Ajker Patrika

ভৈরব সেতু নির্মাণ: নকশা জটিলতা ও জমি বুঝে না পাওয়ায় কাজে ধীরগতি

  • সাড়ে চার বছরেও রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা জমি বুঝে পায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
  • ২০২৪ সালের ১৪ মে নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়
  • নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত জানাবে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল
খুলনা প্রতিনিধি
চলতি বছর ভৈরব সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। তিন মাস বন্ধ থাকার পর সেতুর শহরাংশের নির্মাণ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলতি বছর ভৈরব সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। তিন মাস বন্ধ থাকার পর সেতুর শহরাংশের নির্মাণ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির প্রাণের দাবি ছিল ভৈরব নদের ওপর সেতু নির্মাণ। খুলনাবাসীর আন্দোলনের মুখে ২০২১ সালে সেতু নির্মাণ শুরু করা হয়। এ প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। নকশা জটিলতা এবং রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা জমি বুঝে না পাওয়ায় অনেকটা থমকে রয়েছে কাজ। সে সঙ্গে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন খুলনাবাসী।

খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর খুলনা মহানগরী ও দিঘলিয়া উপজেলার মধ্যে প্রবাহিত ভৈরব নদের ওপর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (করিম গ্রুপ) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ২৪ মে।

কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পরও সেতুর শহরাংশে রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা ২ দশমিক ৫৮৬ একর জমি এখনো বুঝে পায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে সেতু নির্মাণ শুরুর তিন বছর পর ২০২৪ সালের ১৪ মে নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য প্রফেসর এ এফ এম সাইফুল আমিন সেতুর নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেন। তবে এই বিশেষজ্ঞ টিমের সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি।

সেতুর সাইট ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল হাসান আকাশ জানান, সেতুর রেলগেট অংশের ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১, ২, ৪, ৯-১২ নম্বর অর্থাৎ মোট ৭টি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ৮ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে, সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৪টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৩টির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হক বলেন, কাজের শুরুতে সেতু নির্মাণে অধিগ্রহণ করা জমি বুঝে না পাওয়ায় শুরু থেকেই কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং শ্রমিক সংকটের কারণেও কাজে ব্যাঘাত ঘটে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে—এমন প্রত্যাশা সেতু নির্মাণকাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ)। অন্যদিকে টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর সেতুর শহরাংশের নির্মাণকাজ আবারও শুরু হয়েছে।

সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানিমুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেতুর ১৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে। স্টিল সেতুর দৈর্ঘ্য ১০০ মিটারের পরিবর্তে ১৬০ এবং প্রশস্ত ৩ মিটার বৃদ্ধি করে নকশা পরিবর্তনের অনুমোদন বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের কাছ থেকে এখনো পাওয়া যায়নি। আশা করি, চলতি মাসেই (সেপ্টেম্বর) একটা রেজাল্ট পাব। রেলওয়ের জমি হস্তান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘খুলনাবাসীর ধারাবাহিক বঞ্চনার প্রতিফলন হলো ভৈরব সেতু। শুরুতে ভৈরব সেতু নিয়ে আমরা যে আশা দেখেছিলাম, ক্রমান্বয়ে সেটি নিরাশায় পরিণত হয়। তারপরও বলব, দ্রুত সময়ের মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে খুলনাসহ নড়াইল জেলার মানুষও বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।’

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহসভাপতি মিজানুর রহমান বাবু বলেন, ‘শুধু ভৈরব সেতু নয়, গল্লামারী সেতুর কাজও বন্ধ রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে খুলনার মেগা প্রজেক্টগুলো ছিল শেখ বাড়ির নিয়ন্ত্রণে। কাজেই তাদের অনুসারী এসব মেগা প্রজেক্টের ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগদান সারলেন এনসিপির হান্নান মাসউদ, কনে বাগছাসের নেত্রী

উচ্চদক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প

বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা আনতে যে ৮ পরামর্শ দিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

আবাসিক হোটেলে তিন বন্ধু, মিলল একজনের লাশ

দেড় বছরে পুলিশের যে ক্ষতি হয়েছে, ৫০ বছরেও পুনরুদ্ধার কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত