Ajker Patrika

‘আমার মনের পাশাপাশি এলাকাবাসীর মনও জয় করতে পেরেছে আমার স্ত্রী’ 

সেলিম হোসাইন , ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ৫৩
‘আমার মনের পাশাপাশি এলাকাবাসীর মনও জয় করতে পেরেছে আমার স্ত্রী’ 

জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা (বর্তমান নসম জেসমিন আকতার)। ছিলেন ফিলিপাইনের নাগরিক। পড়াশোনা করেছেন সেখানকার নামি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ বিভাগে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সিঙ্গাপুরে চাকরি করতে গিয়ে পরিচয় হয় বাংলাদেশি তরুণ মো জুলহাস উদ্দিনের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম, এরপর বিয়ে। আর ভালোবাসার টানে নিজের দেশ ছেড়ে ১০ বছর আগে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। সংসার পাতেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের এক গ্রামে।

দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করেন। ১১ নভেম্বর ভোট গণনা শেষে জেসমিন আক্তার ৪ হাজার ৪৯৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোছা. শিমু আক্তার বক প্রতীক নিয়ে ভোট পান ১ হাজার ৮৩৭টি। এমন ঘটনায় চাঞ্চল্য অবস্থা তৈরি হয়েছে পুরো জেলাজুড়ে। 

দবরদস্তা গ্রামের জুলহাস উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকার সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৮ সালে ফিলিপাইনের  একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ফিসারিজ বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এরপর চাকরিতে যোগ দেন সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানিতে। সেখানেই চাকরির সুবাদে পরিচয়  হয় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার যুবক জুলহাস উদ্দিনের সঙ্গে। পরে সেখানেই দুজনের প্রেমের সম্পর্ক। দুই  বছর পরে নিজেদের দেশে ফেরেন তারা। তবে তাদের মধ্যে চলতে থাকে যোগাযোগ। সিদ্ধান্ত নেন আবদ্ধ হবেন বিয়ের বন্ধনে। সেজন্য ২০১০ সালের শেষের দিকে জুলহাস পাড়ি জমান ফিলিপাইনে। সেখানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পেট্রিয়াকা স্বামীর হাত ধরে চলে আসেন বাংলাদেশে জুলহাসর গ্রামের বাড়িতে। নিজের পরিবার, দেশ, ধর্ম ছেড়ে বেছে নেন এই গ্রামীণ জীবন।

জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা বলেন, ১০ বছর হয়ে গেছে আমি এখানে এসেছি। বাবা-মা ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়েছে। শুরুতে বেশ সমস্যায় পড়েছিলাম। কারণ আমি বাংলা বলতে পারতাম না। আর এখানকার মানুষ ইংরেজি বুঝে না। তবে ধীরে ধীরে শেখার চেষ্টা করেছি। এখন আমি সবার কথাই মোটামুটি বুঝি। আমিও কিছু কিছু বলতে পারি।

নির্বাচন করার কোন পরিকল্পনা কখনো ছিল না জানিয়ে পেট্রিয়াকা বলেন, ভোটে দাঁড়াতে চাইনি, ইচ্ছাও ছিল না। কিন্তু এলাকার মানুষের কথায় নির্বাচন করতে হয়েছে। এলাকার জনগণ  আমাকে খুব ভালোবাসে, তাই তাদের কথা ফেলতে পারি নাই ।

প্রার্থী হওয়ার পর অনেক কষ্ট করেছি। সকালে নাস্তা খেয়ে প্রচারণায় বের হয়ে সারাদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে সন্ধ্যায় বাড়িতে এসেছি। জয়ী হবার পর সব কষ্ট ভুলে গেছি। এলাকার জনগণ আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন।সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। 

জুলহাস উদ্দিন বলেন, আমার মনের পাশাপাশি আমার স্ত্রী এলাকাবাসীর মনও জয় করতে পেরেছে। তাদের জন্যই নির্বাচন করেছে এবং তারাই জয়লাভ করিয়েছে। আমার আশা সবার সুখে-দুখে সবসময় পাশে থেকে সাধারণ মানুষের উপকার করে যাবে।

রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে এলাকার পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় খুশি সবাই। বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি করেছে আনন্দ মিছিলও।

মৌসুমি আকতার নামে এক প্রতিবেশী বলেন, আমরা তাকে অনেক পছন্দ করি। সেজন্যই তাকে আমরা ভোট দিয়ে পাশ করিয়েছি।

 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত