Ajker Patrika

নিখোঁজ কিশোরের সন্ধান মিলেছে, ভুল অভিযোগে কারাগারে যুবক

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
নিখোঁজের পর সন্ধান পাওয়া কিশোর ও গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
নিখোঁজের পর সন্ধান পাওয়া কিশোর ও গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহিত বাবু (১৩) নামের এক কিশোর নিখোঁজ হয়েছিল। এ ঘটনায় তার বাবা মামুন অর রশিদ অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে ছেলেকে নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা করেন। অভিযোগের পরদিনই সিয়াম হোসেন (২৩) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা-পুলিশ। তবে শুক্রবার ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে ট্রেনযাত্রীদের কাছে নিজের চিকিৎসার জন্য টাকা তুলতে থাকা অবস্থায় মোহিতকে উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার পর সিয়ামের পরিবার দাবি করেছে, ভুক্তভোগী পরিবারের ভুলের কারণে তাঁদের ছেলে জেলে গেছে। তাঁরা ছেলের মুক্তির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণস্বরূপ বাদীর বিচারের দাবি তুলেছেন।

জানা গেছে, দেড় বছর আগে লিচুগাছ থেকে পড়ে বাঁ পা ভেঙে যায় মোহিত বাবুর। তার বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের দিলালপুর সর্দারপাড়ায়। বাবা মামুন অর রশিদ পেশায় অটোরিকশাচালক। মোহিত পড়াশোনা করে একই জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার ভীমপুর শাইলবাড়ী কওমি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে। পা ভাঙার কারণে হাঁটতে আর্ম ক্রাচ ব্যবহার করে সে।

১১ আগস্ট মাদ্রাসায় না যাওয়ায় পরিবারের লোকজন শাসন করলে সন্ধ্যায় সে কৌশলে পালিয়ে সৈয়দপুরে আসে। শহরের সেনানিবাসে আয়োজিত ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মেলার মঞ্চে রাত কাটায়। পরদিন যায় সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। সেখানে পরিচয় হয় সিয়াম হোসেনের সঙ্গে। সিয়ামের বাড়ি উপজেলার খোর্দ্দ বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের হাজিপাড়ায়।

উদ্ধার হওয়া মোহিত জানায়, কাজের সন্ধানে সিয়াম ও আরও এক অপরিচিত কিশোরকে নিয়ে সে নীলসাগর এক্সপ্রেসে ওঠে ঢাকার উদ্দেশে। ট্রেনে ক্রাচ ভর দিয়ে যাত্রীদের কাছে চিকিৎসার জন্য টাকা তোলে। সেসব টাকা দিয়ে তিনজন রাতের খাবার খায়। তবে ঢাকায় পৌঁছানোর পর দুই সঙ্গীকে হারিয়ে ফেলে মোহিত। এরপর ২২ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহী, পঞ্চগড় ও খুলনাগামী বিভিন্ন ট্রেনে উঠে একই কায়দায় টাকা তুলে দিন কাটায়।

এদিকে ছেলের খোঁজে মামুন অর রশিদ সৈয়দপুরে আসেন। এক অটোরিকশাচালকের কাছ থেকে জানতে পারেন, স্টেশনে তাঁর ছেলেকে দেখা গেছে। পরে স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ১৭ আগস্ট সিয়ামের নাম উল্লেখ করে তিনি সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় অপহরণের মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাহবুবুর রহমান সেদিনই সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।

এসআই মাহবুবুর রহমান জানান, সিয়াম জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে। তবে ঢাকায় যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। সে বলেছে, সৈয়দপুর স্টেশনেই মোহিত ও আরেক কিশোরের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাদীর এজাহারে সিয়ামের নাম থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারে তৎপর হই এবং ২২ আগস্ট ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মোহিতকে উদ্ধার করি।’

এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন-নবী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি আসলে অপহরণের ঘটনা নয়। পরিবারটি নিজেদের দুর্বলতা আড়াল করতে এভাবে মামলা করেছে। ছেলের প্রতি মা-বাবার যথাযথ নজরদারি ছিল না। সে সঙ্গদোষে বখে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত