Ajker Patrika

জীবনের গল্প বদলে দিয়েছে খামার

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
বাবা-ছেলে দুজনে মিলে খামারে মুরগির পরিচর্যা করছেন। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চারিয়া মাসকান্দা গ্রাম থেকে সোমবার তোলা। ছবি : আজকের পত্রিকা
বাবা-ছেলে দুজনে মিলে খামারে মুরগির পরিচর্যা করছেন। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চারিয়া মাসকান্দা গ্রাম থেকে সোমবার তোলা। ছবি : আজকের পত্রিকা

রবিকুল ইসলামের জীবনের গল্পটা সংগ্রামের, কিন্তু আজ তা বদলে গেছে আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রমের এক অনন্য উদাহরণে। ৩০ বছর আগে জীবিকা নির্বাহ করতেন ভাঙারি কেনাবেচা করে। এরপর সিলভারের আসবাব ফেরি করেছেন বাড়ি বাড়ি। করেছেন কিস্তিতে মোবাইল ফোন বিক্রির ব্যবসাও। কিন্তু চোখ রেখেছিলেন আরও স্থায়ী ও লাভজনক কিছুতে। একসময় দেখলেন, অনেকেই খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে তোলেন মুরগির খামার। এখন তিনি একজন পুরোদস্তুর খামারি।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চারিয়া মাসকান্দা গ্রামের বাসিন্দা রবিকুল। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি পালন করছেন সোনালি কালার বার্ড জাতের মুরগি।

রবিকুল জানান, নিজের হাতে থাকা ৩ লাখ টাকা আর কিছু ঋণ নিয়ে গত বছরের মার্চে শুরু করেন খামার। ছয় শতাংশ জমি কিনে পাঁচ শতাংশে নির্মাণ করেন খামারের ঘর। শুরু করেন ৫০০ বাচ্চা দিয়ে। তবে ক্ষুদ্র পরিসরে লাভের সুযোগ কম—এই উপলব্ধি থেকে খামারটি বাড়িয়ে করেন দেড় হাজার মুরগির। সে সময় হঠাৎ তিন-চার দিনে মারা যায় প্রায় ৮০০ মুরগি। তবু ভেঙে পড়েননি, আবার নতুন করে শুরু করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় চালানে বাজারজাত করে আগের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেন। চতুর্থবার তেমন লাভ না হলেও এবার পঞ্চমবারের মতো বাজারজাত করে তিনি ভালো লাভের আশা করছেন।

রবিকুল বলেন, ‘খামার শুরু করার পর থেকেই দিনরাত পরিশ্রম করছি, কিন্তু প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের কেউ আমার খামারের খোঁজ নেয় না। কোনো পরামর্শ বা সহযোগিতাও পাইনি।’

তবে রবিকুলের এই স্বপ্নে পাশে আছে তাঁর পরিবারও। বিশেষ করে তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলে শাহিনুর আলম নিয়মিত খামারের কাজে সাহায্য করে। শাহিনুর বলে, ‘বাবা যখন খামার শুরু করেন, তখন থেকেই আমি পড়াশোনার পাশাপাশি খামারে কাজ করছি। এবার আমরা লাভের আশা করছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অমিত দত্ত বলেন, ‘রবিকুলের মতো অনেকেই এখন এই জাতের মুরগির খামারে ঝুঁকছেন। সোনালি কালার বার্ড দেখতে দেশি মুরগির মতো এবং স্বাদেও অনেকটা সেরকম। ব্রয়লার এড়িয়ে চলা অনেক ভোক্তাই এখন এই জাতের মুরগির মাংস পছন্দ করছেন। রবিকুলের খামার আমরা পরিদর্শন করব। যাঁরা পরামর্শ চান, আমরা তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত