Ajker Patrika

সিরাজগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব: পৌরসভার পানি ‘দূষিত’ তিন শতাধিক আক্রান্ত

  • গত ১২ দিনে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৭০ জন রোগী
  • ধানবান্ধি মহল্লা ও হোসেনপুরে আক্রান্ত বেশি
  • রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে অনেকে
  • জনবলসংকট, সেবা দিতে হিমশিম
আব্দুল্লাহ আল মারুফ, কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) 
শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা। গতকাল সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা। গতকাল সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ধানবান্ধি মহল্লা ও হোসেনপুর এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে তিন শতাধিকের বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ায় অনেককে শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকিকুন নাহারও আক্রান্ত রোগী ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও নর্থ বেঙ্গল হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। নর্থ বেঙ্গলে হাসপাতালে কতজন চিকিৎসা নিয়েছে, এটা জানা নেই। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সাপ্লাইয়ের পানি দূষণ থেকে এটা হতে পারে। সিভিল সার্জনও বিষয়টি অবগত আছেন।

গতকাল শুক্রবার সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে জানা গেছে, ১১ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ৬৫ জন এবং মহিলা ওয়ার্ডে ১৮৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। রোগীর চাপ বাড়ায় অনেকে শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের স্টাফ নার্স মাবিয়া খাতুন ও সুমা ঘোষ বলেন, গত তিন-চার দিনে রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। জনবলসংকটের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধানবান্ধি মহল্লা ও হোসেনপুরের বাসিন্দারা এ রোগে আক্রান্ত বেশি।

এদিকে নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. আলমগীর হোসেন জানান, গত ১৫ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১২২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এক দিনেই ভর্তি হয়েছে ১৮ জন। বর্তমানে ভর্তি আছে ৭২ জন।

আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনেরা পৌরসভার সাপ্লাই পানিকেই দায়ী করছে। ধানবান্ধি মহল্লার গৃহবধূ বুলবুলি বেগম (৩২) বলেন, ‘আমরা সাপ্লাই পানি খেয়েই অসুস্থ হতে পারি।’ একই এলাকার এক বৃদ্ধার স্বজন হাফিজ বলেন, ‘হাসপাতালে এসে দেখি বেশির ভাগই ধানবান্ধি মহল্লার মানুষ। আমার মনে হয় সাপ্লাই পানির কারণেই আমার শাশুড়ির ডায়রিয়া হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, এলাকার টিউবওয়েলগুলোর পানিতে আয়রনের মাত্রা বেশি হওয়ায় তারা পৌরসভার পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হন। সাপ্লাইয়ের পানি দূষিত হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোছা. শারমীন খোন্দকার বলেন, প্রাথমিকভাবে সাপ্লাই পানি ও এলাকার দুর্বল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাকেই কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নুরুল আমীন আজকের পত্রিকাকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আক্রান্তদের উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগও অবগত। সাপ্লাইয়ের পানি পান করার জন্য এমনটা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে খুব দ্রুতই ঢাকা থেকে টিম আসবে; তখন পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। রোববার আসতে পারে, তবে আমি এখনো নিশ্চিত না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত