Ajker Patrika

গারো পাহাড়ে ছয় মাসে ৫ হাতির মৃতদেহ উদ্ধার

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ জুন ২০২২, ১৭: ০৭
গারো পাহাড়ে ছয় মাসে ৫ হাতির মৃতদেহ উদ্ধার

শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে একের পর এক বন্য হাতির মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। সবশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) সন্ধ্যায় ঝিনাইগাতী উপজেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমানার বেরবেরী এলাকা থেকে একটি বন্য হাতির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। শুক্রবার সকালে হাতিটির সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। 

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গারো পাহাড়ে হাতির প্রয়োজনীয় খাবার না থাকায় তারা পাহাড় ছেড়ে লোকালয় ও ফসলের খেতে চলে আসছে। গত ২৭ বছরে জেলায় হাতির আক্রমণে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আর মানুষের হামলায় এবং নানাভাবে মারা পড়েছে ৩৫ থেকে ৪০টি বন্য হাতি। সবশেষ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের পাশে বেরবেরী এলাকার ১১০১ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে একটি বন্য হাতির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে সন্ধ্যায় বন বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৃত বন্য হাতিটির পেট ফুলে গেছে এবং শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। হাতির পিঠে ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতিটি কীভাবে মারা গেছে তা জানা যায়নি। তবে এলাকাবাসী ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের ধারণা, ভারতের মেঘালয়ে বল্লম (দেশীয় অস্ত্র) দিয়ে হাতিটিকে আঘাত করা হয়েছে, পরে বাংলাদেশে এসে হাতিটি মারা গেছে। হাতিটি দুই-তিন দিন আগেই মারা গেছে বলেও ধারণা তাদের। 

গজনী এলাকার এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) সদস্য আব্রাহাম বলেন, ‘হাতিটি সম্ভবত সীমান্তের ওপার থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এপারে এসে মারা গেছে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি।’ 

এলাকাবাসী ও প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাদের ধারণা, ভারতের মেঘালয়ে বল্লম দিয়ে হাতিটিকে আঘাত করা হয়েছে, পরে বাংলাদেশে এসে হাতিটি মারা গেছেঝিনাইগাতী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘বন্য হাতিটি পুরুষ, আনুমানিক বয়স ১৫-২০ বছর। আঘাতজনিত কারণে মারা যেতে পারে। কারণ হাতিটির পিঠে ও মুখে বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাশাপাশি হাতিটির দাঁত কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে ময়নাতদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে। আমার মতে, বন বিভাগের উচিত এ ঘটনায় মামলা করা।’

এ বিষয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘শেরপুরের গারো পাহাড়ে একের পর এক হাতির মৃত্যু ও হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব হাতি নানা উপায়ে হত্যা করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শুধু একটি হাতি হত্যার ঘটনায় মামলা করা হলেও বাকিগুলোর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যে কারণে গারো পাহাড়ে হাতি হত্যা থামছে না। হাতি-মানুষের সহাবস্থানের জন্য গারো পাহাড়ে হাতির অভয়াশ্রম ও খাদ্যের সংস্থান করা জরুরি।’

এ বিষয়ে বন বিভাগের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মকরুল ইসলাম আকন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘গতকাল রাত হয়ে যাওয়ায় হাতিটির ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি। আজ শুক্রবার সকালে হাতিটির সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। হাতিটিকে সেখানেই মাটিচাপা দেওয়া হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে সেটি কীভাবে মারা গেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ছয় মাসে জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অন্তত পাঁচটি হাতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীবরদী উপজেলায় হাতির মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মাত্র একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত