Ajker Patrika

পারিবারিক বিরোধে খুন: রাজনৈতিক মামলা দাবি করে প্রত্যাহারে বিএনপি নেতার জোর সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
বাদীপক্ষের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাদীপক্ষের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর চারঘাটে ২০০৯ সালে পারিবারিক বিরোধে একটি খুনের ঘটনায় করা মামলা রাজনৈতিক হিসেবে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন আসামিরা। আর এতে জোর সুপারিশ করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। তিনি মোটা টাকার বিনিময়ে এই সুপারিশ করেছেন বলে অভিযোগ মামলার বাদীপক্ষের। এ নিয়ে সোমবার দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে তারা সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেখানে তারা আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে।

মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর চারঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জু আহমেদ মোটরসাইকেল নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে প্রতিপক্ষরা তাঁর গতি রোধ করে মারধর শুরু করেন। এ সময় তিনি চিৎকার শুরু করলে তাঁর বাবা শামসুল ইসলাম, ভাই মনিরুল ইসলাম ও মো. মন্টু তাঁকে বাঁচাতে যান। এ সময় সবাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার সময় মন্টু মারা যান।

এ ঘটনায় সেদিন রঞ্জু আহমেদ বাদী হয়ে চারঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন রায়পুর গ্রামের এমদাদুল হক ওরফে আবু তালেব, জুমারত আলী, ওহাব, নজরুল, বজলু, ইসলাম, খালেক, কালাম, ইনছার, রফিকুল, শাজাহান, আনারুল, এনামুল, সাজদার রহমান, হোসেন, আবু তাহের, হাবিবুর রহমান, কালাম, রবিউল, রেজাউল, জিনারুল ও সাদরুল। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। মামলাটি এখন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩-এ বিচারাধীন। ইতিমধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। যুক্তিতর্কের জন্য ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে।

এর মধ্যেই গত ৩০ জুন মামলাটি রাজনৈতিক উল্লেখ করে প্রত্যাহারের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন আসামি আসামি ইমদাদুল হক ওরফে আবু তালেব, মো. রবিউল, আবু তাহের, রেজাউল হক, বজলু, মো. ওহাব, নজরুল ইসলাম ও আবদুল খালেক। আসামিদের প্রত্যেকের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু সাঈদ চাঁদ লিখেছেন, ‘জোর সুপারিশ করছি।’ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মতামত চেয়ে আবেদনগুলো গত ২৯ জুলাই জেলা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে বাদীপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরেছে।

আসামিদের আবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী রাজনৈতিক শত্রুতাবশত আসামি করেছে। তবে মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ নিজেও বিএনপির কর্মী। তাঁর পুরো পরিবারই বিএনপির সমর্থক। এ ব্যাপারে ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন বিএনপি তাদের একটি প্রত্যয়নপত্রও দিয়েছে। তা ছাড়া বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ২০০৯ সাল থেকেই হত্যা মামলাটি পরিচালনা করে এসেছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা। অথচ জেলার আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ এ মামলার ৮ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তাঁদের আবেদনে সুপারিশ করেছেন।

বিষয়টি জানতে পেরে মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের কাছে লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখায়ও লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর আবেদনে সুপারিশ করেছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা। আর আবু সাঈদ চাঁদ যে মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে সুপারিশ করেছেন, সে বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রঞ্জু।

যোগাযোগ করা হলে মামলার প্রধান আসামি ইমদাদুল হক ওরফে আবু তালেব বলেন, ‘আমরা বিএনপি করি। তাই মামলায় আসামি করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদও সে সময় বাদী রঞ্জুকে আপস করার কথা বলেছিল। কিন্তু সে পাত্তাই দেয়নি। এখন চাঁদ চেয়ারম্যান (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ) সুপারিশ করেছেন।’

পারিবারিক বিরোধের খুনের মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নাই, আমার কোনো মন্তব্য নাই। এটা পারিবারিক বিরোধে খুন নাকি রাজনৈতিক খুন, সেটা এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনার বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত নয়াদিল্লি: ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব

আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বিএনপি একাই সরকার গঠন করবে: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে তারেক রহমান

বুলবুলই আবার বিসিবি সভাপতি, সহসভাপতি পদে চমক

এবার মাউশি মহাপরিচালক খুঁজতে বিজ্ঞপ্তি দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বিরল খনিজের প্রথম চালান যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাল পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত