমাকে তারা পা দিয়ে গুঁড়ি (লাথি) দিয়ে ফেলে দেয়। তারপরও আমি স্বামীক ছাড়ি দেই নাই স্যার। আমি স্বামীকে উদ্ধার করে বলি তুমি চলে যাও। তারপর বাড়িতে আসি দেকি আমার ঘরের সব লুটপাট করি নিয়া গিয়ে আগুন লাগে দিছে।’ এ কথা বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন পুঁথি রানী। এ সময় তিনি হাসানুল হক ইনুকে প্রশ্ন করে বলেন, আমার একন কী হবি স্যার? তখন ইনু বলেন, আচ্ছা আমি তো আসছি।

আরেক ভুক্তভোগী পূর্ণিমা রানী বলেন, আমরা যকন ছোট বড় সবাই মন্দিরে ছিলাম, তকন স্বামী বলল, তোমরা মেয়েরা সবাই বাড়ি বাড়ি চলে যাও। কারণ হামলা করলে মা, বোনের ওপর করবি। আমরা সবাই বাড়ি যাই। এরপর ওরা (হামলাকারীরা) আমার চাচা শ্বশুরের ঘরে আগুন লাগে দিল। তারপর আমার ঘরে ঢুকে ওরা মালপত্র লুট করে নিয়া যায়।

এ সময় হাসানুল হক ইনু বলেন, জাসদের পক্ষ থেকে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনাদের আক্রমণ ঠেকাতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। তিনি আরও বলেন, এখানে সমস্যা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, চেয়ারম্যান, গণ্যমান্য সম্প্রদায় বসে বিষয়টা সমাধান করবে। কিন্তু হামলাটা হয়ে গেল এ পাড়ায়। তালিকা অনুযায়ী ২৭০ জন নারী-পুরুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার বর্ণনা শুনে মনে হলো, যারা হামলা করছে, তারা ঘরের কাছের লোক। কারণ হামলাকারীর একজন বলেছে মেয়েটা কোথায়? কার ঘরে কী আছে? কোথায় কী রাখা আছে? উপহারের টাকা কোথায়? তারা সবই জানে। তারা পাড়ায় ঘোরাফেরা করা লোক। সুতরাং যারা অপরাধ করেছে। তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সেটিই বাস্তবায়ন করা হোক। যে সম্পদ লুট হয়েছে, তার তালিকা করে প্রশাসনের হাতে দিয়ে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পান, এটাই চাই। পাশাপাশি তিনি বলেন, দেশে পূজায় ৫০টি স্থানে মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মন্দির চকচকে করে দিতে হবে, এটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। 

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত নিম চন্দ্র ভৌমিক কসবা হিন্দুপল্লির মাঝিপাড়া পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, এখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা করা হয়েছে, উত্তেজনা সৃষ্টি করার জন্য। হামলাকারীরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছে এমন পরিস্থিতির জন্য। আমরা এটির বিচার চাই। 

গত রোববার রাতে পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় করিমপুর কসবা হিন্দু পল্লি মাঝিপাড়ার বাসিন্দা পরিতোষ সরকার পবিত্র কাবাঘরের একটি অবমাননাকর ছবি ফেসবুকে আরেকজনের পোস্টে কমেন্টে দেন। এর জেরে ওই গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। 

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে জাসদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ২ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মোদির সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত, দাবি পুতিনের শীর্ষ সহযোগীর

মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত