Ajker Patrika

সরকারি ঘর ও জমি পেয়ে জীবন বদলে যাচ্ছে তাঁদের

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ১১ জুন ২০২৪, ০১: ৩২
সরকারি ঘর ও জমি পেয়ে জীবন বদলে যাচ্ছে তাঁদের

দিনে এখন ১০০ থেকে ১২০ কাপ চা বিক্রি করেন মো. বাহার আলী। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের সব দল কুঠিরপাড়া গ্রামের বাহার আলী এর আগে রিকশা চালাতেন। শহুরে ব্যস্ততা না থাকা, আর অসুস্থতার কারণে রিকশা চালিয়ে আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনের আশা ছিল না তাঁর। তবে তিন বছর আগে থেকে জীবনের পরিবর্তন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ঘর পেয়েছেন তিনি। সেখানে খুলেছেন ছোট টং দোকান। আর তাতেই সংসারের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। 

লালমনিরহাটে বাহার আলীর মতো প্রায় ২০০ গৃহহীন পরিবার সচ্ছলতার মুখ দেখেছে। কিছুদিন আগেও যারা পরের জমিতে বাস করতেন, তাঁরা এখন নিজের ঘর, ছোট ফসলের খেত, সেলাই মেশিনে আয়ের চাকা ঘুরিয়েছেন। আজ সোমবার এই জেলার চারটি প্রকল্প ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। 

আগামীকাল মঙ্গলবার লালমনিরহাটের জেলার চার উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর হবে মোট ১ হাজার ২৮২টি। এর মধ্যে রয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮৭৫ টি, পাটগ্রাম ৯৯টি হাতীবান্ধা ১৬৬টি ও আদিতমারী ১৪২। সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। লালমনিরহাটের সঙ্গে আরও উদ্বোধন হবে ভোলা ও কক্সবাজারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। 

বাহার আলীর স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, এখন দোকান থেকে মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় হয়। সংসারের সঙ্গে ছেলের পড়াশোনার খরচও চালাতে পারছেন তাঁরা। দোকানে চা, বিস্কুট, চিপস, কোমলপানীয় বিক্রি হয়। 

তবে বাহার আলী স্বাবলম্বী হলেও অনেকের অভিযোগও রয়েছে। ঘর পেলেও কাজ পাচ্ছেন না তাঁরা। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, গৃহহীনদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য তাঁরা সব ভাবেই চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেকেই সরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ না নিয়েই সুবিধা নিতে চাচ্ছেন। 

বাহার আলী যে আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকেন সেখানে নারীদের অভিযোগ, তাঁরা সেলাই মেশিন পাননি। এমন দুজন নারী আমেনা ও সামিনা খাতুন। 

রোববারের বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ছবি: আজকের পত্রিকাআমেনা ও সামিনা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এর আগে সারা দিন মানুষের কাছে হাত পেতে যা পেতেন তাতেই কোনোরকমে পেট চলত। তবুও একবেলা কম-বেশি কিংবা ভালো-মন্দ খাবারে জুটত। সারা দিন যেমন-তেমন কাটলেও রাত হতেই ভর করত নতুন দুশ্চিন্তা। কখনো রেলস্টেশন, কখনো মানুষের বাড়ির বারান্দা আবার কখনো রাস্তায় কেটেছে দিনরাত্রি। 

এখন তাঁরা ঘর পেয়েছেন। কিন্তু পেটে দায় মেটেনি। এই প্রকল্পে ৬৫টি পরিবার থাকলেও আমেনা–সামিনার মতো কিছু পরিবার স্বাবলম্বী হতে পারছে না। 

আমেনা খাতুন বলেন, তাঁরা দুই বোন সেলাই মেশিন পাননি। সেলাই মেশিন পেলে একটু আয় করা যেত। 

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, তাঁরা এসব মানুষকে স্বাবলম্বী করে তুলতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। তবে অনেকেই সেলাই মেশিন কার্যক্রমে প্রশিক্ষণ নিতে চান না। এ জন্য হয়তো তাঁরা সেলাই মেশিন পাননি। 

এদিকে এই উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নে ৩৪টি পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছে। তবে সেখানে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। গতকাল রোববার রাতের বৃষ্টিতে পানি জমেছে প্রকল্প এলাকায়। 

এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, খুব শিগগিরই এসব বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। পানি যাতে না জমে এর জন্য মাটি ফেলা হলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়নি। এটাও করা হবে শিগগির। 

আশ্রয়ণ ঘর পেয়ে অনেকেই সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকাকিছু পরিবারের স্বাবলম্বী না হওয়ার চিত্র দেখা গেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িয়াতেও। ছিটমহল হিসেবে পরিচিত দশিয়ারছড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনেকে কাজ খুঁজে পেয়েছে। অনেকে এখনো কিছুই করতে পারছেন না। বাড়ির পুরুষদের শহরে রিকশা চালিয়ে উপার্জন করতে হচ্ছে। 

এই প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, তাঁর দুই ছেলে ও স্বামী ঢাকায় রিকশা চালান। তবে স্বামীর হাঁপানির সমস্যা। এই বয়সে যদি এখানে একটা কিছু করা যেত তাহলে আরও ভালো হতো। 

মর্জিনা বলেন, ঘর পেয়ে অনেক খুশি। তবে আগের মতই বাড়ির সব পুরুষ বাড়ি থাকতে পারছে না। 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা ইউনিয়নে ৬৫টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন গৃহহীনেরা। এর আগে পাশেই রেলের জমিতে উদ্বাস্তুর মতো থাকতেন তাঁরা। এখন নিজের ঘর পেয়ে শুরু করেছেন চাষাবাদ। তিস্তা নদীর সঙ্গে গড়ে ওঠা এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে শাকসবজি ও বাদাম চাষ এবং গরু–ছাগল পালন করে আয় বাড়িয়েছেন তাঁরা। 

তবে অভিযোগ আছে, এখানে ঘর পেলেও ২৫টি পরিবার এখনো থাকে রেলের জমিতে গড়ে তোলা আগের ঘরে। রাতে চৌকিদার এলে কেউ কেউ বাড়ি ফেরেন। 

এ বিষয়ে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের সেক্রেটারি মো. রছু মিয়া বলেন, কয়েকটি পরিবার এখনো আগের জায়গাতেই আছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এদিকে সারা দেশে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে দেশের আরও ৭০টি উপজেলা সম্পূর্ণ গৃহহীন মুক্ত হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এই ঘর এবং দুই শতাংশ করে জমির দলিল হস্তান্তর করবেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গহিন পাহাড়ে অভিযানে দুই মানব পাচারকারী আটক, নারী-শিশুসহ ২৫ জন উদ্ধার

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। এ সময় দুই মানব পাচারকারীকে আটক করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেন কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক।

সিয়াম-উল-হক জানান, গোয়েন্দা তথ্য ও আগে আটক করা পাচারকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য নারী-শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া-সংলগ্ন গহিন পাহাড়ি এলাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছে।

ওই তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যৌথ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে পাচারের উদ্দেশ্যে বন্দী থাকা নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার এবং দুই মানব পাচারকারীকে আটক করা হয়।

কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র বিদেশে উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন, উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন ও অল্প খরচে বিদেশ যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল।

পাচারকারীরা তাদের পাহাড়ে বন্দী রেখে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করছিল বলে জানা গেছে। আটক দুই পাচারকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

একই আসনে মুখোমুখি দুই ভাই, লড়বেন বিএনপি-জামায়াত থেকে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
বিএনপি মনোনীত আজিজুর রহমান ও জামায়াতে ইসলামীর মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি মনোনীত আজিজুর রহমান ও জামায়াতে ইসলামীর মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে (চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর) বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী থেকে আপন দুই ভাই প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তাঁরা হলেন জামায়াতে ইসলামীর মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক এবং বিএনপির আজিজুর রহমান। তাঁরা আপন দুই ভাই। আজিজুর রহমান বড়। তাঁরা জেলার রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাঁদের বাবার নাম মনছুর আহমেদ। তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

গতকাল সোমবার বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত মনোনীত প্রার্থীদের তালিকায় কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য আজিজুর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর আগে কয়েক মাস আগে জামায়াত থেকে ওই আসনে ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাককে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়।

তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপন দুই ভাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেও দুজনই জয়ের ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও এটি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি তাঁদের। তবে দুই দল থেকে আপন দুই ভাইয়ের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি এখন সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

জানতে চাইলে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তিনি আমার বড় ভাই। তাঁর প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে তাঁকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। জামায়াত একটি আদর্শিক দল। এখানে দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, সবাই তাঁর জন্য কাজ করবে। আর আমার ভাইয়ের দলে সবাই নেতা হতে চায়। একে অন্যের বিরোধিতা করে। ভোটাররা সব জানে, বোঝে। জামায়াতের পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। ইনশা আল্লাহ জয় আমাদের হবে।’

বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ছোট ভাই একসময় আমার কর্মী ছিল। এখন সে জামায়াতের প্রার্থী। আমাদের পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরানোর জন্য তারা এমন করেছে। কিন্তু এতে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। দল আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করায় তাদের (জামায়াতের) পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। ছোট ভাইয়ের প্রতি পরিবার ও গ্রামবাসীর সমর্থন নেই। ভোটাররা আমার প্রতি আস্থাশীল। তারা বিএনপিকে জয়ী করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসিংদীর রায়পুরা: দেড় বছর অনুপস্থিত শিক্ষক, নেন বেতন

  • অভিযোগ বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
  • প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে
  • ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে না এলেও উপজেলা অফিসে যান প্রায়ই
হারুনূর রশিদ, রায়পুরা (নরসিংদী)
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ২১
তাহমিনা সরকার। ছবি: সংগৃহীত
তাহমিনা সরকার। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরায় তাহমিনা সরকার নামের এক প্রধান শিক্ষক প্রায় দেড় বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে তিনি নিয়মিত বেতন-ভাতা গ্রহণ করে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

তাহমিনা উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গতকাল সোমবার বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এদিনও তিনি বিদ্যালয়ে ছিলেন না। তবে সেখানে কথা হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে।

বিদ্যালয় সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১২ জন। শিক্ষক রয়েছেন ১২ জন। তাহমিনা সরকার ২০১৬ সালের মার্চ মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০২৩ সালে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে কয়েক দফায় অগ্নিসংযোগ ও টিউবওয়েলে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাতে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অফিসকক্ষের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মালপত্র পুড়ে যায়। পরে প্রধান শিক্ষকের করা মামলায় অফিস সহকারী কাম নৈশপ্রহরী মামুনসহ স্থানীয় তিনজন জেলও খাটেন। এরপর থেকেই তিনি নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ে আসছেন না। তবে উপজেলা অফিসে যান প্রায়ই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিহার সুলতানাসহ কয়েকজন বলেন, আগুন লাগানো ও টিউবওয়েলে বিষ দেওয়ার ঘটনার পর থেকেই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আর আসছেন না। প্রধান শিক্ষক না থাকায় নানা সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে হতাশ। তারা বলে, ‘প্রধান শিক্ষক প্রায় এক বছর বিদ্যালয়ে আসেন না। এতে আমাদের পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা চাই তিনি দ্রুত স্কুলে ফিরে আসুন।’

বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি খন্দকার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘যদি তিনি স্কুলে আসতে না চান, তবে তাঁর পরিবর্তে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। আমরা চাই স্কুল ভালো চলুক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তাহমিনা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেন স্কুলে যাচ্ছি না সেটা আপনাকে কেন বলব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয় তারা জানে।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোহরাফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক তাহমিনা সরকারের ভাষ্যমতে, তিনি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। আগের ডিপিও স্যারের কাছ থেকে শুরুতে তিন মাসের ছুটি নিয়েছিলেন, পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতিতে অফিসে আসতেন; কিন্তু স্কুলে যেতেন না। তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি তাঁকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি যদি না যান, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী: ৮ বছর ড্রামের ভেলায় ‘দুর্নীতির প্রায়শ্চিত্ত’

  • ২০১৮ সালে নির্মাণ শেষের তিন মাসের মধ্যে উল্টে যায় সেতুটি।
  • কয়েক দফা তদন্ত হলেও প্রতিবেদন বা প্রতিকার কোনোটিই মেলেনি।
আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম 
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ২১
প্লাস্টিকের ড্রামের ভেলায় করে খাল পারাপার স্থানীয়দের। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরাম এলাকার বাঘ খাওয়ারচর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্লাস্টিকের ড্রামের ভেলায় করে খাল পারাপার স্থানীয়দের। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরাম এলাকার বাঘ খাওয়ারচর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরাম এলাকার আবাসন ও বাঘ খাওয়ারচর নামক গ্রামে প্রায় আড়াই শ পরিবারের বসবাস। গ্রামটি উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে একটি খাল দ্বারা বিচ্ছিন্ন। নীলকমল ও ধরলা নদীর সংযোগকারী ওই খালের ওপর একটি সেতু নির্মিত হলেও এর সুবিধা ভোগের আগেই তা ভেঙে উল্টে যায়। আট বছর ধরে খালেই উল্টে রয়েছে সেতুটি। তখন থেকে এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র ভরসা প্লাস্টিকের ড্রামের ভেলা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীন উপজেলার পূর্ব ধনীরাম আবাসনগামী রাস্তার খালের ওপর ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৬ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাজটির তদারকি করেন। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সেতুটি দেবে উল্টে যায়। পরে বন্যার পানির চাপে সেতুর সংযোগ সড়কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নিম্নমানের সামগ্রী আর নির্মাণ ত্রুটির কারণে সেতুটি ভেঙে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এরপর নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক কয়েক দফা ‘তদন্ত’ হলেও প্রতিবেদন প্রকাশ কিংবা প্রতিকার কোনোটিই মেলেনি।

স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক দশক দাবি করার পর একটি সেতু পেলেও নির্মাণের মাত্র তিন মাসে সেটি উল্টে যায়। এরপর প্রায় আট বছর পার হলেও নতুন সেতু নির্মাণ কিংবা বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সেতুটি খালের মধ্যে এখনো উল্টে রয়েছে। ড্রামের ভেলা আর রশির সাহায্যে খালের পানি পাড়ি দিয়ে কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করছেন স্থানীয়রা। নারী ও শিশুশিক্ষার্থীসহ কয়েক শ পরিবারের হাজারেরও বেশি মানুষ প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে; কিন্তু প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না কেউ।

প্রাকৃতিক বন্দিদশায় বসবাসকারী খালের ওপারের লোকজন বলছেন, একটি ব্রিজের অভাবে চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতসহ উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে স্থানীয়দের চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বছরের পর বছর এ দুর্দশা চলে আসছে। এই অবস্থার অবসানে ওই খালের ওপর একটি টেকসই সেতু নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা কোরবান আলী ও মনোয়ারা বেগম জানান, পূর্ব ধনীরাম আবাসনের শতাধিক পরিবারসহ বাঘ খাওয়ার চরের কয়েক শ পরিবারকে উপজেলা শহর যাতায়াত ও বাজারঘাট করতে ওই খালের ওপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। ওটাই একমাত্র পথ। বছরের আট মাস খালে পানি থাকে। ড্রামের ওপর কাঠের চ্যালা দিয়ে ভেলা বানিয়ে রশি টেনে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী চলাফেরা করছেন। ঝুঁকি নিয়ে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীসহ নারী ও রোগীদের ভেলায় করে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় ছোট শিক্ষার্থীরা পানিতে পড়ে যায়। এতে তাদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি খোঁজ নেব। ওই এলাকাবাসীর পক্ষে আমার কাছে একটি আবেদন দিলে তাঁদের যোগাযোগ সমস্যা সমাধানে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত