Ajker Patrika

স্কুলের মাঠে ঠিকাদারি মালামাল, শব্দ-ধুলায় দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৩৮
স্কুলের মাঠে ঠিকাদারি মালামাল, শব্দ-ধুলায় দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

ঝিনাইদহ সদরের রাজধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পাথর, বিটুমিনসহ নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রী রেখে চলছে রাস্তার কাজ। সেখানেই জ্বালানো হচ্ছে বিটুমিন, বড় মেশিন রেখে মেশানো হচ্ছে নির্মাণসামগ্রী। এতে বিকট শব্দ ও ধুলোয় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। স্কুলের মাঠে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ রয়েছে, খুদে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর পাশাপাশি শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করছেন ঠিকাদারের লোকজন। শুধু তাই নয়, প্রশাসন ও থানার পুলিশের নিষেধাজ্ঞার পরও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেশিন দিয়ে নিয়মিত কাজ চালানো হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদরের রাজধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুদে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও এখন আর সেটি দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থীই স্কুলে অনুপস্থিত থাকছে। বিকট শব্দে বিদ্যালয়ে থাকা যাচ্ছে না। ধুলোয় ছেয়ে যাচ্ছে স্কুলসহ আশপাশের এলাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে শহরের পবহাটি এলাকার ঠিকাদার ফিরোজ কবির রাস্তার ঠিকাদারি কাজের কিছু পাথর বিদ্যালয়ের মাঠে রাখেন। কয়েক দিন পর স্কুলশিক্ষকেরা সেখানে মালামাল রাখতে নিষেধ করেন। সেই নিষেধাজ্ঞা না শুনে গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে ট্রাকে করে ক্রমাগত পাথর আনতে থাকেন। স্কুলের প্রবেশমুখেই পিচ (বিটুমিন) রেখে জ্বালাতে শুরু করেন। এরপর গত মাসের ২২ তারিখ থেকে বড় মিক্সচার মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করেন।

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লাবনী আক্তার বলে, ‘আমাদের স্কুলে একটা গাড়ি আছে। সেখানে খুব শব্দ ও প্রচুর ধুলা হয়। মাঠে যেতে পারি না। খেলা করতে পারি না। আমরা মাঠে গেলে ওরা বকে। ধুলোবালুর জন্য ক্লাসরুমে বসা যায় না। ধুলোয় টিফিনের খাবার খাওয়া যায় না।’

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম বলে, ‘আমরা মাঠেই যেতে পারি না। ওই মেশিন দিয়ে আমাদের স্কুলের মাঠে অনেক দিন ধরেই কাজ চলছে। স্কুলে প্রবেশের গেটেই কাজ হচ্ছে।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা কাশেম মিয়া বলেন, ‘স্কুলের মাঠে মালামাল নিয়ে এসে ঠিকাদারের লোকজন যে অত্যাচার শুরু করেছেন, তাতে আমাদের বাড়ি-ঘরে থাকার কায়দা নেই। স্কুলের ছেলেমেয়েরা চলাচল করতে পারে না। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। তাঁদের এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার।’ 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমিন আক্তার বলেন, ‘বিকট শব্দে ঠিকমতো পাঠদান করা যায় না। আমরা কী বলছি, তা শিক্ষার্থীরা শুনতে পায় না। তাদের মনোযোগও পড়াশোনার দিকে থাকে না। এদিকে ধুলায় ক্লাসরুমে তো সমস্যা হয়ই, মাঠে তো বের হওয়াই যায় না। খুবই সমস্যার মধ্যে সময় যাচ্ছে আমাদের।’ 

প্রধান শিক্ষক শাহিনা আফরোজ বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন যখন কাজ শুরু করে, তখন নিষেধ করেছিলাম। তাঁরা ভুল স্বীকার করে বলেছিলেন এখানে কাজ আর করবেন না। কিন্তু ঠিক তার পরেই আবার মালামাল এনে স্কুলের মাঠে রাখেন এবং পাশেই বড় মেশিনে তা মিক্সড করে ও বিটুমিন জ্বালান। কোনোভাবেই তাঁরা আমাদের কথা শুনছেন না। বিষয়টি সমাধানে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ 

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন আমাদের কোনো কথাই শুনছেন না, বরং নানাভাবে হয়রানি করছেন। এলাকায় ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন যে আমরা তাঁদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে স্কুলমাঠে কাজ করতে অনুমতি দিয়েছি। এ কাজ এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন, জেদাজেদির পর্যায়ে চলে গেছে। কয়েক দিন আগে পুলিশ এসে তাঁদের কাজ করতে নিষেধ করেছিল। কিছু সময় বন্ধ ছিল। এরপর আবার তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।’ 

ঠিকাদার ফিরোজ কবির বলেন, ‘আর অল্প সময়ের কাজ আছে। সেটি হয়ে গেলেই মালামাল সরিয়ে নেব। প্রধান শিক্ষক প্রথমে অনুমতি দেন, পরে আবার বারবার নিষেধ করছেন। এখন দেখা যাক কী হয়।’

অনুমতি ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কেন রাস্তার নির্মাণসামগ্রী রাখা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্য সহকারী আবু তালেব বলেন, ‘আপনাদের কথার উত্তর কেন দিতে হবে? পারলে কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে শোনেন। আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারব না।’

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শাহীন বলেন, ‘স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে ঠিকাদারি মালামাল রাখা ও বিটুমিন পোড়ানোর বিষয়টি জানতে পেরেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঠিকাদারের লোকজন আমাদের কাছে এসেছিল। তারা সেখানে কাজ করার জন্য বারবার অনুমতি চাইছছে, কিন্তু আমরা বলেছি কোনো অনুমতি দেওয়া যাবে না।’’

নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ভবিষ্যতে যেন এমনটি না করতে পারে, সে জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত