Ajker Patrika

স্কুলের পাশে ইটভাটা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
স্কুলের পাশে ইটভাটা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় ক্রমেই বেড়ে চলেছে ইটভাটার সংখ্যা। প্রভাবশালীরা ফসলি জমি থেকে শুরু করে বাসস্থানের পাশেও গড়ে তুলছেন অবৈধ ইটভাটা। বাদ যায়নি স্কুলও।

উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের ৪৩ নম্বর দাড়িয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শাপলা নামের ইটভাটা। এ ছাড়া স্কুলটির ৩০০ গজের মধ্যে গড়ে উঠেছে তানিয়া ও এমকেএম নামে আরও দুটি ইটভাটা। সব সময় ইটভাটাগুলো থেকে নিঃসৃত কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে থাকে স্কুলটি। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে স্কুলের শত শত শিশু শিক্ষার্থী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটা মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। কাছাকাছি আর কোন স্কুল না থাকায় অভিভাবকেরা অনেকটা বাধ্য হয়েই সন্তানদের দূষিত পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পাঠাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলটির দেয়ালের পাশেই সারি সারি রাখা হয়েছে কাঁচা ইট। জ্বলছে আগুন, পোড়ানো হচ্ছে ইট। মাটি, জ্বালানি, ইট বোঝাই ট্রাক একের পর এক যাওয়া আসা করছে। উচ্চ শব্দ, ধুলা আর ধোঁয়ায় একাকার চারিদিক। এর মধ্যেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান আর খেলাধুলা।

শিক্ষার্থীরা জানায়, ধোঁয়া, ছাই আর ধুলোবালিতে তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ক্লাস চলাকালীন সময়ে ইটভাটার লরি ও ট্রাকের আসা-যাওয়ার প্রচণ্ড শব্দে শিক্ষকদের কথা শুনতে পায় না তারা।

নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক নন্দা দেবী বলেন, ‘২০০৮ সালে ইটভাটার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। এই অভিযোগের তদন্তও হয়েছে। কিন্তু ইটভাটা বন্ধ হয়নি।’

নন্দা দেবী আরও বলেন, ‘জেলা শহর থেকে টিভি সাংবাদিকেরা এসে শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের বক্তব্য নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সংবাদ প্রকাশ হয়নি। ক্ষমতাবান ইটভাটা মালিকেরা অর্থ দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে ফেলে। তাই এই সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।’ 

স্কুলের পাশে ইটভাটা স্থাপনের কারণ জানতে চাইলে শাপলা ব্রিকসের মালিক মো. স্বপন মিয়া এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

গৌরীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন বলেন, আইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা নির্মাণের কোন সুযোগ নেই। ওই স্কুলটির পাশে স্থাপিত ইটভাটাগুলো আইন না মেনেই স্থাপন করা হয়েছে।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, ‘২০০৮ সালে করা অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন-২০১৩ অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভাটা স্থাপন করা যাবে না। গৌরীপুরে শাপলা, তানিয়াসহ বেশির ভাগ ইটভাটা অনুমোদনহীন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত