Ajker Patrika

দৌলতপুরের রাশেদ হত্যা মামলায় পির সেজে ভক্তের আত্মসমর্পণ

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
দৌলতপুরের রাশেদ হত্যা মামলায় পির সেজে ভক্তের আত্মসমর্পণ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে তাছেরের দরবারে (এলাকায় প্রচলিত নাম) আলোচিত একটি হত্যা মামলায় আসল আসামির বদলে নকল আসামির আদালতে আত্মসমর্পণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় ফের সমালোচনার মুখে সৈয়দ তাছেরের দরবারের নানা কাণ্ড। এরই মধ্যে মামলার সাক্ষীরা আদালতে আসামিকে ভুয়া বলে শনাক্ত করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গতকাল সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দৌলতপুর, কুষ্টিয়ার আমলী আদালতে আত্মসমর্পণকারী ওই ব্যক্তির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন জানান। পরে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানা গেছে। আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি বছর ৬ জুন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার চরদিয়ার কল্যাণপুর দরবার শরিফে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (২৮) নামে এক ভক্তকে দরবার শরিফের লোকজন ওই দরবার শরিফের বাগানের মধ্যে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। নিহত রাশেদ দৌলতপুর উপজেলার হরিণগাছী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। রাশেদ ওই দরবার শরিফের মুরিদ ছিলেন এবং ঘটনার ৪-৫ মাস আগে থেকেই ওই দরবার শরিফে বসবাস করতেন।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় স্থানীয় চরদিয়াড় দরবার শরিফের পির হিসাবে পরিচিত সৈয়দ তাছের আহমেদকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দৌলতপুর থানা-পুলিশ ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মামলার অন্যতম আসামি চরদিয়াড় দরবার শরিফের কথিত পির সৈয়দ তাছের আহমেদসহ তাঁর ভক্ত অনুসারীরা আত্মগোপন করেন। তাছের আহমেদ দৌলতপুর উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের মৃত আজের প্রামাণিকের ছেলে। 

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি দৌলতপুর থানা-পুলিশের কাছ থেকে সিআইডি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকায় গত ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার আদালতে ওই দরবার শরিফের মুরিদকে কথিত পির সৈয়দ তাছের আহমেদ সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয়। সম্প্রতি আসল তাছেরের পরিবর্তে নকল তাছের সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করানোর বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। আদালত পাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়। 

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র পরিদর্শক মো. সেলিম বলেন, মামলার সাক্ষীরা আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি চরদিয়াড় দরবার শরিফের কথিত পির সৈয়দ তাছের আহমেদ নন, তাছেরের বদলে অন্য কাউকে আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হয়েছে এমন দাবি করেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দৌলতপুর, কুষ্টিয়া আমলী আদালতে আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। ওই দিনে কয়েক জন সাক্ষী আদালতের সামনে উক্ত আসামিকে নকল তাছের বলে দাবি করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাথমিকভাবে যে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে আদালতে যিনি তাছের হিসেবে আত্মসমর্পণ করেছেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে তাছের নন। রিমান্ডে এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। 

মামলার সাক্ষী রেজা জানান, সোমবার তাছের নামের ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করা হলে তাঁরা (সাক্ষীরা) মুখ দেখে তিনি প্রকৃত তাছের নন বলে আদালতকে জানান। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তি ওই দরবার শরিফেই একজন ভক্ত। 

এ বিষয়ে মামলার বাদী নিহত রাশেদের বাবা আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার সময় আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমি সোমবার দুপুরের পরে আদালতে গিয়েছিলাম। আদালতে আত্মসমর্পণ করা ওই ব্যক্তি মামলার প্রধান আসামি তাছের পির না। আমি নিজে আসামি দেখে শনাক্ত করেছি। 

এদিকে আদালতের একটি সূত্র জানায়, আদালতের কাছে আত্মসমর্পণের সময় তাছেরের একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সাক্ষীরা জানান, তাছেরের ছবির জায়গায় কম্পিউটারের সাহায্যে ওই ব্যক্তির ছবি বসিয়ে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। 

জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়া জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদালতের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদের আসল জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করার কথা বলা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নানা রকম বিভ্রান্তিকর ঘটনা ঘটিয়ে আসছে আসামিরা। ওই দরবারটির নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিতর্ক রয়েছে আগে থেকেই। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

আইসিএক্স বাদ দিলে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত