বিভুরঞ্জন সরকার
মানিকগঞ্জের তেওতা ইউনিয়নের কান্দাবাসাইল হলো আমার গ্রাম। ৬৭ বছর আগে প্রকৃত অর্থেই গ্রামটি ছিল ছায়াঢাকা, পাখি ডাকা, ছায়া সুনিবিড়। ছোটবেলায় আমরা ঝিঁঝিপোকার ডাকে ঘুমিয়ে পড়তাম, ঘুম ভাঙত পাখির ডাকে। আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া না-লাগা ছবির মতো গ্রামটি এখন শুধু স্মৃতিতে আছে, বাস্তবে নেই।
পুরো গ্রামে কোনো টিউবওয়েল ছিল না। সম্পন্ন গৃহস্থ বাড়িতে ছিল কুয়ো বা ইঁদারা। যাদের বাড়িতে পানির এই উৎস ছিল না, সেই সব বাড়ির গৃহবধূ ও মেয়েরা মাটির কলসি ভরে পানি এনে দিনরাতের খাওয়ার পানির প্রয়োজন পূরণ করতেন। আর বাসনকোসন ধোয়া, গোসলসহ অন্য সব প্রয়োজন মেটানো হতো ডোবার মতো পুকুরে। কয়েক গ্রাম মিলে ছিল একটি বড় পুকুর। সেখানে দিনভর আঁকা হতো এপাড়া–ওপাড়া থেকে আসা নানা বয়সী মানুষের চরণচিহ্ন। মেয়েদের মধ্যে রক্ষণশীলতা ছিল না।
পুকুরপাড়ে ছিল দশ গ্রামের শিশুদের একমাত্র পাঠশালা। ওই স্কুলেই অ আ পড়তে শিখেছি। কোনো ইউনিফরম নয়; হাফপ্যান্ট পরে, হাতাওয়ালা গেঞ্জি গায়ে, খালি পায়েই স্কুলে গিয়েছি। স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক ছিলেন আর দুইজন ছিলেন সহকারী শিক্ষক। তিনজনে মিলে পাঁচটি ক্লাস নিতেন। এক ক্লাসে পড়া দিয়ে অন্য ক্লাসে গেলে শিক্ষার্থীরা উচ্চ স্বরে পাঠ রপ্ত করত। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অবশ্য ছিল খুবই কম। চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে কোনো মেয়ে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
গ্রামে তখন ছিল হিন্দুপাড়া, মুসলিমপাড়া। আমি স্বভাবতই হিন্দুপাড়ায় ছিলাম। তবে পাড়ায় পাড়ায় কোনো বিবাদ ছিল না। আমাদের বাড়টি ছিল বেশ খোলামেলা। একদিকে ছিল বড় একটি বাগানের মতো। না, আজকালের মতো বিলাসী বাগান নয়। নানা ধরনের গাছগাছালি ছিল। আম জাম কাঁঠাল গাব নারিকেল ছাড়াও কত রকমের ফলের গাছ যে ছিল, এখন সব মনেও নেই। বেতঝাড় ছাড়াও একটি বাঁশঝাড়ও ছিল বাড়িসংলগ্ন। জোছনার সময় ঠিকই বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠত। যখন ‘বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলোক বলা কাজলা দিদি কই’ কবিতাটি প্রথম পড়ি, তখন আমার মনে হয়েছিল, কবি বুঝি আমাদের গ্রামে বসেই কবিতাটি লিখেছেন।
আমাদের গ্রামে কোনো পাকা রাস্তা ছিল না। একটু দূরে যেতে হলে বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি কিংবা পালকি। বাইসাইকেল একেবারে ছোটবেলায় দেখিনি। রোগব্যাধি হলে সহায় ছিলেন একজন কবিরাজ। তিনিও থাকতেন এক দূর গ্রামে। মাঝে মাঝে আমাদের গ্রামে আসতেন ঘোড়ায় চড়ে। তাঁকে দেখে আমার মনে হতো, তিনি বুঝি ঈশ্বরের প্রতিনিধি।
বর্ষাকালে নৌকা ভিন্ন চলাচল করা সম্ভব ছিল না। আমাদের বাড়িটিও বর্ষায় পানিতে ডুবে যেত। আমরা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যেতাম বাঁশের সাঁকোতে দুই পায়ে ভারসাম্য রক্ষা করে।
সেই গ্রাম এখন আর নেই। বিদ্যুতের আলো গেছে। ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে না। তবে মানুষের মনের অন্ধকার বোধ হয় আগের চেয়ে বেড়েছে। তার পরও সেই অতীত গ্রামের শ্যামল মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে লেগে আছে। মনে পড়লে মন পোড়ে, পোড়ায়ও।
মানিকগঞ্জের তেওতা ইউনিয়নের কান্দাবাসাইল হলো আমার গ্রাম। ৬৭ বছর আগে প্রকৃত অর্থেই গ্রামটি ছিল ছায়াঢাকা, পাখি ডাকা, ছায়া সুনিবিড়। ছোটবেলায় আমরা ঝিঁঝিপোকার ডাকে ঘুমিয়ে পড়তাম, ঘুম ভাঙত পাখির ডাকে। আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া না-লাগা ছবির মতো গ্রামটি এখন শুধু স্মৃতিতে আছে, বাস্তবে নেই।
পুরো গ্রামে কোনো টিউবওয়েল ছিল না। সম্পন্ন গৃহস্থ বাড়িতে ছিল কুয়ো বা ইঁদারা। যাদের বাড়িতে পানির এই উৎস ছিল না, সেই সব বাড়ির গৃহবধূ ও মেয়েরা মাটির কলসি ভরে পানি এনে দিনরাতের খাওয়ার পানির প্রয়োজন পূরণ করতেন। আর বাসনকোসন ধোয়া, গোসলসহ অন্য সব প্রয়োজন মেটানো হতো ডোবার মতো পুকুরে। কয়েক গ্রাম মিলে ছিল একটি বড় পুকুর। সেখানে দিনভর আঁকা হতো এপাড়া–ওপাড়া থেকে আসা নানা বয়সী মানুষের চরণচিহ্ন। মেয়েদের মধ্যে রক্ষণশীলতা ছিল না।
পুকুরপাড়ে ছিল দশ গ্রামের শিশুদের একমাত্র পাঠশালা। ওই স্কুলেই অ আ পড়তে শিখেছি। কোনো ইউনিফরম নয়; হাফপ্যান্ট পরে, হাতাওয়ালা গেঞ্জি গায়ে, খালি পায়েই স্কুলে গিয়েছি। স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক ছিলেন আর দুইজন ছিলেন সহকারী শিক্ষক। তিনজনে মিলে পাঁচটি ক্লাস নিতেন। এক ক্লাসে পড়া দিয়ে অন্য ক্লাসে গেলে শিক্ষার্থীরা উচ্চ স্বরে পাঠ রপ্ত করত। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অবশ্য ছিল খুবই কম। চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে কোনো মেয়ে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
গ্রামে তখন ছিল হিন্দুপাড়া, মুসলিমপাড়া। আমি স্বভাবতই হিন্দুপাড়ায় ছিলাম। তবে পাড়ায় পাড়ায় কোনো বিবাদ ছিল না। আমাদের বাড়টি ছিল বেশ খোলামেলা। একদিকে ছিল বড় একটি বাগানের মতো। না, আজকালের মতো বিলাসী বাগান নয়। নানা ধরনের গাছগাছালি ছিল। আম জাম কাঁঠাল গাব নারিকেল ছাড়াও কত রকমের ফলের গাছ যে ছিল, এখন সব মনেও নেই। বেতঝাড় ছাড়াও একটি বাঁশঝাড়ও ছিল বাড়িসংলগ্ন। জোছনার সময় ঠিকই বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠত। যখন ‘বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলোক বলা কাজলা দিদি কই’ কবিতাটি প্রথম পড়ি, তখন আমার মনে হয়েছিল, কবি বুঝি আমাদের গ্রামে বসেই কবিতাটি লিখেছেন।
আমাদের গ্রামে কোনো পাকা রাস্তা ছিল না। একটু দূরে যেতে হলে বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি কিংবা পালকি। বাইসাইকেল একেবারে ছোটবেলায় দেখিনি। রোগব্যাধি হলে সহায় ছিলেন একজন কবিরাজ। তিনিও থাকতেন এক দূর গ্রামে। মাঝে মাঝে আমাদের গ্রামে আসতেন ঘোড়ায় চড়ে। তাঁকে দেখে আমার মনে হতো, তিনি বুঝি ঈশ্বরের প্রতিনিধি।
বর্ষাকালে নৌকা ভিন্ন চলাচল করা সম্ভব ছিল না। আমাদের বাড়িটিও বর্ষায় পানিতে ডুবে যেত। আমরা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যেতাম বাঁশের সাঁকোতে দুই পায়ে ভারসাম্য রক্ষা করে।
সেই গ্রাম এখন আর নেই। বিদ্যুতের আলো গেছে। ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে না। তবে মানুষের মনের অন্ধকার বোধ হয় আগের চেয়ে বেড়েছে। তার পরও সেই অতীত গ্রামের শ্যামল মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে লেগে আছে। মনে পড়লে মন পোড়ে, পোড়ায়ও।
ডিএমপির পল্লবী ও দারুসসালাম জোনের এডিসি সালেহ্ মুহম্মদ জাকারিয়া সভাপতি ও ডিবি তেজগাও জোনের এডিসি মো. মোর্শেদুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ৩৫ তম বিসিএস পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৫-২৬ মেয়াদের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেনুরাল পাগলার আস্তানায় হামলার ৬ দিন পর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। আজ শুক্রবার রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত আদেশে তাঁকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অপরাধ শাখায় পরিদর্শক (ক্রাইম) পদে সংযুক্ত করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগেগ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের অন্যতম হচ্ছে নৌকাবাইচ। জীবনযাপনে আধুনিকতার সংস্পর্শে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালির ঐতিহ্যের এই উৎসবটি। ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চলনবিল-অধ্যুষিত নাটোরের গুরুদাসপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মনোমুগ্ধকর নৌকাবাইচ।
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট গণসংগীতশিল্পী মাহমুদ সেলিম। আজ শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৪ ঘণ্টা আগে