Ajker Patrika

নয় বছর ধরে পাখিদের খাবার দিচ্ছেন কোটচাঁদপুরের আলী শেখ

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি 
পাখিদের জন্য খাবার হাতে মোহাম্মদ আলী শেখ। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাখিদের জন্য খাবার হাতে মোহাম্মদ আলী শেখ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোরের আলো ফোটার আগেই বাজারের পুরোনো কলেজ হোস্টেলের সামনে শুরু হয় পাখিদের কিচিরমিচির। বিদ্যুতের তার, দোকানের ছাউনি কিংবা ভবনের টিনের চালে বসে থাকা শত শত শালিক যেন অপেক্ষায় থাকে একটি মানুষের জন্য। সেই মানুষটি কোটচাঁদপুরের মোহাম্মদ আলী শেখ। যিনি গত নয় বছর ধরে নিজের হোটেলের বেঁচে যাওয়া খাবার নিয়মিতভাবে দিয়ে আসছেন শহরের উড়ন্ত পাখিদের।

খাবার পেয়ে প্রতিদিন খেতে আসে পাখিগুলো। আর খাবার বিতরণ করে খুশি হোটেল ব্যবসায়ী ও। এভাবেই গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে সখ্য। যা চলে আসছে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে। পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে খাবার দেওয়া বলে জানালেন কোটচাঁদপুরের মমতা হোটেলের মালিক মোহাম্মদ আলী শেখ।

মোহাম্মদ আলী শেখ (৫৫) পেশায় একজন হোটেল ব্যবসায়ী। ২১ বছর ধরে তিনি এ পেশার সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে গত ৯ বছর ধরে তিনি প্রতিদিন পাখিদের খাবার দিচ্ছেন। ফলে প্রতিদিনই বহু পাখি খাবারের আশায় হোটেলের আশপাশে ভিড় করে। এতে খুশি হোটেল মালিকও। তিনি কোটচাঁদপুর পৌরসভার সলেমানপুর গ্রামের বাসিন্দা।

সকাল ৬টা ৩০ মিনিট। কোটচাঁদপুরের মেইন বাজার এলাকায় পুরোনো কলেজ হোস্টেলের সামনে মমতা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। সড়কে ঢুকতেই শোনা যাচ্ছিল পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। দেখা গেল, বিদ্যুতের তার ও পাশের টিনের ছাদে বসে আছে অসংখ্য শালিক পাখি। তারা খাবারের অপেক্ষায়। ঠিক তখনই হোটেল থেকে বেরিয়ে এলেন ৫০–৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তাঁর হাতে একটি ডেক ভর্তি খাবার।

তিনি ছড়িয়ে দিলেন সেই খাবার পাশের দোকানগুলোর টিনের ছাদে। মুহূর্তেই শত শত পাখি নেমে এসে খাবারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ডাকতে থাকে কিচিরমিচির শব্দে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সেই দৃশ্য উপভোগ করেন হোটেল মালিকও। এরপর তিনি ফিরে যান হোটেলের ভেতরে।

এ সময় কথা হয় প্রতিবেদকের। জানতে চান পাখিদের সঙ্গে এমন সখ্যর শুরু কবে থেকে? উত্তরে মোহাম্মদ আলী শেখ বলেন, ‘২১ বছর ধরে হোটেলের ব্যবসা করছি। এর আগে ভাইয়ের হোটেলের দেখভাল করতাম। ৯ বছর আগে থেকে পাখিদের খাবার দিচ্ছি। প্রথমে অল্প কয়েকটা পাখি আসত, এখন তা বেড়ে ৫–৬ শ’ হয়েছে।’

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি বলেন, ‘সারা দিন হোটেল চালিয়ে কিছু খাবার বেঁচে যায়। তা জমিয়ে রেখে পরদিন সকালে পাখিদের দিই। এতে দিনে প্রায় এক থেকে দেড় শ টাকা খরচ হয়। তবে সমস্যা হয় যেদিন হোটেল বন্ধ থাকে বা সব খাবার বিক্রি হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে পরোটা বানিয়ে দিই। আবার কখনো পাশের দোকান থেকে পাউরুটি কিনে এনে খাওয়াতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওদের ডাক শুনতে ভালো লাগে। কবে যে এমন সখ্য গড়ে উঠেছে, টের পাইনি। এখন এটা জীবনের অংশ হয়ে গেছে। সামনেও এমনভাবে খাবার দিয়ে যেতে চাই।’

আপনি না থাকলে পাখিদের খাবার দেয় কে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হোটেলের সবাই জানে পাখিদের খাবার দিতে হয়। আমি না থাকলেও তাদের বলে রাখি।’

মমতা হোটেলের কর্মচারী ফরিদ হোসেন বলেন, ‘আমি ১৬ বছর ধরে আলী ভাইয়ের হোটেলে কাজ করছি। গত ৯ বছর ধরে তিনি পাখিদের খাবার দেন। আগে পাখি কম আসলেও এখন অনেক বেড়ে গেছে। শীতকালে পাখির সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।’

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

কোটচাঁদপুর উপজেলার বন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জানতে পেরে একদিন পাখিগুলো দেখতে গিয়েছিলাম। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তিনি পাখিদের প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজটি করছেন। তবে কেউ যদি খারাপ উদ্দেশ্যে এমন কিছু করেন, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত