Ajker Patrika

‘ইঞ্জিনে প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল, আগুন বের হয়েছিল সাইলেন্সার থেকে’

আল-আমিন রাজু, ঝালকাঠি থেকে
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ২৩
‘ইঞ্জিনে প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল, আগুন বের হয়েছিল সাইলেন্সার থেকে’

রাজধানীর সদরঘাট থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এমভি অভিযান–১০ বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। যাত্রার শুরুর পর থেকেই যাত্রীরা একটি বিকট শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন। প্রথমে কেউ পাত্তা না দিলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। ইঞ্জিনের বিকট শব্দের বিষয়ে লঞ্চের কর্মীদের জানালেও তাঁরা তা আমলে নেননি বলে যাত্রীদের অভিযোগ। 

অভিযান–১০’এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লঞ্চে থাকা আহত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। 

বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবাচিম) চতুর্থ তলার চক্ষু বিভাগের ৪০৩ ওয়ার্ডে এ ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার মো. জহিরুল। চলতি মাসের ২০ তারিখ অভিযান–১০ এই বরগুনা থেকে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার একই লঞ্চে বরগুনা ফেরার জন্য উঠে ছিলেন। জহিরুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, বৃহস্পতিবার সদরঘাট এসে লঞ্চে উঠে দেখি কোথাও বসার জায়গা নেই। পরে লঞ্চের তৃতীয় তলার একটি স্টাফ কেবিনে ৮০০ টাকা দিয়ে উঠি। আমি রাত ১২টার পরে ঘুমিয়ে যাই। ঘুমানোর আগে বেশ কয়েকবার ছাদে গেছি। তখন একটু পর পর ইঞ্জিন থেকে একটা প্রচণ্ড শব্দ বের হতে শুনেছি। শব্দটার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনের সাইলেন্সার দিয়ে আগুন বের হতে দেখেছি। প্রথমে আমরা কয়েকজন ভয় পেয়ে যাই। পরে সবাই বলাবলি করছিল এটা তেমন কিছু না। মানুষের চিল্লাচিল্লি, আহাজারি শুনে আমার হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখি রুমে প্রচুর ধোঁয়া। দরজা খুলে দেখি বাইরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। অনেক মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে। নিচে পা রাখতেই আমার পা পুড়ে যায়। এত বড় ঘটনা কিন্তু লঞ্চের স্টাফরা বলছিল, কিছু হয়নি, আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। পরে আমি পায়ের নিচের গরম সহ্য করতে না পেরে নদীতে লাফ দেই। 

জহিরুল আরও বলেন, আগেরবার যাওয়ার সময়ও ইঞ্জিন থেকে একই শব্দ শুনেছি। তবে সেদিন শব্দটা একটু কম ছিল। 

ইঞ্জিনে সমস্যার কথা জেনেও মালিক লঞ্চ চালিয়ে যেতে বলেছিলেনলঞ্চের ইঞ্জিন থেকে বের হওয়া শব্দ শুনেছেন বরগুনার সদরের রাশেদ। তাঁর মা ও ভাইয়ের মেয়েসহ সাতজন উঠেছিলেন। রাশেদসহ তিনজন বেঁচে ফিরলেও নিখোঁজ আছেন ৪ জন। 

ছোট ভাই ও মাকে নিয়ে লঞ্চে ওঠেন পাথরঘাটার ছোনবুনিয়ার মনোতোষ। দুই ভাই আহত অবস্থায় নদীতে লাফ দিয়ে পাড়ে এসে উদ্ধার হলেও লঞ্চে আটকা পড়েন মা মিঠু রানী। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারের পর একই হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন মা মিঠু রানি। মনোতোষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকা গিয়েছিলাম। সাত দিন ঢাকা থাকার পর সদরঘাট থেকে লঞ্চের দুই তলায় সিট নেই। লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছাড়ার পরে আমি তিনবার ছাদে গিয়েছি। প্রতিবারই বিকট শব্দ শুনেছি সেই সঙ্গে ইঞ্জিনের সাইলেন্সার থেকে কালো ধোয়া আর আগুন বের হতে দেখেছি। শেষ বার যখন গেছি তখন শব্দ শুনে ভয় পেয়ে যাই। পরে ঘুমিয়ে পড়ি। রাতে হঠাৎ মানুষের চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভেঙে যায়। মানুষের ঠেলাঠেলিতে মাকে হারিয়ে ফেলি। ছোট ভাই নিলয় আগুন আগুনের গরম সহ্য করতে না পেরে নদীতে লাফ দেয়। ও নদীতে লাফ দেওয়ার পরে আমি মাকে খোঁজার চেষ্টা করি। কিছু সময় খোঁজার পরে আগুনের গরমে টিকতে না পেরে আমিও লাফ দেই। পরে নদী সাঁতরে কুলে আসি। 

ডিসেম্বরের ১ তারিখে অভিযান–১০ ’এ লস্কর হিসেবে কাজ নেন ভোলা জেলার চরফ্যাশনের সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, আমি রাত আড়াইটার দিকে কাজ শেষ করে স্টাফ কেবিনে ঘুমাই। হঠাৎ মানুষের আহাজারি শুনে ঘুম ভাঙে। রুম থেকে বের হয়ে দেখি লঞ্চে আগুন। বিষয়টা বোঝার জন্য সামনে পা বাড়াই গরমের কারণে পা লেগে যায়, হাত বাড়াই হাত লেগে যায়। পরে জীবন বাঁচাতে লাফ দেই। হাত-পায়ের চামড়া পুড়ে গেছে। কোনো মতে তীরে আসতে পারি। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে। 

অভিযান–১০ ’র মালিক লঞ্চেই ছিল জানিয়ে সেলিম বলেন, আমি পরিষ্কারের কাজ করি। লঞ্চে একটু পর পর শব্দ হয়। লঞ্চে মালিক ছিল। তিনিও লঞ্চ চালাতে বলেছেন। 

যাত্রীদের অভিযোগ ইঞ্জিনের সমস্যা থাকার পরেও মালিকের সিদ্ধান্তে লঞ্চ চালাতে বাধ্য হন কর্মীরা। এ বিষয় জানতে চাইলে সেলিম বলেন, আমিও এমনটা শুনেছি। কিন্তু মালিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে কি না সেটা সরাসরি শুনি নাই। লঞ্চের অন্য কর্মীরা বলেছেন। 

লঞ্চের ইঞ্জিনের বিকট শব্দ শোনেন মো. ইমরান ও মাইনদ্দিন। হাসপাতালে দুজনেই পাশাপাশি বেডে শুয়ে আছেন। তাঁরা জানালেন, লঞ্চের ইঞ্জিনের বিকট শব্দ শোনার পরে লঞ্চের কর্মীদের জানানো হয়। কিন্তু তাঁরা অভিযোগ আমলে নেননি। 

ইমরান বলেন, লঞ্চের ছাদে অনেকেই ইঞ্জিনের বিকট শব্দ শুনেছেন। এমনকি আমি যখন ছাদে ছিলাম তখন ইঞ্জিনের মিস্ত্রি ছাদে এসে দেখেছেন। তাঁরা বলেছেন চলুক সমস্যা নেই। 

শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের বিশেষ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৪ জন। তাঁদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ, ৭ জন নারী ও ৫ জন শিশু রয়েছেন। এ ছাড়া এক নারীসহ দুজন আহত রোগী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাবনায় ট্রাকচাপায় দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩

পাবনা প্রতিনিধি
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎পাবনায় বাঁশবোঝাই ট্রাকের চাপায় দুই স্কুলশিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছে। ‎রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ‎নিহত ব্যক্তিরা হলো পাবনা কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া আক্তার, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু তোহা ও ভ্যানের চালক আকরাম হোসেন।

‎মাধপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ‎

‎‎জানা গেছে, সকাল ৭টার দিকে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী ভ্যানগাড়িতে করে পাবনার জালালপুর এলাকার ক্যাডেট কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে পাবনাগামী একটি বাঁশবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ছাত্র-ছাত্রী ও ভ্যানচালক নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে আরও দুজন পথচারী। স্থানীয় বাসিন্দারা মাধপুর হাইওয়ে থানা-পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যানের ড্রাইভারসহ তিনজন নিহত ও চায়ের দোকানে থাকা দুই ব্যক্তি আহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরাজদিখানে ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করল ৯ বছরের শিশু আরফান

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত

অভূতপূর্ব এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। মাত্র ১৪৩ দিনে পুরো পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সে। আরফানের এই অসাধারণ সাফল্যে পরিবার, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দ ও গর্বের আবহ বিরাজ করছে।

আরফান বর্তমানে ইসলামপুর কামিল কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। এর আগে সে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেছে। অল্প বয়সে এমন সাফল্য অর্জন করে স্থানীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

আরফান কেয়াইন ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া গ্রামের বিশিষ্ট আলেম ও শিক্ষক হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মাসরুরের (লাভু হুজুর) ছেলে। লাভু হুজুর বর্তমানে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এবং কুচিয়ামোড়া মিত্রপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইবোনের মধ্যে আরফান সবার ছোট। মাত্র ১৪৩ দিনে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করে সে তার পরিবারসহ পুরো এলাকাকে গর্বিত করেছে।

ইসলামপুর কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ফখরুদ্দীন রাজি বলেন, ‘আরফান আমাদের মাদ্রাসার গর্ব। ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করা আমাদের মাদ্রাসার ইতিহাসে এই প্রথম। এটি এক বিরল দৃষ্টান্ত। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাবিতে ঘাস কাটার মেশিন ভেঙে যুবকের মাথায় ঢুকল ব্লেড

জাবি প্রতিনিধি 
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ঘাস কাটার যন্ত্র (মেশিন) ভেঙে ব্লেড ছিটকে মাথায় ঢুকে সুমন মিয়া (২৬) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা এবং জাবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে বরাদ্দ স্টলে কাঁকড়া ফ্রাই বিক্রি করতেন।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার পরপরই তাঁকে প্রথমে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৩ অক্টোবর থেকে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। শনিবার ছিল খেলার শেষ দিন। টুর্নামেন্টে ক্লাবের সভাপতি আরশাদ হাবিব বিশালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক বন্ধু একটি স্টল বরাদ্দ নেন, যেখানে সুমন মিয়া ও জাবির এক হোটেল কর্মচারী কাজ করতেন।

এদিকে বিশালের অনুরোধে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠ প্রস্তুতের কাজ করতেন শারীরিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারী আবুল হোসেন। গতকাল শেষ দিন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে এসে মাঠ প্রস্তুতের কাজ শেষে হাতে সময় থাকায় মেশিন দিয়ে ঘাস কাটা শুরু করেন তিনি। ঘাস কাটার সময় মেশিনের ব্লেড মাটিতে থাকা একটি ইটে লেগে ভেঙে যায়। ব্লেডের সেই অংশ ছিটকে গিয়ে পাশের স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা সুমন মিয়ার মাথায় ঢোকে।

সুমন মিয়ার পাশের স্টলে পিঠার দোকান ছিল নাদিয়া মীম নামের সিটি ইউনিভার্সিটির সাবেক এক শিক্ষার্থীর। নাদিয়া বলেন, সুমন স্টলে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্লেড ছিটকে এসে লাগার সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়ে যান। প্রথমে ভয়ে কেউ তাকে উঠায়নি। পরে বিশাল এসে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে উঠিয়ে দেন।

কর্মচারী আবুল হোসেন বলেন, ‘হাতে একটু সময় থাকায় ঘাস কাটছিলাম। মেশিনে ইট লেগে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটবে, এটা ভাবতে পারছি না।’

শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নাসরিন বেগম বলেন, ‘আজ ছুটির দিন থাকায় আমি অফিসে ছিলাম না। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও ছুটিতে ছিল। তবে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট চলমান থাকায় তিনি সেখানে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত আহত ব্যক্তিকে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। রাত ১টার দিকে তার অপারেশন শুরু হয়।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহত সুমনের মাথায় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। ৭২ ঘণ্টা অবজারভেশনে থাকবেন তিনি। নিবিড় পরিচর্যার পরামর্শ থাকলেও এখন পর্যন্ত তার ব্যবস্থা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি টেকনাফের বসতবাড়ি ও দোকানে, নারী আহত

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও ছিদ্র হয়ে যাওয়া টেকনাফের একটি ঘরের বেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও ছিদ্র হয়ে যাওয়া টেকনাফের একটি ঘরের বেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের জেরে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় এসে পড়েছে। এই ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তেচ্ছি ব্রিজ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিতে একটি বসতবাড়ি ও একটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আহত নারীর নাম ছেনুয়ারা (২৭)। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলের দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভয়াবহ গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। কিছু সময় পর ওপার থেকে ছোড়া দুটি গুলি বাংলাদেশ সীমান্তের তেচ্ছি ব্রিজ এলাকার একটি বসতবাড়ি ও কম্পিউটারের দোকানে এসে লাগে। এতে ঘরের টিন ও দেয়াল ছিদ্র হয়ে যায়।

ঘটনার পর সীমান্ত এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় অনেক পরিবার শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, ‘মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া গুলি এপারে এসে পড়ায় একজন নারী আহত হয়েছেন। সীমান্তের মানুষ এখন চরম আতঙ্কে রয়েছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

নুর আহমেদ আনোয়ারী আরও বলেন, যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে সীমান্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত