Ajker Patrika

প্রতিবন্ধী হয়েও জীবনযুদ্ধে হার না মানা চার কৃষক

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৩
হামাগুড়ি দিয়ে জমিতে কাজ করেন ৪৫ বছর বয়সী সামেদুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
হামাগুড়ি দিয়ে জমিতে কাজ করেন ৪৫ বছর বয়সী সামেদুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

শারীরিক সীমাবদ্ধতা জীবনকে থমকে দিতে পারে না, তার উজ্জ্বল উদাহরণ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চার শারীরিক প্রতিবন্ধী কৃষক। ভিক্ষাবৃত্তির পথ এড়িয়ে তাঁরা কর্ম ও আত্মনির্ভরতার দৃঢ় মনোবল নিয়ে কৃষিকাজকেই বেছে নিয়েছেন। উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের গোড়ারপাড়া গ্রামের এই চার কৃষকের অদম্য জীবনযাত্রা এখন সবার কাছে অনুপ্রেরণার।

৪৫ বছর বয়সী সামেদুল ইসলাম শৈশবে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুই পায়ের শক্তি হারান। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করলেও তিনি দমে যাননি। পৈতৃক ও বর্গা জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালান এবং তিন মেয়ের মধ্যে দুজনকে বিয়েও দিয়েছেন।

গোড়ারপাড়া গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী টিপু নেওয়াজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গোড়ারপাড়া গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী টিপু নেওয়াজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

একই গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী টিপু নেওয়াজ ছোটবেলায় এক চোখ এবং কৈশোরে আরেক চোখের আলো হারান। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা করিয়েও দৃষ্টি ফেরেনি। কিন্তু শৈশব থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত থাকায় কৃষির প্রতি জন্ম নেয় ভালোবাসা। এখনো জমি চেনেন অভিজ্ঞতার জোরে। সার ছিটানো থেকে শুরু করে কীটনাশক প্রয়োগ—সবকিছুই একাই সামলান তিনি। কৃষি বিভাগের প্রণোদনার সার ও বীজ পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

এক পা না থাকলেও পানের বরজে অনায়াসেই কাজ করেন জামরুল ইসলাম।ছবি: আজকের পত্রিকা
এক পা না থাকলেও পানের বরজে অনায়াসেই কাজ করেন জামরুল ইসলাম।ছবি: আজকের পত্রিকা

অন্যদিকে, জামরুল ইসলাম গ্যাংরিন রোগে একটি পা হারালেও পরিবারের বোঝা হতে চাননি। তিনি নিজের জমিতে চাষাবাদ ও পানের বরজে কাজ করে চলেছেন। একইভাবে, ৬৫ বছর বয়সী রইচ উদ্দিন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও অন্যের কাছে হাত না পেতে কৃষিকেই আঁকড়ে ধরে আছেন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী রইচ উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
শারীরিক প্রতিবন্ধী রইচ উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এসব সংগ্রামী কৃষকের পরিবারও তাঁদের এই সংগ্রামে সহায়তা করে। স্থানীয়রা জানান, তাঁরা সমাজের বোঝা নন, বরং প্রমাণ করেছেন যে ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবকিছুই সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রণোদনার সার ও বীজ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ ও কৃষি পরামর্শের ব্যবস্থাও আছে। যেসব প্রতিবন্ধী কৃষক প্রণোদনার আওতায় নেই, তাঁদের দ্রুত এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনে সরকার কাজ করছে। আপনি যে চারজন প্রতিবন্ধীর কথা বলছেন, তাদের সরকারি সহায়তা করা হবে। এ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিবন্ধীদের সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা ব্যবসা বা কৃষিকাজে যুক্ত হতে পারেন। ঋণ নিয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা চাই তারা কারও বোঝা না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হোক।’

এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা অফিসের উপপরিচালক আব্দুল লতিফ সেখ বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা চাইলে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগের মাধ্যমে সহজেই প্রতিবন্ধী কার্ড তৈরি করে ভাতার আওতায় আসতে পারেন। এটি কারও কাছে হাত পাতা নয়, বরং সরকারের পক্ষ থেকে প্রদত্ত অধিকার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হলো লতিফ সিদ্দিকীর ভাইকে

গোয়ালন্দে ‘নুরাল পাগলার’ লাশ তুলে পুড়িয়ে দিল বিক্ষুব্ধরা, আহত অর্ধশত

গরম মাড় পড়ে শিশু দগ্ধ, গলা টিপে হত্যার পর বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলেন চাচি

পবায় মাইকে স্লোগান দিয়ে খানকা ভাঙচুর, নীরব ছিল দুই গাড়ি পুলিশ

২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও গণঅধিকারকে নিষিদ্ধ করতে হবে: শামীম পাটোয়ারী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত