Ajker Patrika

রংপুরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই ভাইয়ের একজন উচ্চ আদালতে খালাস

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই ভাইয়ের একজন উচ্চ আদালতে খালাস

রংপুরের তারাগঞ্জে গৃহবধূ হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই ভাইয়ের একজনকে বেকসুর খালাস ও অপরজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আজ মঙ্গলবার এই রায় দেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উচ্চ আদালতের আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম রসূল ওরফে বকুল। তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

২০১৭ সালের ১৮ মে রংপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. কামরুজ্জামান এক গৃহবধূ হত্যা মামলায় দুই সহোদরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দেন।

আদালত থেকে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ারকাজীপাড়া গ্রামের গৃহবধূ কল্পনা রানীকে (১৯) শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠে তাঁর স্বামী নিপেন চন্দ্র রায় ও নিপেনের বড় ভাই লক্ষণ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। মামলার বাদী ছিলেন, কল্পনা রানীর আত্মীয় সতীশ চন্দ্র অধিকারী।

নিম্ন আদালতে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রংপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক ওই দুই ভাইকে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দেন। পরে ২০১৭ সালে ওই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সসহ আপিল মামলা দায়ের করা হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার আজ নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লক্ষণ চন্দ্র রায়কে বেকসুর খালাস এবং অপর আসামি নিপেন চন্দ্র রায়ের মৃত্যুদণ্ডের সাজা পরিবর্তন করে তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। উচ্চ আদালতে মামলাটি আসামি পক্ষে পরিচালনা করেন হাইকোর্টের আইনজীবী গোলাম রসূল ওরফে বকুল।

এদিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে লক্ষণ চন্দ্র বলেন, ‘ভগবান রক্ষা করেছেন। উচ্চ আদালত থেকে ন্যায় বিচার পেলাম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার সামনেই ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল যুবকের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর থানা এলাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে মো. আকবর (৩৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে থানার মাইজপাড়া এলাকায় ভুক্তভোগী ব্যত্তির বাড়ির সামনে এই ঘটনা ঘটে। নিহত আকবর ওই এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে।

হালিশহর থানা-পুলিশ জানায়, বাড়ির সামনে আকবরকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। ছুরিকাঘাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে স্বজনেরা তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।

এই বিষয়ে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক জানান, ছুরিকাহত যুবককে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর চমেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করার কথাও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অঙ্ক না পারায় পিটিয়েছেন শিক্ষক; অচেতন ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আহত ছাত্রীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ছাত্রীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ায় অঙ্ক না পারায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মুমূর্ষু অবস্থায় ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার চরচেঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটে।

অভিযোগে জানা যায়, চরচেঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে গণিতের ক্লাস চলাকালে অঙ্ক না পারায় সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম মারধর করেন। এতে এই ছাত্রী শ্রেণিকক্ষেই অচেতন হয়ে পড়ে। সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

ছাত্রীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাসে অঙ্ক না পারায় শিক্ষক রেজাউল করিম ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন। বেত্রাঘাতে তার মেরুদণ্ডে আঘাত পায়। অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখনো সে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না।’

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিমান চন্দ্র আশ্চর্য জানান, ‘সে হঠাৎ হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শরীরের কোনো একটা অংশে মারাত্মক আঘাত পাওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাতিয়ার বাইরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘অঙ্ক না পারায় তাকে পিঠে একটি থাপ্পড় দিয়েছি। এই আঘাতের কারণে সে অসুস্থ হওয়ার কথা না। এরপরও সে অসুস্থ হওয়ায় আমরা তাকে হাসপাতালে গিয়ে দেখে এসেছি। ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তর: জব্দ করা মাছ নিয়ে ‘হরিলুট’

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
গতকাল রাত ৯টার দিকে শত শত মানুষ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে জব্দ করা জাটকা লুট করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাত ৯টার দিকে শত শত মানুষ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে জব্দ করা জাটকা লুট করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কম্পাউন্ডে জব্দ করা জাটকা মাছ নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা ও ‘হরিলুটের’ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে শত শত মানুষ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে জব্দ করা জাটকা লুট করে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ঘটনাস্থলে থাকা চারজন আনসার সদস্য।

জাটকা বিতরণের সময় মৎস্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্টন সরিয়ে রেখে অল্প কিছু মাছ বিতরণের অভিযোগ উঠলে হট্টগোল শুরু হয়। এরপর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে।

সরেজমিনে গতকাল রাত ৯টার দিকে দেখা যায়, গ্যারেজের পাশে মৎস্য অফিসের কয়েকজন স্টাফকে অন্তত তিনটি জাটকাভর্তি কার্টন ধরে রাখতে দেখা যায়। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা একটি কার্টনভর্তি জাটকা লুট করে নিয়ে যায়। লুটের সময় অনেক নারীকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক নারী অভিযোগ করেন, কর্মকর্তারা প্রতারণা করেছেন। তাঁরা সব মাছ নিজেদের জন্য সরিয়ে রেখে অল্প কিছু অফিসের সামনে রেখে গেট খুলে দেন। এরপর শত শত সাধারণ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

আমিন হাওলাদার নামের একজন বলেন, মাছ ছিল ১০-১২ কার্টন। কিন্তু একটি কার্টনের মাছ বণ্টন করতে গেট খুলে দিলে হরিলুট চলে। তাদের থামাতে আনসাররা চেষ্টা করেও পারেননি।

নীহারিকা মণ্ডল নামের এক গৃহিণী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘একটা জাটকাও পাইনি। সব লুট হয়েছে। স্যাররা পেছনে কার্টন ভর্তি করে রেখেছে।’ মহসীন মিয়া নামে শেরেবাংলা সড়কের এক যুবক বলেন, ‘কয়েকটি মাদ্রাসার লোকজনকে বস্তা ভরে জাটকা দিয়েছে। কিন্তু গরিবেরা দাঁড়িয়ে থেকেও পায়নি।’

এ বিষয়ে জানতে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. কামরুল হাসানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি অভিযান পরিচালনা করতে নিষেধ করেছিলাম। তারপরও সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসানের নেতৃত্বে অফিসের সামনেই বাস থামিয়ে অভিযান চালানো হয় এবং বেশ কিছু মাছ উদ্ধার করা হয়।’ তবে কী পরিমাণ মাছ উদ্ধার হয়েছিল, তা তিনি জানাতে পারেননি।

রিপন কান্তি স্বীকার করেন, ‘দুস্থদের মধ্যে বিতরণকালে কিছু মাছ লোকজন লুট করেছে। সেখানে চারজন আনসার ছিল।’ তবে তার স্টাফরা মাছ সরিয়ে ফেলেছেন, এমন অভিযোগ মানতে নারাজ তিনি। তিনি বলেন, ‘যারা বলেছে, তারা গুজব ছড়িয়েছে। আমার স্টাফদের জাটকা নেওয়ার সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে অসময়ের বৃষ্টি: ১০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫৩
বৃষ্টিতে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। গতকাল সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃষ্টিতে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। গতকাল সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘বাজারে মুলা তোলার আগেই সব শেষ হইয়া গেল—এই যে জমি, এখন শুধু পানি আর পানি।’ গতকাল শুক্রবার সকালে জমির সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক রাব্বানী মন্ডল। রাব্বানীর চোখের কোণে পানি, পায়ের নিচেও হাঁটুসমান পানি। একসময় যে জমি ভরে উঠেছিল মুলার গাছে, এখন সে জমি ডুবে রয়েছে বৃষ্টির পানিতে।

নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এখনো এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা, তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার হাজারো কৃষক এখন বড় ক্ষতির মুখে। শাক থেকে শুরু করে ঢ্যাঁড়স, মুলা, পেঁয়াজ; এমনকি আমন ধান—সব ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ৪ হাজার ২০০ জন। দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, ১৯৮৬ সালের পর এই সময়ে এমন বৃষ্টি আর কখনো দেখেননি তাঁরা। গতকাল সকালে পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক রাব্বানী মন্ডলের সঙ্গে। মুখে বিষণ্ণতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি এবার হইছে। এখনো পানি নামেনি। ৫ বিঘা জমি পানির নিচে। চারপাশে পুকুর, পানি নামারও পথ নাই।’

রাব্বানী আরও বলেন, ‘সরকার যদি পাশে থাকে, তাহলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব। তা না হলে কঠিন হবে।’

পবা উপজেলার শিয়ালবেড়, পাইকপাড়া, দাদপুর ও মুরারীপুর গ্রামের মাঠজুড়ে একই চিত্র। যেদিকে চোখ যায়, এখনো চোখে পড়ে কেবল পানি। কোথাও ধান হেলে পড়েছে, কোথাও শাকসবজি ডুবে রয়েছে পানির নিচে। পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১২ কাঠা জমিতে শাকসবজি করেছিলাম, বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এমন সময় তো বৃষ্টি হয় না।’

একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ১ বিঘা জমিতে বি৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটার আগেই নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে পানি উঠেছে, বাতাসে ধানের গাছ হেলে পড়েছে। মাঠে দেখা গেল, কৃষকেরা কাদামাটি মাড়িয়ে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন। সেখানে তাঁর ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, ‘অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পর বৃষ্টি হইলে এই সর্বনাশ হতো না।’

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এ মান্নান বলেন, নভেম্বরের শুরুতেই যে বৃষ্টি হয়েছে, সেটি মূলত নিম্নচাপের কারণে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন জমি শুকিয়ে দ্রুত নতুন ফসল লাগাতে পারেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রণোদনা এলে তা বিতরণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত