Ajker Patrika

আগুনে দগ্ধ হওয়ার ৫ দিন পর স্ত্রী ও শ্যালকের মৃত্যু, স্বামী গ্রেপ্তার 

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ৫৭
আগুনে দগ্ধ হওয়ার ৫ দিন পর স্ত্রী ও শ্যালকের মৃত্যু, স্বামী গ্রেপ্তার 

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ স্ত্রী ও শ্যালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত শুক্রবার থেকে ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন তাঁরা।  গতকাল বুধবার বিকেলে মারা যান দুজনেই। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূ শারমিনের ভাই শামীম বাদী হয়ে শারমিনের স্বামী হাসান আলীকে (৩২) আসামি করে সাটুরিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। হাসান আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাটুরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মানবেন্দ্র বালো।

গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গওলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া দুজন হলেন সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গওলা গ্রামের আতাউর রহমানের মেয়ে শারমিন আক্তার (৩০) এবং তাঁর চাচাত ভাই রুবেল মিয়া (২৮)। এ ঘটনায় শারমিন আক্তারের চাচি শিরিন আক্তার (৫২) দগ্ধ অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া সদর ইউনিয়নের পশ্চিম গওলা গ্রামের আতাউর রহমানের মেয়ে শারমিন আক্তারের সঙ্গে ১০ বছর আগে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী ঢাকা জেলার  ধামরাইয়ের রাজাপুর গ্রামের মো. হাসান আলীর। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী শারমিনের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে হাসানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কয়েকবার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে পালিয়ে আসেন শারমিন। গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে এসে স্বামীকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শারমিন আক্তার। এ খবর জানতে পেরে শুক্রবার সকালে মো. হাসান আলী গওলা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি এসে স্ত্রীকে না পেয়ে খুঁজতে থাকেন। পরে পাশেই  চাচাশ্বশুরের বাড়িতে ঢুকে স্ত্রীকে দেখে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। চাচিশাশুড়ি শিরিন আক্তার ও শ্যালক রুবেল মিয়া শারমিনকে বাঁচাতে এলে তাঁদের গায়েও পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেযন হাসান আলী। পরে আহত তিনজনকেই  স্থানীয় প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।

সাটুরিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, ওই দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেবেন শুনে স্বামী হাসান আলী স্ত্রী শারমিনের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর চাচি ও চাচাতো ভাই আগুনে পুড়ে আহত হন। বুধবার শারমিন ও তাঁর চাচাতো ভাই রুবেল  মারা গেছেন।’

সাটুরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মানবেন্দ্র বালো বলেন, নিহত শারমিনের ভাই শামীম বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতেই সাটুরিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন। এটি পরে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। আসামি হাসান আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজন নিহত ও একজন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরায় ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে সড়কে শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর উত্তরায় ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক থেকে এক যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। উত্তরার দক্ষিণখান, উত্তরা পূর্ব ও বিমানবন্দর থানা এলাকায় গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলো মোহাম্মদ মিনহাজ (১১), মোহাম্মদ মোস্তফা (৩১) ও আরিফুল ইসলাম (২৫)।

এর মধ্যে ইলেকট্রিকের এক দোকানের কর্মচারী ছিল মিনহাজ। মোস্তফা জামালপুর সদর উপজেলার ছনকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে বাস করতেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। আর আরিফুল ইসলাম ময়মনসিংহের কোতোয়ালি উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণখানের প্রেমবাগান এলাকায় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রাস্তা পার হয়ে দোকানে যাচ্ছিল মিনহাজ। এ সময় দুটি অটোরিকশা বেপরোয়া গতিতে আসছিল। একটি অটোরিকশা মিনহাজকে চাপা দিলে সে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পরপরই চালক ও অটোরিকশাটি আটক করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় একটি অটোরিকশার ধাক্কায় মিনহাজ নামের শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় জাহিদুল ইসলাম নামের ওই অটোচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে সঙ্গে অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে।

শামীম আল মামুন বলেন, শিশুটি মাথায় আঘাত পেয়ে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যায়। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অপর দিকে গাজীপুর-ঢাকা মহাসড়কের উত্তরার বিএনএন সেন্টারের সামনে গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে মোটরসাইকেল আরোহী সাদ মোহাম্মদ মোস্তফাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিএনএস সেন্টারের পাশের সড়কে একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় জনতা। পরে তাঁকে প্রথমে উদ্ধার করে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করলে তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, নিহত ব্যক্তির কপালে ও কানের পাশ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিনি মারা গেছেন।

দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই সাজ্জাদ বলেন, কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটা কেউ দেখেছে—এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। আশপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। তাই বলা যাচ্ছে না, কোনো গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে কি না। নাকি নিজে নিজেই দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আবার মোটরসাইকেলটিও তেমন ভালো না। গাড়ির ব্রেকও ততটা ঠিক ছিল না। তাই কীভাবে মারা গেছেন, এখনই শিউর বলা যাচ্ছে না।

মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান এসআই।

অপর দিকে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল এলাকায় গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক আরিফুল ইসলাম (২৫) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে ডিএমপির বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসলিমা আক্তার বলেন, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালসংলগ্ন মহাসড়কে একটি কাভার্ড ভ্যানের চাপায় একজন মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন। চালক পালিয়ে গেলেও কাভার্ড ভ্যানটি আটক করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাকরির শেষ কর্মদিবসে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
মো. ফজলুল করিম। ছবি: সংগৃহীত
মো. ফজলুল করিম। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় চাকরিজীবনের শেষ কর্মদিবসে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারা গেছেন।

নিহত শিক্ষকের নাম মো. ফজলুল করিম (৬০)। তিনি উপজেলার ব্রহ্মগাছা ক্লাস্টারের হামিন দামিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বাড়ি রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের মীরের দেউলমুরা গ্রামে। স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন তিনি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ছিল তাঁর চাকরিজীবনের শেষ কর্মদিবস। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যালয়ের ওয়াশরুমে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মীরা দ্রুত তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।

রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মো. ফজলুল করিম ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও শান্ত স্বভাবের মানুষ। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর জানাজা শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে।

রায়গঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, ফজলুল করিম ছিলেন দায়িত্বশীল ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। চাকরির শেষ দিনে তাঁর মৃত্যু সত্যিই বেদনাদায়ক। শিক্ষা পরিবার একজন ভালো মানুষকে হারাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঘর ভাঙলেও জমি আঁকড়ে কোল পরিবারগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে উচ্ছেদের শিকার ভুক্তভোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে উচ্ছেদের শিকার ভুক্তভোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এক্সকাভেটরের চাপায় ঘরের টিনগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। দুমড়েমুচড়ে গেছে ঘরের স্টিলের খাট, হাঁড়ি-পাতিলসহ অন্য জিনিসপত্র। বাড়ির মাটির দেয়ালগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবু ডাইংয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোল সম্প্রদায়ের পাঁচজনের বাড়ি এভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও তাঁরা ভিটা ছেড়ে যাননি। পাশেই বাঁশঝাড়ে অল্প কিছু জিনিসপত্র নিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন। এখানেই থাকতে চান তাঁরা।

গত সোমবার দুপুরে সনাতন সরেন, সুজন সরেন, ভুটু কিসকু, ভারত টুডু ও শনিলাল টুডুর বাড়িতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। খাস জায়গা ভেবে এই পরিবারগুলো ১৯৯৮ সাল থেকে এখানে বাস করে আসছিলেন। পরে শোনেন যে, জমিটি তিলক মাঝি, দিনু মাঝি ও ভাদু মাঝি নামের কয়েকজনের নামে রেকর্ড আছে। তাঁরা তাঁদের জাত ভাই। এখন এখানে নেই। তাঁদের হিন্দু সাজিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নেন মকবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি।

পরে মকবুলের ওয়ারিশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের আলমগীর কবিরসহ কয়েকজন জমি পেতে আদালতে মামলা করেন। কোল সম্প্রদায়ের মানুষগুলো মামলা পরিচালনা করতে পারেননি। একতরফা রায়ে এই ৭৭ শতাংশ জায়গার রায় হয়েছে আলমগীরদের পক্ষে। গত সোমবার পুলিশ ও আদালতের প্রতিনিধি গিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে।

গোদাগাড়ীর মোহনপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বাবু ডাইং গ্রামটি রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি বাড়ি একেবারেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর দুটি বাড়ির আংশিক ভাঙা হয়েছে। শনিলাল টুডুর বাড়ির অর্ধেক ভেঙে আঙিনায় কয়েকটি সীমানা পিলার পুঁতে দেওয়া হয়েছে। শনিলালের স্ত্রী চম্পলি মুর্মু বলেন, ‘একদিক থেকে বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙছিল, আরেক দিক দিয়ে নিজেরা নিজেরাই মাপামাপি করে বাড়ির আঙিনায় সীমানা পিলার পুঁতে দিয়েছে। আমাদের কোনো কথাই শোনেনি।’

সনাতন টুডু বলেন, ‘পুলিশসহ কোর্টের লোকজন এসে বাড়ি ভাঙতে চাইলে আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যাই। তখন পুলিশ বলে যে, ‘‘আপনি আইনের কাজে বাধা দেবেন না’’। আমাকে সরিয়ে দিয়ে বুলডোজার চালিয়ে দেয়। জিনিসপত্র সরাতে আমরা ৩০ মিনিটও সময় পাইনি।’

ঘরহারা সুজন সরেন বলেন, ‘অল্প কিছু জিনিস বের করতে পেরেছি। সেগুলো এখানেই রেখেছি বাঁশতলায়। বাকিগুলো বুলডোজারের নিচে গেছে। গরু-ছাগলগুলো মানুষের বাড়িতে রেখেছি। দুই দিন আমরা বাঁশঝাড়ের মধ্যেই ছিলাম। গতকাল রাতে বৃষ্টি এলে পাশের বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিই। আমরা এখানেই থাকতে চাই। আমাদের তো আর যাওয়ার কোনো জায়গা নাই।’

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে উচ্ছেদের শিকার ভুক্তভোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে উচ্ছেদের শিকার ভুক্তভোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ দিন পরিবারগুলোকে দেখতে যান বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) রাজশাহী ইউনিটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সামিনা বেগম, সেন্টার ফর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব ভলান্টারি অর্গানাইজেশনের (সিসিবিভিও) সমন্বয়কারী আরিফ ইথার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি সুধীর সরেন, বন্ধু আমরার সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম লিটন, সিসিবিভিওর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার নিরাবুল ইসলাম ও ব্লাস্টের প্যারালিগ্যাল আবু তালেব।

সিসিবিভিওর সমন্বয়কারী আরিফ ইথার বলেন, ‘আগে এ জমি কোল সম্প্রদায়েরই ছিল। তাদের হিন্দু দেখিয়ে জমির রেকর্ড করে নেওয়া হয়েছে বাঙালিদের নামে। কারণ, আদিবাসীদের জমি নিতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন লাগে। হিন্দু হলে অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। ভিন্নপথে জমির মালিকানা নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক কাজ হয়েছে। আমরা অনুরোধ করব, যেন দ্রুতই তাদের পুনর্বাসন করা হয়।’

জানতে চাইলে কোল পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী আলমগীর কবির বলেন, ‘এই জমি কিনেছিলেন আমার দাদা মকবুল হোসেন। তিনি কীভাবে এটা কিনেছিলেন, তা তো আমরা বলতে পারব না। তবে এটা রেকর্ডীয় সম্পত্তি। তারপরও আদিবাসীরা জমি ছাড়েনি। বাধ্য হয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করেছি। জমি এখন আমাদের দখলে।’

ব্লাস্টের রাজশাহী ইউনিটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সামিনা বেগম জানান, এই জমির সমস্ত কাগজপত্র তাঁরা সংগ্রহ করবেন। তারপর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আইনি সহায়তা দেবেন। গতকাল গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহম্মেদ জানিয়েছিলেন, পরিবারগুলোর থাকার ব্যবস্থা করার জন্য তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে আজ পর্যন্ত তাঁদের কোনো গতি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএম কলেজে যুগলের ওপর চড়াও, উগ্র অনলাইন গ্রুপের ১০ জন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশাল সরকারি বিএম কলেজে এক যুগলের ওপর চড়াও হওয়ায় ১০ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল সরকারি বিএম কলেজে এক যুগলের ওপর চড়াও হওয়ায় ১০ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল সরকারি বিএম কলেজে এক যুগলের ওপর চড়াও হয়ে তাঁদের ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে একদল তরুণ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাসের পরীক্ষা ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগত শিক্ষার্থীদের মারামারি হয়েছে। পরে পুলিশের হাতে ১০ জনকে তুলে দেওয়া হয়।

যুগলের ওপর চড়াও হওয়া তরুণেরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘টিম প্রটেক্ট আওয়ার সিস্টার্স’ নাম একটি উগ্র অনলাইন গ্রুপের সদস্য বলে জানা গেছে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন বিএম কলেজের মীর বাহার মিয়া ও তাকরিম হোসেন, ইনফ্রা পলিটেকনিকের মো. ফজলুল হক আকিব, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মো. রাব্বি, বেলতলা দারুল উলুম মাদ্রাসার ইনাম আহমেদ, নগরের কাশিপুরের মো. মাহমুদ মোস্তফা, রূপাতলী এলাকার মো. রাফি, মুসলিমপাড়ার নাসিম মাহমুদ এবং লুৎফুর রহমান সড়কের কাজী মিরাজ ও মো. তাওহিদ।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও কলেজ প্রশাসনের তথ্যমতে, আটক ব্যক্তিরা একটি উগ্র অনলাইন গ্রুপের সদস্য। তাঁরা নারীদের রক্ষার নামে বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা করে আসছেন।

পুলিশ জানায়, আটক তরুণেরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যে গ্রুপের প্রধান মালয়েশিয়াপ্রবাসী।

বিএম কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. আবু তাহের মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, ক্যাম্পাসের পরীক্ষা ভবনের কাছাকাছি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দুটি ছেলে-মেয়ে গল্প করছিলেন। ছেলেটি হাতেম আলী কলেজের এবং মেয়েটি বিএম কলেজের। একপর্যায়ে কলেজেরই এক ছেলে ওদের দেখে তাঁর সহযোগী বহিরাগত কয়েকজনকে ডেকে আনেন। সেখানে ওই ছেলে-মেয়ের ভিডিও করে হাতেম আলী কলেজের ছেলেটিকে মারধর করা হয়। বিষয়টি টের পেয়ে বিএম কলেজছাত্ররা বহিরাগত কয়েকজনকে ধরে তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

উপাধ্যক্ষ জানান, এই ছেলেরা ‘টিম প্রটেক্ট আওয়ার সিস্টার্স’ নাম একটি উগ্র অনলাইন গ্রুপের সদস্য। তাঁরা কলেজে আটকা পড়েছেন এমন খবর ছড়িয়ে দিলে দলে দলে কলেজ গেটের সামনে হাজির হয়। একপর্যায়ে বিএম কলেজে ছাত্ররা তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে ধরে পুলিশে খবর দেন। এঁরা নগরের টেক্সটাইল কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ, বিএম কলেজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। খবর পেয়ে পুলিশ ১০ জনকে ১১টি মোবাইলসহ আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন আইস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএম কলেজ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ জন ছাত্রকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিএম কলেজছাত্ররা তাদের ধরে দিয়েছে। তাদের নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুনেছেন যে একটি অনলাইন গ্রুপের সদস্য তারা। তবে তদন্ত করে দেখা হবে আটককৃতদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে কি না। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত