Ajker Patrika

১৩০ বছরের মিষ্টির দোকান

শেখ আবু হাসান, খুলনা
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২১, ০৮: ৪০
১৩০ বছরের মিষ্টির দোকান

গোল গোল রসগোল্লা আর ছোট ছোট পটোল আকৃতির বাদামি রঙের পানতোয়া। এর সঙ্গে রয়েছে খেজুর গুড়ের সন্দেশও। এই তিন পদের মিষ্টিতে থাকা অদৃশ্য এক জাদু সবাইকে টেনে নিয়ে যায় খুলনার ইন্দ্রমোহন সুইটসে। সম্মোহিত করে মিষ্টিপাগল মানুষদের। দেশের মানুষের তৃপ্তি মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রাষ্ট্রদূতদের কাছেও অন্যতম এক পছন্দের নাম ইন্দ্রমোহন সুইটসের মিষ্টি।

মানিকগঞ্জের ধূলসরা গ্রামের ইন্দ্রমোহন দে। ছেলেবেলায় ভাগ্যান্বেষণে খুলনায় আসেন। ১৮৯০ সালে শহরের বড় বাজার এলাকার হেলাতলা মোড়ে ইন্দ্রমোহন সুইটস নাম নিয়ে মিষ্টান্নের দোকান প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১০ নম্বর হেলাতলার একটি দোতলা বাড়ির নিচতলার একটি ঘর কিনে ছোট পরিসরে নিজেই মিষ্টি বানিয়ে দোকানটি চালু করেছিলেন। পরে ঝালকাঠির নলছিটির সুরেন দাশ নামের একটি ছেলেকে কর্মচারী হিসেবে রাখেন। ছেলেটি বিশ্বস্ত হয়ে উঠলে তাকেও মিষ্টি বানানো শেখান ইন্দ্রমোহন।

সুরেন দাশ ৭০ বছর ধরে এই দোকানে কাজ করছেন। ধীরে ধীরে তাঁর বানানো রসগোল্লা, পানতোয়া ও গুড়ের সন্দেশের সুখ্যাতির কথা বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মহলে ছড়িয়ে পড়ে। শহরের রাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে আরম্ভ করে সব মহলে ইন্দ্রমোহনের মিষ্টির স্বাদ ও মানের কথা ছড়িয়ে পড়ে। খুব দ্রুতই এই মিষ্টি খুলনায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রতিদিন দোকানে মিষ্টির জন্য ভিড়ও বাড়তে থাকে। এরপর ইন্দ্রমোহনকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

রকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তিপর্যায়ে যেকোনো উৎসব, পার্বণ বা অনুষ্ঠানে সবার অন্যতম পছন্দ ইন্দ্রমোহনের রসগোল্লা, পানতোয়া, চমচম আর খেজুর গুড়ের সন্দেশ। মিষ্টির তীব্র আকর্ষণে মানুষ বারবার ছুটে যান ইন্দ্রমোহন সুইটসে। এই মিষ্টি এতটাই জনপ্রিয় যে, ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার খুলনা এসে তাঁর স্ত্রী ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে হেলাতলা মোড়ের এক প্রকারের ঘিঞ্জি পরিবেশে ইন্দ্রমোহন সুইটসে যান। তাঁরা দোকানের বেঞ্চে বসে ইন্দ্রমোহনের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্টিলের থালায় হাত দিয়ে তৃপ্তিসহকারে রসগোল্লা ও পানতোয়া খান। সঙ্গে করে মিষ্টি নিয়েও যান।

মানুষের মুখে মুখে প্রচারে দিনে দিনে এই মিষ্টির জনপ্রিয়তা ছড়িয়েছে দেশে-বিদেশে। খুব দ্রুতই মিষ্টির জগতে ইন্দ্রমোহন একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রায় ১৩০ বছর ধরে ইন্দ্রমোহনের মিষ্টি স্বাদ ও মান বজায় রেখে মিষ্টির রাজ্যে রাজত্ব করে চলেছে।

বর্তমানে দোকানের দেখভালকারী ও কারিগর কমল চন্দ্র শীল জানান, নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু খুলনায় এসে ইন্দ্রমোহনের মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন। সম্প্রতি বাড়ির বর্তমান মালিকের সঙ্গে দোকানঘর নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার কারণে মিষ্টির দোকান উচ্ছেদ করা হয়। ২০১৯ সালের ৩০ জুন আদালতের আদেশে দোকানটি ছেড়ে দিতে হয়। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই জনপ্রিয় মিষ্টান্নের দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়।

খুলনার সচেতন মহল এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। পরবর্তী সময়ে খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজী আমিনুল হক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মিলে আগের দোকানের একটু কাছাকাছি হেলাতলা মসজিদের পেছনে ১৭ নম্বর হেলাতলায় একটি দোকানঘর বরাদ্দ দেয়। বর্তমানে সেখানেই মিষ্টির দোকানটি পুনরায় চালু করা হয়েছে। আগের মতোই দেখা যাচ্ছে ভিড়। ফিরে এসেছে সেই জনপ্রিয়তাও। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত