Ajker Patrika

হাত নেই মরিয়মের পা-বিহীন রুবেল, আছে বুকভরা আত্মবিশ্বাস

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ২১: ৪৬
হাত নেই মরিয়মের পা-বিহীন রুবেল, আছে বুকভরা আত্মবিশ্বাস

একজনের দুই হাত নেই, অন্যজনের নেই দুই পা। তবু অদম্যশক্তিতে এগিয়ে চলেছে তারা। কোনো বাধাই তাদের পেছনে ফেলতে পারেনি। অদম্য সাহস আর শক্তি নিয়ে অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলছে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার প্রতিবন্ধী মরিয়ম ও সদরের রুবেল পারভেজ। 

মরিয়ম ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি গ্রামের মৃত মুক্তার হোসেনের মেয়ে। শৈশব থেকেই তার দুটি হাত নেই। অন্যদিকে রুবেল পারভেজ ময়মনসিংহ নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কেওয়াটখালী মোড়লপাড়ার শামসউদ্দিন দুলালের ছেলে। বিদ্যুতায়িত হয়ে দুই পা হারিয়ে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় অন্য দশটা মানুষের মতোই জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলছেন তিনি।

জন্মের পর থেকেই দুই হাত নেই মরিয়ম সিদ্দিকীর। অভাবের সংসারে জন্মের ছয় মাস পর হারাতে হয় বাবাকে। তবু অদম্য সাহস আর মেধায় এগিয়ে যাচ্ছে মরিয়ম। নবম শ্রেণিতে পড়া মরিয়ম পায়ে লিখেই সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ভবিষ্যৎ গড়তে চায়। অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে পা দিয়ে লিখে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ এবং জেএসসিতে ৪ দশমিক ৯৩ পায় মরিয়ম সিদ্দিকী। তার সাহস আর মেধায় খুশি শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন। 

কারও সহযোগিতা ছাড়াই নিজেই পা দিয়ে খাবার খাচ্ছেন মরিয়ম

মরিয়ম সিদ্দিকী বলে, ‘একটা সময় পরিবারের অবাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে স্কুলে ভর্তি হই। বর্তমানে ফুলপুর মহিলা কামিল মাদ্রাসায় এখন নবম শ্রেণিতে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। পায়ে লিখে ক্লাসের ফাস্ট গার্ল। পড়াশোনার খরচ জোগাতে বাড়িতে রয়েছে একটি মুদির দোকান। সেটিও নিজে পরিচালনা করি।’ 

কথা হয় মরিয়ম সিদ্দিকীর সঙ্গে। সে জানায়, দুই হাত ছাড়াই পৃথিবীর আলো দেখে সে। ছয় মাস বয়সে হারাতে হয় বাবাকে। তিন ভাই বোনকে নিয়ে বিপাকে পড়ে তার মা। ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে তাকে নিয়ে ঢাকায় যায় মা। একটি বাসায় কাজ করত মা, আর সে করত ভিক্ষা। এভাবেই কয়েক বছর চলে তাদের সংসার। পরে মা দেশের বাইরে চলে গেলে নানা-নানির কথায়ও ভিক্ষা করতে হয় তাকে। 

 

মরিয়ম বলে, ‘একসময় চলতে, লেখতে এবং কাজ করতে সমস্যা হতো। এখন আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে এগিয়ে চলা। সবার সঙ্গেই পরীক্ষা কিংবা ক্লাসের টেবিলে বসে ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের মাঝখানে কলম রেখে উত্তরপত্রে লিখতে কোনো সমস্যা হয় না। একসময় নিজের খাবার নিজে খেতে পারতাম না। কিন্তু এখন পরীক্ষার খাতার মতো পা দিয়ে চামচ ধরে নিজের মুখে নিজেই খাবার তুলে সহজেই খেতে পারি। নিজের কাপড়চোপড়ও নিজেই পরি। থালাবাসন মাজা, কল চেপে পানি তোলা, সবজি কাটা, উঠান ঝাড়ু দেওয়া এবং মোবাইল চালাতেও কোনো সমস্যা হয় না।’ 

নিজের কাজ নিজেই করেন মরিয়ম। বাড়ির বাসন-কুশন পরিষ্কার করছেন তিনি

অন্যদিকে বিদ্যুতের শকে দুই পা হারানো ময়মনসিংহের রুবেল পারভেজ অন্য প্রতিবন্ধীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। ৩০ বছর আগে পা হারানো রুবেল শতবাধা উপেক্ষা করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিড প্রতিবন্ধী একাডেমি। 

ফুলপুর মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ তাফাজ্জল হোসেন বলেন, মরিয়ম অষ্টম শ্রেণিতে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। দুই হাত না থাকলেও সাহস আর মেধায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ভালো করছে মরিয়ম। প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। 

 

রুবেল পারভেজ বলেন, বাবা-মায়ের বড় সন্তান হওয়ায় ছোটকাল থেকেই ছিলেন চঞ্চল প্রকৃতির। বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোই ছিল তাঁর কাজ। ছিলেন পাখিপ্রেমী। হরেকরকমের পাখি ধরে পুষতেন। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে পাখির ছানা সংগ্রহ করতে গিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে কাঠবাদামগাছের ২০ ফুট ওপরে ওঠেন, ছানা নিয়ে নামার সময় ৩৩ হাজার বোল্টের বিদ্যুতের তিনটি তারের ওপর পড়েন তিনি। এরপর প্রাণে বাঁচলেও ঊরু থেকে কেটে ফেলতে হয় দুই পা। 

বিদ্যুতায়িত হয়ে দুই পা হারিয়ে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন পাখি প্রেমী রুবেল পারভেজ

পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরে ঢাকায় নিয়ে যান।

পাখির প্রতি যেমন প্রেম তেমনি রয়েছে মানুষের প্রতি ভালোবাসা। তাই তিনি নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য প্রতিবন্ধীদের আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিড প্রতিবন্ধী একাডেমি। সেখানে ১৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের বিনা ফি-তে পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষকে ভালোবেসে যেতে চান রুবেল পারভেজ। 

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, জেলায় ৭২ হাজার ৮২৫ জন প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে এবং শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৬২৭ জনকে। প্রতিবন্ধীদের টাকা যেন এদিক-সেদিক না হয় সে জন্য নিয়মিত তদারকি করা হয়। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামূল হক বলেন, প্রতিবন্ধী হয়েও অনেকে নিজ যোগ্যতায় আত্মনির্ভরশীল। তাঁদের মধ্যে রুবেলও একজন। তিনি যেভাবে মানুষের জন্য কাজ করছেন, সত্যিই সেটা সমাজের জন্য বড় পাওয়া। সরকারি সুযোগসুবিধার পাশাপাশি তাঁদের সহযোগিতা করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

নীলফামারী প্রতিনিধি
চীনা হাসপাতালের নকশা। ছবি: সংগৃহীত
চীনা হাসপাতালের নকশা। ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে নীলফামারীতেই হচ্ছে চীন সরকারের উপহারের ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল। গত ৩০ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা নোটিশে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপসচিব ফাতিমা তুজ জোহরা ঠাকুর স্বাক্ষরিত ওই নোটিশ ‘অতীব জরুরি’ হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নোটিশের সূত্রমতে, নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী টেক্সটাইল মাঠে সাড়ে ২৫ একর জায়গার ওপর নির্মিত হবে চীনা হাসপাতাল। হাসপাতাল স্থাপনে ইতিমধ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও বিভিন্ন স্থাপনার ব্যয় প্রাক্কলন তৈরি করতে বলা হয়েছে।

চীন সরকারের হাসপাতাল স্থাপনে নীলফামারী জেলাকে নির্বাচিত করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ এইচ এম সাইফুল্লাহ রুবেল ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার। তাঁদের মতে, হাসপাতালটির ফলে এলাকার স্বাস্থ্যসেবার মান যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবে এই জেলা। উন্নত চিকিৎসা নিতে এখন আর দেশের বাইরে যেতে হবে না।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি সোহেল পারভেজ বলেন, ‘চীন সরকারের হাসপাতাল স্থাপন নিয়ে সরকারের সিলেকশন যথাযথ। দারোয়ানী মাঠ সব দিক থেকে এগিয়ে অন্যান্য জায়গাগুলোর চেয়ে। সব সুযোগ-সুবিধা পাবে হাসপাতালটি স্থাপনের ক্ষেত্রে। ব্যবসায়িকভাবে আরও সমৃদ্ধ হলো আমাদের জেলা।’

এ ব্যাপারে নীলফামারীর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাকিউজ্জামান বলেন, ‘চিঠিটি আমরা পেয়েছি। ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন বিষয়ে আমরা ডিজিটাল সার্ভে শুরু করেছি। গণপূর্ত বিভাগ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।’

নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানান, দারোয়ানী টেক্সটাইল এলাকায় ৬০ একরের বেশি সরকারি জায়গা রয়েছে। চীন সরকারের এক হাজার শয্যার হাসপাতাল স্থাপনে ২৫ একর জায়গা প্রয়োজন। ২৫ একর জায়গা হাসপাতালের জন্য দিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতাল স্থাপনে ব্যয় এবং ডিজাইনের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, নীলফামারীতে হচ্ছে হাসপাতালটি।

প্রসঙ্গত, নিজ এলাকায় এই হাসপাতাল চেয়ে আন্দোলন হয়েছে রংপুরসহ কয়েকটি জেলায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
জেসমিন আরা রুমা। ছবি: সংগৃহীত
জেসমিন আরা রুমা। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহসভাপতি জেসমিন আরা রুমাকে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা দিকে নগরীর মালগুদাম এলাকার নিজ বাস থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার রুমা নগরীর মালগুদাম এলাকার অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারী আবু তাহেলের মেয়ে। তাঁর স্বামী সুলতান মাহমুদ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বলে জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জেসমিন আরা রুমা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে গত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সশস্ত্র হামলার অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নালিতাবাড়ীতে মসজিদে ঢুকে হামলা-ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ২

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
উমর ফারুক ওরফে ফারুক পাগলা ও ফরহাদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
উমর ফারুক ওরফে ফারুক পাগলা ও ফরহাদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় একটি মসজিদে ঢুকে ইমাম ও মুসল্লিদের ওপর হামলা এবং মসজিদের আসবাব ভাঙচুরের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে শেরপুর শহরের নয়ানী বাজার এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের জহিরুল ইসলামের দুই ছেলে উমর ফারুক ওরফে ফারুক পাগলা (৩৫) ও ফরহাদ হোসেন (২৭)।

পুলিশ জানায়, ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার বারোমারী বাজার এলাকার চেল্লাখালী নদীর পশ্চিমপাড়ে উত্তর বাতকুচি ফরেস্ট অফিসসংলগ্ন বাইতুল নূর জামে মসজিদে ওই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

সেদিন ফরহাদ, উমর ফারুক ও রুবেল নামে তিনজন মদ্যপ অবস্থায় মসজিদে ঢুকে ইমাম শফিকুল ইসলামের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ থেকে এই মসজিদে আজান দেওয়া যাবে না, আমাদের অনুমতি ছাড়া আর আজান হবে না।’

ইমাম প্রতিবাদ করলে তাঁরা তাঁকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে ইমাম পালিয়ে গেলে হামলাকারীরা মসজিদে ঢুকে মাইক সেট, বৈদ্যুতিক বোর্ড, টিনের বেড়া ও অন্য সামগ্রী ভাঙচুর করেন।

এ সময় মুসল্লি হাবিবুর রহমান ও কাজল মিয়া বাধা দিতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। পরে গ্রামবাসী আহতদের উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

ঘটনার পর মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আশরাফ আলী বাদী হয়ে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা করেন।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘মসজিদে ঢুকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অস্ত্র নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ঘোরাফেরা, প্রতিবাদ করায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে যুবক খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে সিগমা রবিকে আজ মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরে যুবক খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে সিগমা রবিকে আজ মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর মহানগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গাছা থানার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুনিয়া তারগাছ এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত যুবকের নাম মারুফ (২২)। তিনি মহানগরীর গাছা থানার কুনিয়া তারগাছ এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। আহত যুবকের নাম জামিল (২৪)। তাঁরা পরস্পর বন্ধু।

পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল অভিযুক্ত ব্যক্তিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন মামলার প্রধান আসামি মো. রবিউল ইসলাম ওরফে সিগমা রবি (২৪) ও ২ নম্বর আসামি মো. সাব্বির হোসেন (১৮)। তাঁরা এলাকায় কিশোর গ্যাং হিসেবে পরিচিত হলেও সবাই তরুণ বয়সী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গাছা থানার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুনিয়া তারগাছ এলাকার আক্তারের বাড়ির সামনে এলাকার চিহ্নিত কিশোর গ্যাং সদস্য রবি, রনি, সাগর, সাব্বিরসহ আরও চার থেকে পাঁচজন দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছিল। এ সময় এক দোকানের ক্রেতা জামিল কিশোর গ্যাং সদস্যদের বেপরোয়া আচরণের প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গে রবির বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। উভয় পক্ষের বাগ্‌বিতণ্ডা থামাতে জামিলের বন্ধু মারুফ ঘটনাস্থলে যান। এ সময় কিশোর গ্যাং সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দুই বন্ধুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে তারুন্নেসা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মারুফ মারা গেছেন। প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে জামিলকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আহত জামিলের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, রবি, রনি, সাগর, সাব্বিরসহ ৮-১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক সেবন, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নিহত যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, আহত জামিলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবি, রনি, সাগর, সাব্বিরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।

জিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার জাহিদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে জানান, মারুফ হত্যাকাণ্ডে গাছা থানায় মামলা হয়েছে। এজাহারে মো. রবিউল ইসলাম ওরফে সিগমা রবিকে প্রধান আসামি করা হয়।

জাহিদুল হাসান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান শনাক্ত করে জিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের একটি টিম পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা থেকে আজ সকালে রবিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর একটি টিম ২ নম্বর আসামি মো. সাব্বির হোসেনকে গাছা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত