Ajker Patrika

মামলার পরও বিতর্কিত তালিকায় টিসিবির পণ্য বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
যথাযথ তত্ত্বের ভিত্তিতেও দেশের মূল্যস্ফীতিকে বাগ মানানো যাচ্ছে না। ছবি: আজকের পত্রিকা
যথাযথ তত্ত্বের ভিত্তিতেও দেশের মূল্যস্ফীতিকে বাগ মানানো যাচ্ছে না। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দরিদ্রদের বাদ দিয়ে সচ্ছল ব্যক্তিদের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। তারপরও বিতর্কিত তালিকা অনুযায়ী টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। তবে টিসিবি বলছে, মালপত্র বিতরণ বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীর এই ওয়ার্ডে টিসিবির কার্ড রয়েছে ২ হাজার ৫৩০ টি। গত বছর আওয়ামী সরকারের পতনের পর জামায়াত ও বিএনপির কিছু নেতা তালিকা সংশোধনের দাবি তোলেন। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটি সম্প্রতি নতুনভাবে টিসিবির কার্ড দিতে শুরু করে। তবে এতে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। অনেক দুস্থ, প্রতিবন্ধী ও দিনমজুর কার্ডবঞ্চিত হন। অপর দিকে কার্ড পান সচ্ছল চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা।

এই তালিকা বাতিলের জন্য ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন আইনি লড়াই শুরু করেন। ৯ সেপ্টেম্বর তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার সচিব, টিসিবির চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, রাসিকের প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও গবেষণা কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এতে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিতর্কিত তালিকা বাতিলের জন্য বলা হয়। তা না হলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবি কার্ডের সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সভায় ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি যেসব ব্যক্তির নাম টিসিবি কার্ডের জন্য সুপারিশ করে তালিকা প্রস্তুত করেছে, তা প্রকাশের পর স্থানীয় জনগণ দেখতে পায়, অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা গরিব বা সুবিধাবঞ্চিত নন; বরং তাঁরা আর্থিকভাবে সচ্ছল।

এ বিষয়ে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখ করে লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা দুর্বল শ্রেণির নন, বরং তাঁরা আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। টিসিবি কার্ডের সুবিধা মূলত সমাজের গরিব মানুষকে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করার জন্য প্রবর্তিত। অথচ নোটিশপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এলাকায় আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যা টিসিবি কার্ডের নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আইনজীবী মাহফুজুর রহমান বলেন, ওই লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার পরও তালিকা বাতিল করা হয়নি। তাই হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে। আদালত বন্ধ থাকায় এখনো শুনানি হয়নি।

এদিকে এ বিষয়ে মামলা হলেও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবির মালপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এলাকায় নতুন কার্ডধারীদের পণ্য বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ডের টিসিবির পরিবেশক হযরত আলী জীবন। তিনি বলেন, ‘আমি টাকা জমা দিয়ে মাল তুলে এনেছি। এখন এগুলো বিতরণ করা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বিতরণ করছি। তবে এগুলোর পর আর মালপত্র বিতরণ না করার জন্য আমাকে বলে দেওয়া হয়েছে।’

টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিসপ্রধান আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘লিগ্যাল নোটিশ টিসিবির চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছিল। আমরা একটু দেরি করে পেয়েছি। এই অবস্থায় মালপত্র বিতরণ না করার জন্য সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে জানিয়েছি। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মালপত্র বিতরণ স্থগিত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত