Ajker Patrika

দুই মাস ধরে চাল বন্ধ, বিপাকে সাড়ে ৬ হাজার উপকারভোগী

আনোয়ার হোসেন (মনিরামপুর) যশোর 
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ১৬: ১৯
দুই মাস ধরে চাল বন্ধ, বিপাকে সাড়ে ৬ হাজার উপকারভোগী

অনলাইন তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় যশোরের মনিরামপুরে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের চাল পাননি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকাভুক্ত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার উপকারভোগী। চলতি মাসেও তাঁদের চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা খাদ্য দপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারণে দুস্থ এসব কার্ডধারীরা চাল পাননি। 

তবে এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহার দাবি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরোধের কারণে সঠিক সময়ে তালিকা প্রস্তুতে সমস্যা হয়েছে। 

উপজেলা খাদ্য দপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২৩ হাজার ৪১৯ জন উপকারভোগী রয়েছেন। খাদ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভুয়া, মৃত, সচ্ছল ও প্রবাসী কার্ডধারীদের নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম যুক্ত করতে গত এপ্রিলে একটি নির্দেশনা আসে। এরপর সভা করে চেয়ারম্যানদের তালিকা সংশোধনের জন্য বলা হয়। সভায় মোট তালিকার ১০ শতাংশ সংশোধনের জন্য বলা হলেও কোনো কোনো ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অর্ধেক নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম ঢুকিয়ে তালিকা জমা দিয়েছেন, যা উপজেলা কমিটির অনুমোদন পায়নি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকজন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকৃত দুস্থদের নাম বাদ দিয়ে নিজের অনুসারীদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। কিছু ইউপিতে আবার সদস্যদের বাদ রেখে চেয়ারম্যান নিজের মতো অনুসারীদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। এসব নিয়ে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। ফলে অনলাইন তালিকা প্রস্তুতে দেরি হয়েছে।

মামুদকাটি গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি নৈশপ্রহরীর কাজ করি। আমার কার্ড রয়েছে। গত ২ মাস আমি চাল পাইনি। পরিবেশক বলেছেন তালিকায় আমার নাম নেই।’

খেদাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জিন্নাহ বলেন, ‘কিছু কার্ড বাদ পড়েছে। তা সংশোধন করে গত সপ্তাহে উপজেলায় জমা দিয়েছি। খলিলুর রহমান আঙুলের ছাপ দিতে পরিষদে আসেননি। এ জন্য তাঁর নাম বাদ পড়তে পারে। তিনি যোগ্য হলে তাঁকে অন্যভাবে সহায়তা করা হবে।’ 

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন, ভাতাভোগীদের যে তালিকা আছে

তা উদ্যোক্তাদের দিয়ে যাচাই করে চেয়ারম্যানরা আমাদের কাছে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু অনেক চেয়ারম্যান নিয়মনীতি না মেনে ইচ্ছেমতো তালিকা সংশোধন করে জমা দিয়েছেন। যা সভায় অনুমোদন পায়নি। পরে আবার তাঁদের কাছে সংশোধনী তালিকা চাওয়া হয়েছে। সে তালিকা সময়মতো না পাওয়ায় অনেকে চাল পাননি। 

ইন্দ্রোজিৎ সাহা আরও বলেন, ‘আমরা সেপ্টেম্বরে ১৬ হাজার ১৯ জনকে এবং অক্টোবর ১৬ হাজার ৯৪৯ জনকে চাল দিয়েছি। নানা কারণে ৬ হাজার ৪৭০টি কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এ কার্ডের পরিবর্তে নতুন নাম দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।’ 

 ‘আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত ছয়টি ইউনিয়নের সংশোধিত তালিকা পেয়েছি। বাকিদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করে চলতি মাসে শতভাগ কার্ডধারীকে চাল দিতে পারব বলে আশা করছি।’ যুক্ত করেন ইন্দ্রোজিৎ সাহা। 

এদিকে তালিকা সংশোধন জটিলতায় উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নে ১ হাজার উপকারভোগীর কেউ সেপ্টেম্বর মাসের চাল পাননি। কিছু সংশোধন করে ৫৯৬ জনকে অক্টোবরের চাল দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪০৪ জনের নাম পরিবর্তন নিয়ে চেয়ারম্যান ও পাঁচ ইউপি সদস্যের বিরোধ এখনো মেটেনি। 

এ বিষয়ে কাশিমনগর ইউপির চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা সংশোধন নিয়ে আমাকে ঢাকা পর্যন্ত যেতে হয়েছে। আশা করি চূড়ান্ত তালিকা করে চলতি মাসে সবাইকে চাল দিতে পারব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত