Ajker Patrika

দখলে মৃতপ্রায় নদ-নদী, উচ্ছেদের পদক্ষেপ নেই

  • জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা ৪৩। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০টি বেহাল।
  • দখলদার ১১৬ জন। দখল হয়েছে নদীর প্রায় ১৬ একর।
  • পরিবেশবাদীদের ভাষ্য, দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে হাজার হবে।
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৫, ০৭: ১১
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় নরসুন্দা নদী দখল করে নির্মাণ করা বাগানবাড়ি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় নরসুন্দা নদী দখল করে নির্মাণ করা বাগানবাড়ি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

ইজমা শোভা জর্দা কোম্পানি। দেশি এই জর্দা কোম্পানির মালিক মঞ্জু মিয়া। তিনি জেলার কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠজন। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মঞ্জু মিয়া করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ও কাদির জঙ্গল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেতুর পশ্চিমে নরসুন্দা নদীর মূল গতিপথের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে প্রাচীর তুলে বাগানবাড়ি করেছেন। তিনি জলাধার নিয়ন্ত্রণ আইন এবং কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি বলে ক্ষোভ স্থানীয়দের। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা মানববন্ধনও করেছেন। তারপরও মঞ্জু মিয়ার দাপটে প্রশাসন ছিল নির্বাক। দখলমুক্ত হয়নি নদী।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে মঞ্জু মিয়াকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি খরিদ করছি এই জায়গা। আমার জায়গায় বিল্ডিং করছি।’

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাহেদ মিয়া, রুমেজ আলী, মাইনুল ইসলাম, রমজান আলী, হাবিব মিয়া, রহম আলী, সজল মিয়া, দুলাল মিয়া, ইজ্জত আলীসহ মোট ৪১ জন নরসুন্দা নদীর পাড়ের প্রায় ৮২ শতাংশ জায়গা দখল করেছেন। স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০০ জন হবে।

এদিকে কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও গ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়া অডা শিমুহা নদী করগাঁও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড ইজারা নিয়েছে জলমহাল হিসেবে। সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম সমিতি পরিচালনা করেন। সম্প্রতি তিনি নদীটিতে বাঁধ দিয়ে সেচে মাছ শিকার করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কেউই ভয়ে মুখ খুলছেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত আবদুস সালামের সঙ্গে কথা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করতাছে। মাটি কাটতাছে। আমি কিন্তু সেচার পক্ষে না। আমি সেচি নাই। আমি জাল দিয়ে মাছ ধরছি।’

কুলিয়ারচর উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, ছয়সূতী ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া কালী নদীতে এখন পুরোদমে হয় ধান চাষ ৷ একেবারে বিলীন হয়ে গেছে নদীর অনেকাংশ। স্থানীয় কৃষক মিজানুর রহমান (৬২) বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, এ নদীতে বড় বড় মালবাহী নৌকা চলাচল করত। তখন প্রথাবনাথ বাজারই ছিল আশপাশের সবচেয়ে বড় বাজার। এখন এই নদীও নাই, বাজারও নাই। এখন এখানে ধান চাষ হয়।’

সরকারি সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা ৪৩। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০টি নদ-নদী বেহাল। এগুলোর দখলদার রয়েছে ১১৬ জন। নদ-নদী দখলের পরিমাণ প্রায় ১৬ একর। তবে পরিবেশবাদীদের ভাষ্য, দখলদারের সরকারি হিসাব সঠিক নয়। নদ-নদীর দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে হাজার হবে। দিন দিন নদ-নদীর এমন বেহাল অবস্থা হতে থাকলেও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কার্যক্রম চোখে পড়ে না। তাদের কার্যক্রম খাতাপত্রেই সীমাবদ্ধ।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, অস্বীকার করার উপায় নেই, নদ-নদী অবৈধ দখলে প্রভাবশালীরা জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। নদীর অবৈধ দখল এবং এর স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করা ঠেকানোর আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা দখল করছে, তাদের দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, নদী ‘জীবন্ত সত্তা’—মহামান্য হাইকোর্টের এই ঘোষণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নদ-নদীগুলো হত্যা করছে, দখল-দূষণ করছে এক শ্রেণির মানুষরূপী পশু। বিভিন্নভাবে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে, নদীশাসনের নামে নদ-নদীগুলোর প্রাণপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক বলেন, শুকনো মৌসুমে এখন বেশির ভাগ নদীতে পানি নেই, ভরা মৌসুমে থাকে না প্রবাহ। নোংরা-ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়ে নদীগুলো এখন কিশোরগঞ্জবাসীর অভিশাপ হয়ে উঠেছে। এই নদীগুলো রক্ষা করার পথ একটাই—উৎসমুখের অপরিকল্পিত বাঁধ খুলে দেওয়া এবং নদী দখলবাজদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা। এই হীন কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের যারা জড়িত, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘সিএস মূলে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে সঠিকভাবে পিলার স্থাপন করতে হবে এবং দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আংশিক নয়, সম্পূর্ণ নদী খনন করতে হবে। এর আগে নদী খননের কাজে ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের ধারণা, নদী দখলদারের সংখ্যা হাজারখানেক। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকা সঠিক নয়। সরেজমিনে তদন্ত করে দখলবাজদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করে গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি।’

নদীবিষয়ক পত্রিকা রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা জানি, ২০১৮ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে কিশোরগঞ্জ জেলার নদ-নদীর অবৈধ দখলদারের তালিকা রয়েছে। কিন্তু সে মোতাবেক দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি? আমাদের জানামতে হয়নি। নতুন করে দখলদারদের তালিকা তৈরি বা উচ্ছেদও করা হয়নি। আমরা চাই, জেলা নদী রক্ষা কমিটিকে দ্রুত সক্রিয় করে জেলার সব নদ-নদী রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘সরকার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার একটা পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা নরসুন্দা নদীকে সিলেক্ট (বাছাই) করছি। নদীটি সার্ভে করার পর কয়েকটা দূষণস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই দূষণস্থল থেকে আমরা স্যাম্পল (নমুনা) সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা গবেষণাগারে পাঠিয়েছি। গবেষণাগার থেকে যখন রেজাল্ট আসবে, তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের নদ-নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিংয়ের (খনন) সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং স্থাপনা; যেগুলো নদীভাঙনের শিকার হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলোতে কীভাবে আমরা প্রতিরক্ষার কাজ বাস্তবায়ন করব, তারও সমীক্ষা হচ্ছে। এই সমীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর এগুলো নিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে যুবককে সাজা, ভেকু মেশিন জব্দ

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি  
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মো. হৃদয় আহমেদ (২৬) নামের এক যুবককে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত একটি এক্সকাভেটর (ভেকু মেশিন) জব্দ করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের জিলকী বটতলা এলাকায় উপজেলা প্রশাসন এই অভিযান চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ত্রিশাল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান।

সাজাপ্রাপ্ত হৃদয় জিলকী বটতলা এলাকার মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

এসি ল্যান্ড মাহবুবুর রহমান বলেন, জনস্বার্থে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে, যাতে পরিবেশ ও নদী রক্ষা করা যায় এবং অবৈধ বালু উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

বাকৃবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে গোপনে নারী সহপাঠীদের ছবি তুলে এক সিনিয়র ছাত্রের কাছে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ডিনের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিযোগকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রী বাকৃবি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনি তাঁর নারী সহপাঠীদের ঘুমন্ত বা ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি গোপনে মোবাইল ফোনে তুলতেন। তাঁর কাছ থেকে যিনি ছবিগুলো গ্রহণ করতেন, তিনি ওই ছাত্রী যে বিভাগে পড়েন, সেই বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে কর্মরত।

ওই ছাত্রী অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ছবি আদান-প্রদানের প্রমাণ পাই। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকার করেন যে তিনি মেয়েদের বিভিন্ন ছবি তুলতেন এবং তা এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে পাঠাতেন।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মোবাইলটি সিলগালা অবস্থায় ডিন অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ ও নিরোধ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে।

অভিযুক্ত সিনিয়র শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি মেয়েটির সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছি। সে যেসব ছবি পাঠিয়েছে, আমি তা সংরক্ষণ করিনি। আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না; তবে আমি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তা মেনে নেব।’

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের ভাষ্য, ইন্টার্নশিপ চলাকালে ওই ছাত্রীর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ করে তাঁরা তাঁকে নজরদারিতে রাখেন। পরে নিশ্চিত হন যে ওই ছাত্রী মেয়েদের ঘুমন্ত বা অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলতেন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁরা বিভাগীয় শিক্ষকদের অবহিত করেন এবং কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে কিশোরীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীতে মাসুদা পারভিন ওরফে ইভা (১৭) নামের এক কিশোরীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের মতিহার থানার মৌলভী বুধপাড়া এলাকার একটি আমবাগান থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। তার স্বামী মো. দুর্জয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

মৃত ইভা নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকার ইকবাল হোসেনের মেয়ে। তার স্বামী দুর্জয়ের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কানপাড়া গ্রামে। রাজশাহী নগরের দায়রাপাক এলাকায় এই দম্পতি ভাড়া থাকতেন। ইভা তিন দিন ধরে নিখোঁজ ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক জানান, দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আমবাগানে লাশটি দেখতে পান। ইভার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওসি বলেন, ইভার স্বামী দুর্জয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি পলাতক। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এ নিয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক আহত

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি   
উপজেলার মধ্যবাজার এলাকায় সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রামের বাসিন্দারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার মধ্যবাজার এলাকায় সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রামের বাসিন্দারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় দুই শিশুর ঝগড়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উপজেলার মধ্যবাজার এলাকায় এই সংঘর্ষ চলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়ইউড়ি ও বাহুবল গ্রামের দুই শিশুর মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়াকে ঘিরে বিকেল থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সন্ধ্যার পর উভয় গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মধ্যবাজার এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। গুরুতর আহত কয়েকজনকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল, বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে রাত ১০টার দিকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত