Ajker Patrika

নিজামের শক্তি ‘খলিফা’ ও ক্যাডার

  • অবৈধভাবে গড়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ
  • রয়েছে ৬টি সাততলা ও ১০টি একতলা বাড়ি এবং ২০০ বিঘা জমি
  • হাজারীর বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বালুমহাল, জমি দখলসহ সব
মো. সাহাব উদ্দিন, ফেনী
নিজাম উদ্দিন হাজারী। ছবি: সংগৃহীত
নিজাম উদ্দিন হাজারী। ছবি: সংগৃহীত

নিজাম হাজারী। ফেনীর রাজনীতিতে এক যুগের বেশি সময়ের দাপুটে চরিত্র। রাজনৈতিক প্রভাব আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে হয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। এসব সম্পদ করেছেন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বালুমহাল, জমি দখলসহ নানা উপায়ে। তবে রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ বলতে কাউকেই দাঁড়াতে দেননি; এমনকি নিজ দলের নেতাদেরও হত্যা করেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, একসময় ফেনীর ‘গডফাদার’খ্যাত জয়নাল হাজারীর হাত ধরে রাজনীতিতে এলেও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের মাধ্যমে উত্থান হয় নিজাম হাজারীর। ২০০১ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে জয়নাল হাজারী সাম্রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরতে চট্টগ্রাম থেকে ফেনীতে আসেন নিজাম হাজারী। তৈরি করেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। কোণঠাসা করে ফেনীতে ঢুকতে দেননি জয়নাল হাজারীকেও।

নিজাম হাজারী ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারির পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির মধ্য দিয়ে ফেনী পৌর মেয়র হন বলে অভিযোগ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। আর দলের নেতা-কর্মীরা জানান, ২০১২ সালে জেলা রাজনীতির অঘোষিত অভিভাবক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের হাত ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান নিজাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম সংসদ সদস্য হন তিনি। পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাত ধরে পরপর দুবার (২০১৮ ও ২০২৪) সংসদ সদস্য হন নিজাম।

হাজার কোটি টাকার সম্পদ

বিলাসবহুল বাগানবাড়ি, খামারবাড়ি ছাড়াও নিজাম হাজারীর অনেক জায়গাজমি ও বাড়ি রয়েছে মাস্টারপাড়ায়। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে,৬টি সাততলা এবং ১০টি একতলা বাড়ির পাশাপাশি ২০০ বিঘা জমি রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামে তাঁর নামে-বেনামে মার্কেট ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে শোনা যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাস্টারপাড়ার বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার দক্ষিণে অন্যদের প্রায় ৩৫০ শতাংশ জায়গা দখল করে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি গড়ে তোলেন নিজাম হাজারী। বাগানবাড়িতে ছিল হেলিপ্যাড, টেনিস কোর্ট, লেক, পুল, থিয়েটার, সুইমিংপুল। আঙিনায় সুসজ্জিত বাগানের গাছ ও ঘাস এবং বাসার আসবাব বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয় বলে প্রচার ছিল। এই বাগানবাড়ির বাজারমূল্য হিসাব করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা।

বিলাসবহুল বাগানবাড়ির উত্তর পাশে ৭৮ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন খামারবাড়ি। সেখানে একটি পুকুরের চারপাশে গরু, ছাগল, মহিষ ও মুরগির খামার। খামারবাড়িতে প্রবেশের দক্ষিণ পাশে একটি ঘরে লেখা রয়েছে ‘তালতলা বাগান বাড়ী’। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হাজার কোটি টাকার বিলাসবহুল সাম্রাজ্য পুড়িয়ে দেয় ছাত্র-জনতা।

‘১০ খলিফা’ ও ক্যাডার বাহিনী

নিজাম হাজারী মূলত ফেনীর ৬ উপজেলায় অপরাধের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন বিশ্বস্ত ১০ সহযোগী ও নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে। স্থানীয়দের কাছে ওই ১০ সহযোগী নিজাম হাজারীর ‘১০ খলিফা’ নামে পরিচিত ছিল।

জেলার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই খলিফাদের কারণে সব সময় দলে কোণঠাসা হয়ে থাকতেন তাঁরা। ওই ১০ সহযোগীকে দিয়ে বালুমহাল দখল, টেন্ডার-বাণিজ্য, সম্পত্তি দখল, অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন নিজাম। এ ছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়নের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদেরও নির্যাতন; এমনকি হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে নিজামের বিরুদ্ধে।

দখল, টেন্ডারবাজি

একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য, গণপূর্ত, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন নিজাম হাজারীর খলিফারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, নিজাম হাজারী কাজের বরাদ্দভেদে ৭ শতাংশ, ১০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ধরে অগ্রিম টাকা নিতেন খলিফাদের মাধ্যমে।

স্থানীয় ও ঠিকাদার সূত্রে জানা গেছে, নিজাম হাজারীর বিশ্বস্ত ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল। তাঁর মাধ্যমে গত ১৫ বছর এলজিইডির সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। এ ছাড়া জেলার কোন দপ্তরের কাজ কে করবে, সেটিও তিনি শুসেনের মাধ্যমে বণ্টন করতেন।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীকে দিয়ে ফেনী পৌর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ডের রাজনীতি ও কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণ করতেন নিজাম হাজারী। জমি দখল, উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজির দায়িত্ব ছিল তাঁর চাচাতো ভাই হিসেবে পরিচিত জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান খোকন হাজারীর। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডারের ভাগ, পরিবহন ও শহরের চাঁদার টাকা সংগ্রহ করতেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ উল্যাহ ওরফে শরীফ হাজারী। আদায় করা টাকা প্রতিদিন শহরের ট্রাংক রোডের একটি ব্যাংকের শাখায় জমা করতেন শরিফ হাজারী। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্বাস্থ্য বিভাগের টেন্ডার-বাণিজ্য, দরপত্র দাখিলসহ কাজের নির্দিষ্ট কমিশনের টাকা আদায় করতেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জলিল আদর। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও গণপূর্ত বিভাগের সব ঠিকাদারি কাজ ভাগ-বাঁটোয়ারা ও চাঁদা তুলতেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শম্ভু বৈষ্ণব। আর সীমান্তে চোরাচালানি পণ্য, অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বৈধ-অবৈধ বালুমহাল দখলবাজির দায়িত্ব ছিল ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী ওরফে সোহেল চৌধুরীর।

সোনাগাজী উপজেলায় চরাঞ্চলের জমি দখল করে অবৈধভাবে মাছ চাষ করে নিজাম হাজারীকে ভাগ দেওয়া এবং উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার-বাণিজ্যের টাকা পৌঁছে দিতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন।

ফুলগাজী সীমান্তের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে চাঁদা নিজাম হাজারীর কাছে জমা দিতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার ওরফে লাল হারুন। দাগনভূঞা উপজেলায় টেন্ডার-বাণিজ্য, হাটবাজারের চাঁদা তুলে হাজারীর কাছে পৌঁছে দিতেন জেলা যুবলীগের সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন।

এ ছাড়া জেলা যুবলীগের সহসম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূইয়ার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য বিভাগের সব টেন্ডার-বাণিজ্য নিজাম হাজারী নিয়ন্ত্রণ করতেন। ফাজিলপুরে বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করতেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক রিপনের মাধ্যমে। জেলখানা থেকে সোনাগাজী উপজেলার বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামি রুহুল আমিনের মাধ্যমে।

জেলার মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতেন জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জিয়াউল আলম মিস্টার। জেলা পরিষদের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আফসারের মাধ্যমে। বিলোনিয়া সীমান্তের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল।

ফারুক হোসেন নামের এক ঠিকাদার জানান, সড়কের ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার একটি কাজের জন্য নিজাম হাজারীকে অগ্রিম ৪০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। সরকার পতনের পর এখন তিনিও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনী পৌরসভার ডাক্তার পাড়ার এক বাসিন্দা জানান, পৌরসভার মাধ্যমে চাঁদা নেওয়ার বুথ খুলেছিলেন নিজাম হাজারী।

শহরের রাজাজি দিঘির পাড়ে অবৈধভাবে প্রায় ৩০০ দোকান নির্মাণ করে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন পৌর যুবলীগ নেতা রুবেল হাজারী।

দলের নেতাদেরও খুন, নির্যাতন

নিজাম হাজারীর সিদ্ধান্তের বাইরে যাঁরা গেছেন, তাঁরাই হামলা, মামলাসহ নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নিজের প্রভাব বিস্তারে বাধা হওয়ায় ২০১৪ সালের ২০ মে প্রকাশ্যে ফেনী শহরের একাডেমি রোডে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

একরামের স্বজনেরা জানান, হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে নিজামের নাম উঠে এলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় সেই মামলা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়।

শুধু একরাম নন, ধর্মপুরের যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম, বালিগাঁওয়ের জয়নাল মেম্বার, দাগনভূঞা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফখরুল, ফেনী পৌর ছাত্রলীগ নেতা ইফতি, ফেনী পৌর এলাকায় শাহ জালাল নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাসহ দলের ১৪ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে নিজাম হাজারীর ক্যাডারদের বিরুদ্ধে।

নামকরণ

ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের ডোমরা ও সুন্দরপুর মৌজার প্রায় ২৫ একর জায়গা দখল করে নিজ নামে প্রস্তাবিত কারিগরি মহাবিদ্যালয়, স্ত্রী নুরজাহান বেগমের নামে মসজিদ ও প্রয়াত বাবা কমিশনার জয়নাল আবেদীন এবং মা দেল আফরোজ বেগমের নামে একটি নূরানী মাদরাসা কমপ্লেক্স স্থাপনের কাজ শুরু করেন নিজাম হাজারী।

এসব ভূমির মালিকদের অভিযোগ, ওই দখলে নেতৃত্ব দিয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, বালিগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিম মুহুরি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জিয়া উদ্দিন বাবলু।

১০ মামলার আসামি

গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালায় নিজাম হাজারীর ক্যাডার বাহিনী। এতে ৭ জন নিহত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, ‘নিজাম হাজারীকে বারবার বলেছি, মহিপালে আন্দোলনরতরা কিছুক্ষণ পর চলে যাবে। হামলা করার দরকার নেই। কথা অগ্রাহ্য করে শুসেনকে দায়িত্ব দেন নিজাম হাজারী।’

ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৮টি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা হয়েছে। তাঁকে ধরতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দৌড়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি

গাজীপুর (শ্রীপুর) প্রতিনিধি
পা পিছলে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে জালাল উদ্দীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
পা পিছলে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে জালাল উদ্দীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

গাজীপুরের শ্রীপুরে দৌড়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে যান কৃষক জালাল উদ্দীন। পুরো ট্রেন তাঁর ওপর দিয়ে গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। গতকাল রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে শ্রীপুর রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। নিহত জালাল উদ্দীন (৪৫) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরআগলী ইউনিয়নের নিধিরচর গ্রামের মো. তৈয়ব উদ্দিনের ছেলে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যুর আগে জালাল উদ্দীনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, শ্রীপুর রেলস্টেশনে দাঁড়ানো মোহনগঞ্জগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেন। এ সময় তিনি ট্রেনে উঠতে দৌড় দেন। একই সময়ে স্টেশনের এক নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেনটিও ছেড়ে দেয়। এ সময় পা পিছলে ট্রেনের ইঞ্জিনের নিচে চলে যান তিনি। এর পরের ঘটনা বলতে পারেননি গুরুতর আহত জালাল উদ্দীন।

স্থানীয় দোকানি মনির হোসেন জানান, স্টেশনে দুটি ভিন্ন লাইনে দুটি ট্রেন দাঁড়ানো ছিল এবং একই সঙ্গে ট্রেন দুটি ছাড়া শুরু করে। হঠাৎ জালাল উদ্দীন এক নম্বর লাইনে দৌড়ালে পা পিছলে চোখের পলকে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। জামালপুর কমিউটার ট্রেনটি তাঁর ওপর দিয়ে চলে যায়। ট্রেনটি চলে যাওয়ার পরপরই স্টেশনের লোকজনের সহযোগিতায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন এবং নিজের নাম-ঠিকানা বলতে পারছিলেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে চরআগলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শহিদুল ইসলাম দুলু বলেন, রাতেই তিনি মারা গেছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘গতকাল রোববার রাত ৯টার পর গুরুতর আহত অবস্থায় কয়েকজন মানুষ জালাল উদ্দীন নামে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

শ্রীপুর রেলস্টেশন মাস্টার মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। মৃত্যুর বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তা ছাড়া বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশ দেখবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নোয়াখালীতে এনসিপি নেতা পাটওয়ারীর কুশপুতুল পোড়াল জিয়া সাইবার ফোর্স

নোয়াখালী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ১০
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের করণীয় এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে জিয়া সাইবার ফোর্স (জেডসিএফ) নোয়াখালী জেলা শাখার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল এবং তাঁর ছবিসংবলিত কুশপুত্তলিকা দাহ করে সভায় অংশগ্রহণকারীরা।

নোয়াখালী জিয়া সাইবার ফোর্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদলের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হারুনুর অর রশিদ আজাদ, নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম পলাশসহ আরও অনেকে।

এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সভায় বক্তারা বলেন, অদৃশ্য শক্তি ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে। এ অপপ্রচার রুখে দিতে হলে বিএনপির জিয়া সাইবার ফোর্স ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের সঠিক তথ্য ছবি ও প্রমাণ দিয়ে জনগণকে বোঝাতে হবে এবং দল থেকে যাকে ধানের শীষ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে।

সভা শেষে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার কারণে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল এবং তাঁর ছবিসংবলিত কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জে তরুণকে গুলি করে হত্যা, বিএনপির দুই গ্রুপে উত্তেজনা

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে তুহিন দেওয়ান (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার রাত ১০টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন দেওয়ান মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ বেহেরকান্দি এলাকার ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি সেলিম দেওয়ানের ছেলে।মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপের পূর্ববিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি ও মুন্সিকান্দি গ্রামের বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত তুহিন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ মোল্লা ও বিএনপি নেতা আতিক মল্লিকের অনুসারী।

নিহতের চাচাতো ভাই আকাশ দেওয়ান জানান, রোববার রাতে তুহিন হাঁটার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এ সময় মুন্সিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ওজির আলী ও আওলাদ গ্রুপের অনুসারী লিটন ব্যাপারীর নেতৃত্বে পেছন থেকে তুহিনকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি করে। এ সময় তুহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে পূর্বের বিরোধ ছিল বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রান্ত সর্দার জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পিঠে ও ঘাড়ে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম কুয়াশা: তাপমাত্রা কমে ২০-এর নিচে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে নেমে এসেছে এ বছরের প্রথম কুয়াশা। সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোর থেকেই রাজশাহী শহর ও আশপাশের উপজেলার গ্রামগুলোর চারপাশ মোড়ানো ছিল ঘন কুয়াশার চাদরে। এই কুয়াশাময় সকাল যেন জানিয়ে দিয়েছে, আসছে শীত, আসছে স্নিগ্ধতার মৌসুম।

শীতের এমন আগমনী ছোঁয়ায় বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ। কুয়াশাঢাকা সকাল জানিয়ে দিচ্ছে, শীত আর বেশি দূরে নয়। এদিন ভোরের আলো ফুটলেও মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে চলতে দেখা যায় হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশা ভেদ করে গন্তব্যের পথে ছুটে যায় মানুষ।

এদিকে গ্রামের মাঠে শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে। মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহরের রেলগেট এলাকায় কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিক আবদুল জব্বার বলেন, ‘আজকের সকালেই এবার প্রথমবার শীত টের পেলাম। এখন থেকে হয়তো শীত বাড়বে।’

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সোমবার ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন থেকে তাপমাত্রা কমবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত