Ajker Patrika

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত

ভারত থেকে গরু আনতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে বাংলাদেশিরা

  • ২৫ কিমি নদী সীমান্তে হতাহত ও নিখোঁজের ঘটনা বেড়েছে।
  • মাদকের চালান আনতে দেওয়া হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা।
আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৩০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সীমান্তঘেঁষা জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে নদীপথে সাঁতরে অবৈধভাবে গরু-মহিষ ও মাদকদ্রব্য আনতে গিয়ে রাখাল হতাহত ও নিখোঁজের ঘটনা যেন এখন নিত্যকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, অর্থের লোভে চোরাকারবারিদের হয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে বাংলাদেশি রাখালদের।

স্থানীয়রা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী সীমান্তে বাংলাদেশি রাখালদের হতাহত ও নিখোঁজের ঘটনা বেড়েছে। এলাকাবাসীর মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার তীরবর্তী দুর্গম চরাঞ্চলের এই ২৫ কিলোমিটার সীমান্ত ভয়ংকর এক সীমান্ত। মূলত ভাড়ায় গরু-মহিষ ও মাদক আনতে জীবনবাজি রেখে বাংলাদেশি কিশোর-যুবকেরা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাচ্ছেন। এদের কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে বা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব রাখালের লাশ গোপনে কবর দেওয়া হয়। সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি ও থানা-পুলিশ কিছুই জানতে পারে না।

সীমান্তের লোকজনের দাবি, গত ২০ জুলাই রাতে উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জোহুরপুর সীমান্তে নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকার মোহাম্মদ লালচানকে (২৭) বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নিযার্তনে হত্যা করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় চোরাকারবারিরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে মরদেহ এনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন সম্পন্ন করে। গত ২ আগস্ট শিবগঞ্জ উপজেলার তারাপুর হঠাৎপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও সেলিম রেজা (৩৬) নামের দুজনের মরদেহ পদ্মা নদী থেকে ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নৌ পুলিশকে হস্তান্তর করে। নৌ পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদনে মরদেহের শরীরে ধারালো জখম ও দাহ্য পদার্থ দিয়ে ঝলসানোর চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।

সীমান্তের বাসিন্দাদের ভাষ্য, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে দেশের সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার চরাঞ্চলের পাঁচটি বিওপির (ওহেদপুর, জোহুরপুর, রঘুনাথপুর, মনোহরপুর ও ফতেপুর) এই সীমান্তে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বাখের আলী, সুন্দরপুর, জোহুরপুর, জোহুরপুর টেক, নারায়ণপুর, শিবগঞ্জ উপজেলার বিশরশিয়া, দশরশিয়া, গাইপাড়া, খাঁকচাপাড়া, মনোহরপুর, রঘুনাথপুর, ফতেপুর, নিশিপাড়া, ঠুটাপাড়া, দোভাগী ফিল্টেরবাজার, নামোজগনাথপুর সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে গরু ও মাদক পাচার সিন্ডিকেট। গরু ও মাদক আনতে তারা যুবক-তরুণদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকায় মৌখিক চুক্তি করছে। এক জোড়া গরু পদ্মায় ভাসিয়ে আনতে পারলে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। আর মাদকের চালান আনতে পারলে দেওয়া হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

একটি সূত্র জানায়, ভাসিয়ে আনা গরু-মহিষ তত্তিপুর, রামচন্দ্রপুর, কালিনগরসহ বিভিন্ন হাটে দুই, আড়াই ও সাড়ে ৩ লাখ টাকায় জোড়া বিক্রি করা হয়।

এসব ঘটনায় জড়িত হিসেবে দশরশিয়া গ্রামের মংলু হাজীর ছেলে মো. সেলিম, শ্যামপুর গ্রামের তামজুল হকের ছেলে মাসদু রানা ও বমপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম, সাতরশিয়া গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে সাদিকুল ইসলাম সাদেক, বাগপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জালালের ছেলে মো. ইকবাল, দেবীপুর এগারো রশিয়া গ্রামের মৃত হুমায়ুন কবিরের ছেলে মো. জাফরুল, সাতরশিয়া গ্রামের রফিক আলীর ছেলে মো. মামুন, আবুল কালাম আজাদ আবু, কামরুজ্জামান জামি, কামরুলসহ কয়েকজনের নাম জানা গেছে।

তারাপুর হঠাৎপাড়া সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা নুরুজ্জামান বলেন, সীমান্তে আগে গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যা করা হতো। এখন বৈদ্যুতিক শক, কুপিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যার ঘটনা ঘটছে।

সম্প্রতি নদী থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি মরদেহের ব্যাপারে গোদাগাড়ী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা নদী থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন করে লাশের মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব মরদেহের শরীরে ধারালো অস্ত্র, ঝলসানো, জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এসব ব্যক্তিকে হত্যা করে পদ্মায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা নিশ্চিত। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে আরও দেড় থেকে দুই মাস ময়নাতদন্তের (পিএম) প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ রিংকু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মারফত জানতে পারছি টাকার লোভে গরু আনতে গিয়ে ভারতে বিএসএফের হাতে তারা হত্যার শিকার হচ্ছে। আগে তারা গুলি করে হত্যা করত। এখন বিভিন্নভাবে নিযার্তন করে হত্যা করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত