Ajker Patrika

‘এডো কোনো সড়ক হইল?’

আশরাফুল আলম, কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ)
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ১২
‘এডো কোনো সড়ক হইল?’

`এডো কোনো সড়ক হইলো? কোমরের ব্যথায় নড়তে পারি না। আইজকে হাসপাতালে যাইতাছি দাক্তর দেহানের জন্যে। কিন্তু এই গাড়িত উইঠা থ্যাকনাতে বইসাও থাইকপার পারতেছি না। মধ্যে মধ্যে গাড়ি উইল্ট্যা যাইবার ধরে। কষ্টে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সত্তরোর্ধ্ব বয়সী কাঞ্চন বেওয়া। নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে ইজিবাইকে বসে কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধা। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে গেছে। অনেক স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। চলতি বর্ষায় এসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে আছে। আর এই গর্তে যানবাহন পড়ে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। বৃদ্ধা কাঞ্চন বেওয়া যে গাড়িতে যাচ্ছিলেন, সেটিও এই গর্তে পড়ে উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে একই গাড়িতে বসে এই প্রতিবেদক পেশাগত কাজে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা পরিষদের দিকে যাচ্ছিলেন। গাড়িতে ওঠেন উপজেলার শিমুলদাইড় বাজার থেকে। সিরাজগঞ্জ-কাজীপুর-সোনামুখী সড়ক এটি। সেই সড়ক থেকে উপজেলার দিকে যেতেই দেড় শ গজ পূর্বে একটি গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে যাওয়ার উপক্রম হলে কথা হয় ওই বৃদ্ধার সঙ্গে। অনেকটা আক্ষেপ করেই তিনি ওই সব কথা বলছিলেন। 

জানা গেছে, উপজেলার মেঘাই পুরাতন বাজার থেকে সোনামুখী বাজার হয়ে বগুড়ার ধুনট সীমান্তে পাইকপাড়া (ঢগঢগিয়া বাজার) পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। ভারী যানবাহন চলাচলে পিচ ও খোয়া উঠে গিয়ে পুরো সড়কই খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ফলে এই সড়কে প্রতিদিন কোনো  না কোনো  দুর্ঘটনা ঘটছেই। সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় সোনামুখী-সিরাজগঞ্জ বাস সার্ভিসটি চলছে মেঘাই পুরাতন বাজার থেকে। যেটি আগে সোনামুখী বাজার থেকেই চলাচল করত। শুধু তাই নয়, যাত্রী চলাচলের জন্য ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকও মেলে না মাঝে মাঝে। যদিও মেলে, ভাড়া গুনতে হয় দেড় বা কখনো কখনো দ্বিগুণ। এতে করে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতিও কম হচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহেই যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হচ্ছে। দীর্ঘ দুই বছর ধরে এই সড়কের বেহাল অবস্থা। মাস ছয়েক আগে সড়ক ও জনপদ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ গর্তগুলো বালু-খোয়া দিয়ে ভরাট করেছিল। কিন্তু তাতে কী! সপ্তাহ পার না হতেই সব খোয়া উঠে আগের চেয়েও বেশি গর্তে পরিণত হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিমুলদাইড় বাজারের ঠিক পূর্ব পাশে ইত্যাদি হার্ডওয়্যার ও মুনলাইট কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সামনে তিনটি বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে। ফলে যানবাহন চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। গর্তে অতিরিক্ত পানি জমে থাকার কারণে সড়ক দেখা না যাওয়ায় দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। মেঘাই, ছালাভরা বাজার, শিমুলদাইড় বাজারের পশ্চিম পাশে, চালিতাডাঙ্গা, রৌহাবাড়ি চৌরাস্তা, সোনামুখী, পাইকপাড়া (ঢগঢগিয়া বাজার) এলাকায়ও এ রকম বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই জায়গাগুলোতেও বৃষ্টির পানি জমে থাকে সব সময়। আর পুরো সড়কে ছোট ছোট গর্ত তো আছেই।

শিমুলদাইড় বাজার এলাকার ইত্যাদি হার্ডওয়্যারের মালিক কোব্বাত আলী জানান, গর্তে সব সময় পানি জমে থাকে। সপ্তাহে দু-একটি দুর্ঘটনা ঘটছেই এখানে। পাইকপাড়া ঢগঢগিয়া বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, কয়েক দিন আগেই গর্তে পড়ে একটা ভ্যান উল্টে গিয়েছিল।

ইজিবাইক চালক রিয়াদ বলেন, `গর্তের সামনে গিয়ে যাত্রী নামিয়ে দেই। তার পরও গাড়ি উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। প্রতি সপ্তাহেই যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হচ্ছে।' 

রাস্তায় যাত্রী নামিয়ে দেওয়া ইজিবাইকচালক মোস্তফা জানান, গর্তে পড়ে তার গাড়ির চাকায় খোয়া ঠুকেছে। পুরো হাওয়া বের হেয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত এ রকম কোনো  না কোনো  সমস্যা হচ্ছেই গাড়ির। তিনি আরও জানান, সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় এই সড়কে আর ভাড়া বহন করেন না তিনি। মেঘাই থেকে সিমান্তবাজার টিপ মারেন। ওই দিন শ্যামপুর থেকে একটা জরুরি ভারা নিয়ে ধুনটের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগে আক্রান্ত এক রোগীর স্বজন বলেন, `ভ্যানে করে ধুনটের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি রোগীকে। কিন্তু গাড়ির ঝাঁকুনিতে রোগীর আরও করুণ অবস্থা। এমনিতেই পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। তারপর ভাঙা রাস্তায় গাড়ির ঝাঁকুনি। সব মিলিয়ে রোগী পেটের ব্যথায় কান্না করছেন।'

সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবশ্যই সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া  হবে। বৃষ্টি একটু কমলেই খুব দ্রুত এই ভরাটের কাজ শুরু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

এস আলমের জামাতার পেটে ৩৭৪৫ কোটি টাকা

হেফাজতের সমাবেশে জুলাইয়ের নারীদের গালিগালাজের নিন্দা জানাই: রিফাত রশিদ

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নেই ১ শতাংশও

জামায়াতের ‘রোহিঙ্গা রাজ্যের প্রস্তাব’ প্রত্যাখ্যান করল মিয়ানমার সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত