Ajker Patrika

শিক্ষার্থী সংকট সরকারি স্কুলে

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
একই কক্ষে পাশাপাশি দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস। সম্প্রতি গাইবান্ধা শহরের কেএন রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একই কক্ষে পাশাপাশি দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস। সম্প্রতি গাইবান্ধা শহরের কেএন রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধা শহরের ভিএইড সড়কে অবস্থিত কেএন রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৬৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টির আশপাশে ঘনবসতি। সে হিসেবে শ্রেণিকক্ষগুলো শিক্ষার্থী ঠাসা থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। শিশুশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এ বিদ্যালয়ে।

শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা হলো শিশুশ্রেণিতে ১১, প্রথম শ্রেণিতে ৭, দ্বিতীয়তে ৪, তৃতীয়তে ৫, চতুর্থে ৪ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৫ জন। অথচ স্কুলটিতে ৬ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী আছেন। শিক্ষার্থী প্রায় শূন্য হয়ে গেলেও শিক্ষক সংকট নেই। তবে শিক্ষকেরা এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি নন। তাঁদের ভাষ্য, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অবগত আছে, এ বিষয়ে শিক্ষকদের কিছু করার নেই।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি আছে ৩ হাজার ৭০৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী ২ হাজার ৫ শ। তার মধ্যে গোটাছয়েক স্কুল ছাড়া বাকিগুলোতে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। তবে পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন।

অন্যদিকে শহরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিপরীত চিত্র। ১২টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। উপস্থিতির হার ৯৮ শতাংশ। তার মধ্যে শাহ আহম্মেদ উদ্দিন শিশুনিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় ২ হাজার ১০০। জিইউকে রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিশুশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০০ শিক্ষার্থী। আর এসকেএস স্কুল অ্যান্ড কলেজে একই পর্যায়ে শিক্ষার্থী ৫২৬ জন।

সম্প্রতি সরেজমিনে কেএন রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির পর্যাপ্ত অবকাঠামো আছে। অফিসকক্ষসহ মোট ৭টি কক্ষ। এর মধ্যে ৬টি শ্রেণিকক্ষ। তারপরও দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একই কক্ষে পাশাপাশি বসিয়ে ক্লাস নিচ্ছিলেন দুই শিক্ষক। অনিম বেগম পড়াচ্ছেন দ্বিতীয় শ্রেণির গণিত, আর রাজিয়া সুলতানা পড়াচ্ছেন তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি। জানতে চাইলে শিক্ষকেরা বলেন, ‘ক্লাসে শিক্ষার্থী একেবারে কম, তাই দুজন মিলে পাশাপাশি ক্লাস নিচ্ছি।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, ৬৩ বছর ধরে বিদ্যালয়টি কখনো ভালো ফলাফল করতে পারেনি। অথচ শিক্ষকেরা কর্তাব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করে ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে চাকরি করছেন। স্থানীয় হুমায়ুন সরকার বলেন, ‘অনিয়মের পাশাপাশি পড়াশোনার পরিবেশও নেই। তাই কেউ ভর্তি করে না। শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা সব জেনেও চুপ।’ স্থানীয়রা বলছেন, তাঁরা পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন; কিন্তু ফল মেলেনি। শিক্ষার্থী না পাওয়ায় তাঁরাও হতাশ।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. ওয়াহিদা শিরিন বলেন, ‘বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন। শিক্ষার্থী বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’ একই কক্ষে দুই বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে অসুস্থতার কথা বলে তিনি এড়িয়ে যান।

একইভাবে পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ২০৩ শিক্ষার্থী। তার মধ্যে নিয়মিত ক্লাস করে ১৬০ জন। উত্তরপাড়া ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ১৬০, নিয়মিত ১২০ জন। এভাবে শহরের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই অবস্থা। পর্যাপ্ত শিক্ষক আছেন; কিন্তু শিক্ষার্থী নেই।

অভিভাবকেরা বলছেন, তাঁরা সরকারি বিদ্যালয়ের চেয়ে সন্তানের ভর্তিতে বেশি ঝুঁকছেন কিন্ডারগার্টেন ও এনজিও পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, প্রচার-প্রচারণা ও নামের কারণে অভিভাবকেরা সেখানে সন্তান ভর্তি করছেন।

আসাদুজ্জামান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরে এল নাজমা শাকিল বলেন, ‘শিক্ষার্থী না পাওয়া আমাদের ব্যর্থতা। অভিভাবকদের বোঝাতে পারিনি যে, সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও ভালো ফল করা যায়। অভিভাবকদের অনীহার কারণে সরকারি বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে।’

অভিভাবক ঈসমাইল হোসেন বলেন, ‘সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান খারাপ। শিক্ষকেরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। তাই আমার মতো অনেক অভিভাবক সন্তানকে সরকারি স্কুলে পড়াতে চান না।’

জানতে চাইলে পলাশবাড়ী আদর্শ কলেজের অধ্যাপক ফেরদৌস আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থী ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারি বিদ্যালয়গুলোকে প্রমাণ করতে হবে, তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভালো ফল করতে পারে। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে অযথা সময় কাটান, এসব বন্ধ করতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লক্ষ্মণ কুমার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলে শিক্ষার্থী সংকট রয়েছে। জেলাসহ উপজেলা পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কম, সেখানে ভর্তির সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিক্ষোভ থেকে সহিংসতায় উত্তাল ভাঙ্গা, মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা

দাওয়াত না দেওয়ায় মাদ্রাসার সব খাবার খেয়ে গেলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা

উত্তাল ভাঙ্গা: থানাসহ চারটি সরকারি দপ্তরে হামলা-ভাঙচুর, পুলিশসহ আহত অনেকে

সন্তানের গলা কেটে লাশ বাবার হাতে তুলে দিলেন মা

কক্সবাজার, মাদারীপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিসি প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত