Ajker Patrika

‘ভাইয়ের লাশটাও পাইনি, র‍্যাবকে ক্ষমা করি কীভাবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ইসমাইল হোসেন। ছবি; সংগৃহীত
ইসমাইল হোসেন। ছবি; সংগৃহীত

গুম-খুনসহ র‍্যাবের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বাহিনীর প্রধান এ কে এম শহিদুর রহমান। তবে এতে আক্ষেপ কমেনি গুমের শিকার রাজশাহীর ইসমাইল হোসেনের পরিবারের। তার ছোট ভাই ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমার ভাইটার লাশটাও খুঁজে পাইনি। র‍্যাবকে ক্ষমা করি কীভাবে?’

আজ বৃহস্পতিবার নগরীর ভদ্রার নিজ কার্যালয়ে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন তিনি। ইউসুফ আলীর বলেন, ‘র‍্যাবের মহাপরিচালক স্বীকার করে নিয়েছেন যে আয়না ঘর আছে। অপরাধী যখন অপরাধ স্বীকার করে নেয়, তখন শাস্তি দেওয়া সহজ হয়ে যায়। আমরা এই শাস্তিটাই এখন দেখতে চাই। তা না হলে আমার ভাইকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে।’

গুমের শিকার ইসমাইল হোসেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি আলীপুর মহল্লার বাসিন্দা। মহিষালবাড়িতে তার জুয়েলারি দোকান ছিল। বাড়ি থেকে দোকানে যাওয়ার জন্য ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন ইসমাইল। রাত ৯টার দিকে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে পৌঁছালে র‍্যাব সদস্যরা তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। ওই সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৮ আগস্ট তার স্ত্রী নাইস খাতুন রাজশাহীর আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় র‍্যাব-৫ এর তৎকালীন রাজশাহী রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার শাহিনুর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) দেবব্রত মজুমদার, দুলাল মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন, ল্যান্স নায়েক মাহিনুর খাতুন, সেপাই কহিনুর বেগম ও কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে আসামি করা হয়।

গুমের শিকার ইসমাইলের ভাই ইউসুফ আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
গুমের শিকার ইসমাইলের ভাই ইউসুফ আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইউসুফ আলী বলেন, ‘র‍্যাবের মহাপরিচালক স্বীকারই করে নিয়েছেন যে, বাহিনীর সদস্যরা গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমন অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। আমরা চাই, যে সাতজনের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি, তাদেরও সামনে আনা হোক। তাদের বিরুদ্ধেও র‍্যাবের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে মামলা করেছি, সেটা সিআইডি তদন্ত করছে। তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তদন্তকাজ চলছে। র‍্যাব প্রধানের বক্তব্যের পর আমি তো মনে করি, এখন তদন্ত প্রক্রিয়া আরও সহজ হলো। বিচার পাওয়াটাও সহজ হলো।’

ইসমাইল গুমের ঘটনায় গুম কমিশনেও অভিযোগ করা হয়েছে। কমিশনের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন ইউসুফ আলী বলেন, ‘গুম কমিশন খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকিছুই তদন্ত করছে। যার ফলে র‍্যাবের মহাপরিচালক বাহিনীর অপরাধ স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন।’

‘মহাপরিচালক বলেছেন, আয়না ঘর যে অবস্থায় ছিল–সেভাবেই আছে। আমরা জানি না, সেখানে এখনো কেউ আছেন কি না। যদি আমার ভাই এখনো সেখানে থাকে, তাহলে আমাদের ফেরত দেওয়া হোক। তা না হলে আমার ভাইয়ের কী পরিণতি হয়েছিল তা আমাদের জানানো হোক। তারপর আমরা র‍্যাবকে ক্ষমা করার ব্যাপারে চিন্তা করব। তার আগে তো এটা নিয়ে ভাবা যায় না’ বলে যোগ করেন ইউসুফ আলী।

তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, গুম থাকা অবস্থায় ইসমাইল হোসেন তিন দিন পর অন্য এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তখন ইসমাইল জানান, তিনি র‍্যাবের হেফাজতে আছেন। তাঁর এই শেষ কথার রেকর্ড এখনো সংরক্ষিত আছে ইউসুফ আলীর কাছে। আওয়ামী সরকারের পতনের পর গুম হওয়া কেউ কেউ ফিরে এলে আশায় বুক বাঁধেন ইসমাইলের স্বজনেরা।

ইউসুফ ঢাকায় গিয়ে কথিত আয়না ঘরের সামনে গিয়েও দাঁড়িয়ে থাকেন। কয়েক দিন দাঁড়িয়ে থাকার পর ইউসুফ ফিরেছেন একা। ভাইকে পাননি। মামলার এজাহারে নাইস খাতুন বলেছেন-তাঁর আশঙ্কা, ইসমাইলকে তুলে নেওয়ার পর হত্যা করে লাশটিও গুম করে দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত