Ajker Patrika

‘এমন খুশির ঈদ আমরা কখনো পাইনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘এমন খুশির ঈদ আমরা কখনো পাইনি’

ঈদের আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত সিরাজগঞ্জের খোকশাবাড়ির আজিজা সুলতানা স্মৃতি। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা নেই। আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ঈদের উপহার হিসেবে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) দেওয়া একটি ঘর পেয়েছি। ঈদে ঘর পেয়ে আমরা খুবই খুশি—এমন খুশির ঈদ আমরা কখনো পাইনি।’ 

আসন্ন ঈদের আগে তৃতীয় ধাপে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়েছেন আরও ৩২ হাজার ৯০৪ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। চাবি হস্তান্তর শেষে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসব উপকারভোগীদের একজন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খোকশাবাড়ী গ্রামের মেয়ে আজিজা সুলতানা স্মৃতি। 

কাঁদতে কাঁদতে আজিজা বলেন, ‘আমার আগে পড়াশোনার করার মতো কোনো স্থায়ী জায়গা ছিল না। এখন একটা স্থায়ী জায়গা হয়েছে। আমি এখন আগের চেয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারব।’ 

আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়া বাচ্চাদের পড়াশোনা করানোর কথা জানিয়ে আজিজা সুলতানা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি দোয়া করবেন, আমি যেন এই আশ্রয়ণের ছোট ছোট বাচ্চাদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও উৎসাহিত করতে পারি।’ 

প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে আজিজা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমরা সবাই আপনার জন্য দোয়া করি। আপনি যেন বারবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমরা যেন সুনাগরিক হয়ে আপনার দেখানো পথে চলতে পারি, দেশের হয়ে কাজ করতে পারি।’ 

প্রধানমন্ত্রীকে সিরাজগঞ্জে যাওয়ার দাওয়াত দেন আজিজা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিরাজগঞ্জের পক্ষ থেকে আপনার দাওয়াত থাকল। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে সামনে দেখার খুবই ইচ্ছে আমাদের। আপনি সময় পেলে অবশ্যই আমাদের মাঝে আসবেন। আমরা আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’ 

আজিজার প্রতি ভালোবাসা ও দোয়া জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব খুশি হলাম তোমার কথা শুনে। তুমি ভালো করে মন দিয়ে পড়াশোনা কর। তোমরা আমাদের নতুন প্রজন্ম। লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে এবং এ দেশকে সব সময় এগিয়ে নিয়ে যাবে। সবাইকে আমার দোয়া এবং ভালোবাসা জানাচ্ছি।’ 

সিরাজগঞ্জ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের পোড়াদিয়া বালিয়া, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাঁওয়ের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। 

তৃতীয় ধাপে এসব ঘর প্রদানের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি পরিবার। তৃতীয় ধাপের আরও ৩২ হাজার ৭৭০টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। 

আশ্রয়ণের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে তৃতীয় ধাপের ঘরগুলো অনেক বেশি টেকসই। তৃতীয় ধাপে একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। তৃতীয় ধাপের ঘরগুলোতে আরসিসি পিলার, গ্রেড ভিম, টানা লিংকটারসহ বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়। 

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫ লাখ ৭ হাজার ২৪৪ ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের মধ্যে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, বেদে সম্প্রদায়সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া ভাসমান বিভিন্ন জনগোষ্ঠীও রয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত