Ajker Patrika

চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেহাবি) গাড়িচালক পদে চাকরি দেওয়ার নামে ৫ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন যুবক। 

অভিযুক্ত এস এম সাজ্জাদুল হক সবুজ (৫৫) বারহাট্টা উপজেলার আশিয়ল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অভিযোগকারী আল আমিন (২৬) একই উপজেলার বিক্রমশ্রী গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সাজ্জাদুল ও আল আমিন পূর্ব পরিচিত। সাজ্জাদুলের কথামতো গাড়িচালক পদে আবেদন করেন আল আমিন। পরে চাকরি পাইয়ে দিতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুষ বাবদ ৫ লাখ টাকা নেন তিনি। কিন্তু চাকরি না হওয়ায় শর্ত অনুযায়ী টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও দেননি। শেষে বাধ্য হয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর থানায় অভিযোগ দেন আল আমিন। 

আল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাজ্জাদুল হককে এলাকার অনেকের সামনে দিয়েছি টাকা। চাকরি না হলে টাকা ফেরত দেবেন বলেছিলেন। এখন চাকরিও হয়নি, টাকাও দিচ্ছেন না। থানায় অভিযোগ দেওয়ায় উল্টো আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন।’ 

সাজ্জাদুল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। টাকার বিষয়ে অভিযোগ দিলে তো প্রমাণপত্র জমা দেবে। দেখেন কী কী জমা দিয়েছে। আর অভিযোগকারী আল আমিন আমার ওপর হামলা চালিয়ে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়েছে।’ 

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এনামুল হক আরাফাত বলেন, ‘সাজ্জাদুল হক সবুজ নামের ওই শিক্ষককে আমরা চিনি না। শেহাবির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। শেহাবিতে নিয়োগসহ সবকিছু স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যদি শেহাবিতে চাকরির কথা বলে টাকা বলে নিয়ে থাকে, তাহলে এটা একটা বড় ধরনের প্রতারণা। এরা নিজেরা প্রতারণা করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করছে। ঘটনা তদন্ত করে সত্যতা পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’  

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর এমনি একটি চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। পরে আমি নিজে ওই চক্রকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছি।’ 

এ বিষয়ে বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। শিক্ষক সাজ্জাদুল হককে অভিযোগের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় আসেননি। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনের ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীর সভায় ভোট চান শিক্ষক সাজ্জাদুল হক। এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদ পারভেজ। পরে এ ঘটনায় তাঁকে শোকজ করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছ শিকারিদের ঢল

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
পলো আর জাল দিয়ে মাছ ধরছেন শত শত মানুষ। গতকাল ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বলদা বিলে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পলো আর জাল দিয়ে মাছ ধরছেন শত শত মানুষ। গতকাল ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বলদা বিলে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে যেন প্রাণ ফিরে পেল ময়মনসিংহের নান্দাইল। হাজারো মানুষ পলো, জাল আর মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয় সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বলদা বিলের ধারে। তারা দিনব্যাপী হইহুল্লোড়ের মাধ্যমে মাছ শিকার করে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শত বছর ধরে চলছে বলদা বিলের এই ‘হাইত উৎসব’।

প্রতিবছর আশ্বিনের শেষে বা কার্তিক মাসের মধ্যে যখন বলদা বিলের খালবিল ও জলাশয়গুলোর পানি কমে হাঁটু বা কোমরসমান হয়, তখনই এলাকার মানুষ পূর্বনির্ধারিত দিনে এই হাইত উৎসবের আয়োজন করে থাকে। উৎসবের দিনক্ষণ এক সপ্তাহ আগে থেকে এলাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।

আয়োজনের খবর পেয়ে মাছ শিকারিরা গত বুধবার রাতেই বলদা বিলের আশপাশের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নেয়। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর থেকে হাজার হাজার শৌখিন মাছ শিকারি তাদের পলো, ঠেলা জাল, খড়াজাল, ডুবা ফাঁদ, চাঁইসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে মাছ ধরার এই আনন্দ আয়োজনে অংশ নেয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাছশিকারিরা হইহুল্লোড় করতে করতে বিলে নেমে পড়েছে। বিলের দুই পাশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নারী-পুরুষের ভিড়। আশপাশের উপজেলা, যেমন ঈশ্বরগঞ্জ, তাড়াইল, হোসেনপুর, কেন্দুয়া থেকেও মাছশিকারিরা এতে অংশ নেয়। তবে এ বছর আগেই নিষিদ্ধ কারেন্ট ও নেট জাল দিয়ে মাছ নিধন করায় মাছশিকারিরা বেশি মাছ শিকার করতে পারেনি।

এ নিয়ে মাছশিকারিদের মধ্যে কিছুটা আক্ষেপ দেখা গেছে। পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রাকিবুল হাসান শুভ বলেন, ‘হাইত উৎসবে মাছ শিকার করতে এসে তেমন মাছ পাইনি। তবে সবার সঙ্গে বিলে এসে মাছ ধরার আনন্দ উপভোগ করেছি।’

মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘আগের মতো হাইত উৎসবের সেই জৌলুশ নেই। বর্তমানে কিছু কিছু অঞ্চলে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে মুরব্বিরা এই আয়োজন করেন। কিন্তু অংশগ্রহণকারীরা তেমন মাছ শিকার করতে পারেননি।’

স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ১০০ বছর ধরে আমাদের বাপ-দাদারা বলদা বিলে অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে হাইত উৎসবের আয়োজন করে আসছেন। তবে এ বছর নিষিদ্ধ কারেন্ট ও নেট জাল দিয়ে মাছ নিধন করায় মাছশিকারিরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ শিকার করতে পারেননি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

  • কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে যাওয়া-আসায় সময় লাগে প্রায় ১৪ ঘণ্টা।
  • রাতযাপন করতে না পারলে দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে যাওয়ার আগ্রহ থাকবে না পর্যটকদের
  • ২টি নির্দেশনা আরোপ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পর্যটকদের জন্য আগামীকাল শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে উন্মুক্ত হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য পছন্দের এ দ্বীপ ৯ মাস পর উন্মুক্ত হলেও পুরো নভেম্বর মাস দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে হবে পর্যটকদের। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার করে পর্যটক রাতে থাকার সুযোগ পাবেন।

এদিকে নভেম্বরে সেন্ট মার্টিনে রাতে অবস্থানের সুযোগ না থাকায় পর্যটক খরার আশঙ্কায় কাল থেকে জাহাজ চালানো শুরু না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্ট মার্টিনে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। সরকার দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় গত বছর থেকে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের আলোকে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস দ্বীপে পর্যটকেরা ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন।

জাহাজমালিক ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে ২০২৩ সাল থেকে টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরপর মেরিন ড্রাইভ সড়কের ইনানীর নৌবাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে জাহাজ চলাচল করেছিল।

গত বছর থেকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাট থেকে সাগরপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে আসছিল।

চলতি বছরও এই ঘাট দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই রুটে যাওয়া-আসায় প্রায় ১৪ ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে রাতযাপন করতে না পারলে পর্যটকদের দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে আগ্রহ থাকবে না। এ কারণে জাহাজমালিকেরা নভেম্বর মাসে জাহাজ চালাতে রাজি নয়।

জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ১ নভেম্বর থেকে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পর্যটক বা যাত্রী না থাকায় জাহাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরের মতো ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে জাহাজ চালানোর প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর দুই মাসে ১ লাখের বেশি পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন।

সেন্ট মার্টিন হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি শিবলুল আযম কোরেশী বলেন, দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু দ্বীপে পর্যটন খাতের বিনিয়োগ ও স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে ফেলে পরিবেশ রক্ষা ও ভালো পর্যটন আশা করা যায় না।

দীর্ঘদিন পর্যটকশূন্য সেন্ট মার্টিনে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নবিত্ত ৫০০ পরিবারকে সরকার ১১ হাজার ৪০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন। তিনি বলেন, দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকার এর মধ্যে আরও বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

দ্বীপের মানুষের সংকট দূর করতে সরকারের নানা উদ্যোগ দৃশ্যমান বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিনে বনায়ন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পানীয় জলের সংকট নিরসন, বেওয়ারিশ কুকুরের প্রজনন ঠেকাতে বন্ধ্যাকরণ প্রকল্প, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন, নতুন জেটি নির্মাণসহ শতকোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে।

মানতে হবে ১২ নির্দেশনা

নভেম্বর থেকে জানুয়ারি (তিন মাস) সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১২টি নির্দেশনা আরোপ করেছে। এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করা যাবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে।

পর্যটকদের ভ্রমণের সময় রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা যাবে না। একই সঙ্গে সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।

নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, পর্যটকেরা ভ্রমণকালে নিষিদ্ধ পলিথিন এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বহন করতে পারবে না। ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২ নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে কাজ করবে জেলা প্রশাসন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জে এইচআইভি: ৩ বছরে আক্রান্ত বেড়ে তিন গুণ

  • এ বছর জেলায় ২৫৫ জনের এইচআইভি শনাক্ত, ৭৩ শতাংশই ইনজেকশন ব্যবহারকারী মাদকসেবী
  • ২০২০ সালে মাত্র ৪, ২০২১ সালে ৮ ও ২০২২ সালে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ জনে
আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিরাজগঞ্জে নীরবে বাড়ছে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা। ইনজেকশন দিয়ে মাদক গ্রহণ এখন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। চলতি বছর জেলায় ২৫৫ জনের শরীরে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশই ইনজেকশন ব্যবহারকারী মাদকসেবী বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আকিকুন নাহার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একই সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক সেবনের কারণেই রক্তের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। শনাক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই মাদকসেবী। আমরা আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং সেবা দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ইনজেকশন ব্যবহার করে মাদক সেবন বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে।

জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরাজগঞ্জে এইচআইভি পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম বছর শনাক্ত হয় মাত্র ৪, ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ৮, আর ২০২২ সালে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ জনে। এরপর কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে ২৫৫-এ পৌঁছেছে।

শনাক্তদের মধ্যে ১৮৭ জন ইনজেকশন ব্যবহারকারী মাদকসেবী, ৩৫ জন সাধারণ ব্যক্তি, ২৯ জন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও ৪ জন যৌনকর্মী। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২৬ জন। বাকিরা নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ সেবা নিচ্ছে।

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং সেন্টারের কাউন্সেলর মাসুদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পজিটিভ শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের নিয়মিত সেন্টারে এসে কাউন্সেলিং ও রি-টেস্ট করতে বলা হয়, যাতে তাঁরা মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর উপজেলাতেই সংখ্যা বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষ, বিশেষ করে ২০-৩৫ বছর বয়সী তরুণেরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। একই সিরিঞ্জে মাদক সেবন ও সমকামিতার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় তরুণদের মধ্যে সংক্রমণও বাড়ছে।’

মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘এইচআইভি আক্রান্ত হলে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ওষুধ সেবন করলে কাজ হয় না, ওজন দ্রুত কমে যায়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে অনেক সময় সন্তান প্রসব বা অস্ত্রোপচারের সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়। আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে।’

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অবৈধ ইনজেকশনজাত মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তরুণদের মধ্যে মাদক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে। অনেক তরুণ প্রথমে বন্ধুদের সঙ্গে শখ করে নেশা শুরু করে, পরে আসক্তি থেকে আর বের হতে পারে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অন্ধকারে চীন মৈত্রী সেতু, চলাচলে ঝুঁকি

  • ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়
  • সৌরবাতি নষ্ট হয়ে যায় এক বছরের মাথায়; পরে বৈদ্যুতিক বাতিও নষ্ট হয়
মাদারীপুর প্রতিনিধি
অন্ধকারে চীন মৈত্রী সেতু, চলাচলে ঝুঁকি

মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়কের আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নির্মিত সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর সড়কবাতি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এ পথ দিয়ে চলাচলকারী পথচারী ও যানবাহন চালকদের। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সব বাতি অকেজো থাকায় সন্ধ্যা হলেই অন্ধকারের মধ্যে সেতুর ওপর, এমনকি নিচেও মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। ফলে পথচারীরা অনেক সময় ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ উদ্যোগে মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেরচর এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নির্মাণ করা হয় সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। ৬৯৪ মিটার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২৯৪ কোটি টাকা। সেতুটি নির্মাণ শেষে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে উদ্বোধন করা হয়। চলাচলের সুবিধার জন্য সেতুটির ওপরে শতাধিক খুঁটি বসিয়ে সৌরবাতি লাগানো হয়। এক বছরের মাথায় বাতিগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়। এরপর সৌরবাতি বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগের মাধ্যমে বাতিগুলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়। এর কয়েক মাস যেতেই আবার বাতিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এরপর বছরের পর বছর সেতুর বাতিগুলো অকেজো হয়েই পড়ে রয়েছে। এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে এক বছর ধরে সড়ক বিভাগই সেতুটির টোল আদায় করছে। এই সড়ক দিয়ে ঢাকা, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার জন্য কয়েক হাজার চলাচলকারী যানবাহন থেকে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করার পরও সেতুটির বাতি নেই।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার থাকায় এ গুরুত্বপূর্ণ সেতুর ওপর প্রায় দুর্ঘটনাসহ চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া সেতুর ওপরে ও নিচে নেশার আড্ডাও বসে।

অটোরিকশাচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাতি না থাকার কারণে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ভয়ে এখন আর আগের মতো কেউ এখানে আসে না।

মাইক্রোবাসচালক ফেরদৌস ব্যাপারী বলেন, ‘সেতুতে সড়কবাতি না থাকায় অনেক সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। তাই এই সেতুতে সড়কবাতি জরুরি’

পথচারী জালালউদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়ি সেতুর কাছেই। সন্ধ্যার পর এখান দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে। কারণ এখানে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান বলেন, ‘ঠিকাদার নিয়োগ না থাকায় বাতিগুলো অকেজো হয়ে আছে। তাড়াতাড়ি ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। তখন বাতিগুলো ঠিক করা হবে। আশা করছি দ্রুতই এর সমাধান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত