Ajker Patrika

ফরিদপুর–মাগুরা রেল প্রকল্প: মেয়াদ প্রায় শেষ, জমি অধিগ্রহণই হয়নি

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
ফরিদপুর–মাগুরা রেল প্রকল্প: মেয়াদ প্রায় শেষ, জমি অধিগ্রহণই হয়নি

ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরার গড়াই সেতু দিয়ে ঠাকুরবাড়ী পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৮ সালে। ৬ বছর কেটে গেলেও প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। অথচ এখনো ৯৫ একর জমি অধিগ্রহণের শতকোটি টাকা পড়ে রয়েছে জেলা প্রশাসনে।

কয়েকবার জেলা প্রশাসক পরিবর্তন হওয়ায় জমি অধিগ্রহণে ধীরগতি বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। আবার গত আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজও প্রায় বন্ধ। ফলে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে মাগুরাবাসীর প্রশ্ন, আদৌ কি ঢাকা-মাগুরা ট্রেন যোগাযোগ স্থাপন হবে?

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ১ হাজার ২০২ কোটি ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে মাগুরা রেললাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৯ মে। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে ধীরগতির কারণে এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ কয়েকবার পিছিয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। তাতেও কাজ শেষ হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। 

কেননা প্রকল্পের মোট জমির পরিমাণ ১০৭ একর। অথচ গত ৬ বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসল কনস্ট্রাকশন মাত্র ১২ একর জমি বুঝে পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাবিল আহমেদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসল কনস্ট্রাকশন। সরকার পরিবর্তনের পর তাঁদের কাজ অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে।

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, তাঁরা এ রকম প্রকল্প করে এমন ভোগান্তিতে আর পড়েননি। বিশেষ করে ৬ বছরে মাত্র ৮ শতাংশ জমি বুঝে পাওয়ায় ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। তাঁর দাবি, ‘এখন কাজের যে অবস্থা তাতে তাঁরা প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে আছেন। আবার কাজটি তাঁরা বন্ধ করে দিলে ক্ষতি হবে আরও ১৫০ কোটি টাকা। লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে এ কাজ আমাদের ক্ষতি দিয়েই শেষ করতে হবে।’ তবে কবে শেষ হবে, তা বলা মুশকিল বলে তাঁর মত।

সরকার পরিবর্তনের পর কাজ বন্ধ কি না জানতে চাইলে আমজাদ হোসেন বলেন, তাঁদের মালিকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই; কিন্তু কাজ আপাতত কম। কারণ জমি না পেলে কাজ হবে কী করে?

জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানা যায়, রেলের জন্য ওয়াপদা মাঝাইল থেকে ঠাকুরবাড়ী পর্যন্ত ৯৬৭ দাগে মোট ১০৭ একর জমি বরাদ্দ রয়েছে। চলতি বছর পর্যন্ত জমি বাবদ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ২০৪টি চেকের মাধ্যমে ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এখনো জমি অধিগ্রহণের শতকোটি টাকা পড়ে রয়েছে জেলা প্রশাসনে।

তবে রেল প্রকল্পের জন্য নিজেদের জমি দিতে চাইলেও মাগুরা জেলা প্রশাসন নিতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ রিফাত হোসেন নামের এক মালিকের। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার জমির বিষয়ে কথা বলেছি জেলা প্রশাসনে। কিন্তু সেখানে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কর্মকর্তাদের বদলি ও ধীরগতির কারণে বছর বছর রেলের জন্য জমি ফেলে রাখতে হয়েছে আমাদের।’

জমি অধিগ্রহণে প্রশাসনের ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে মাগুরার অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ম. মাহবুবুল হক বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। সব যেন ঠিকমতো হয়, সে চেষ্টা করছি। তবে সময় লাগবে, কারণ অনেক জায়গায় এখনো জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। মোট প্রাক্কলনের পরিমাণ ১১৫ কোটি ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪২৬ টাকা। ফলে ভূমি যাচাই-বাছাই করতে সময় লাগছে।’

প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) মামুনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছর পর্যন্ত হলেও তা নির্ভর করছে ভূমি পাওয়ার ওপর। মাগুরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করে যাচ্ছি। মাগুরা প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করেছি, যেন আগামী ৬ মাসের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে আরও গতিশীলতা আমরা দেখতে পাই। জেলা প্রশাসকসহ কিছু কর্মকর্তা আবার নতুন। ফলে সময়ের সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে আমি আশা করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ