Ajker Patrika

সীমানা পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ চলবে: ভাঙ্গায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ভাঙ্গা গোলচত্বরের ঢাকা-বরিশাল সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙ্গা গোলচত্বরের ঢাকা-বরিশাল সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। দুটি ইউনিয়ন পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আজ বুধবার তৃতীয় দিনের অবরোধ শেষে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গত শুক্রবার প্রথম উপজেলার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বর আটকে বিক্ষোভ করেন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সোমবার পর্যন্ত আলটিমেটাম শেষে গতকাল মঙ্গলবার এবং আজ সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ করেন। তাঁরা সড়কগুলোর আলগী, হামিরদি ইউনিয়নসহ ১০টি এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং তাঁবু টানিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে স্থানীয় প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়ে। অবরোধের মুখে পড়ে প্রশাসনের নির্দেশে বিকল্প সড়কে যেতে বাধ্য হয় যানবাহনচালকেরা।

বিকেলে ভাঙ্গা গোলচত্বরের ঢাকা-বরিশাল সড়কে বিক্ষোভকালে স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক এম এ ওসমান গণি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চলবে।’ আগামীকাল থেকে স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় আলগী ইউনিয়নবাসী ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাঁদের স্লোগান ছিল, ‘অবৈধ কমিশন, মানি না, মানব না’; ‘অবৈধ ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) মানি না, মানব না’; ‘আনোয়ারের রক্ত, কুকুরের খাদ্য, আনোয়ারের চামড়া তুলে নেব আমরা, আনোয়ারের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’; ‘হাবিবের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।’

পুখুরিয়া এলাকায় হামিরদি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রচমত আলী নির্বাচন কমিশনারকে আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা কষ্ট করছি, হাজার হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। একজন স্ট্রোকে মারা গেছে আর উনি বসে বসে দেখছে; এটা আমরা চাই না। আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানে আমাদের ফিরিয়ে দেন, তাহলে আমরা আন্দোলন করব না।’

এদিকে তৃতীয় দিনে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিলেও সেটা করতে ব্যর্থ হয় বিক্ষুব্ধরা। এদিন সকাল থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে রাখা হয় উপজেলা পরিষদ কার্যালয়। প্রবেশপথে সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশকে যৌথভাবে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, এটা স্থানীয়ভাবে সমাধানের বিষয় নয়, জাতীয়ভাবে এবং আইনগতভাবে সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া কেউ জানমালের ক্ষতি বা চুরি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত ৪৬টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন এনে গেজেট প্রকাশ করেন। গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুর-৪-এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদি ইউনিয়ন পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে স্থানীয়রা। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে ‘প্রশ্ন তোলার’ সুযোগ নেই।

এদিকে যানবাহনচালকেরা বিকল্প তিনটি পথে চলতে শুরু করেছেন। বরিশাল থেকে ঢাকাগামীরা টেকেরহাট থেকে মাদারীপুর ও শিবচর হয়ে এবং ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী যানবাহন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নগরকান্দা উপজেলার তালমার মোড় থেকে সদরপুর উপজেলার ভেতর দিয়ে পদ্মা সেতু এলাকায় উঠছেন। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের পথেও পরিবর্তন এনেছেন তাঁরা।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান জানান, আজ অন্যদিনের তুলনায় যানবাহন কম ছিল। এদিন ১০ কিলোমিটারজুড়ে যানবাহন আটকা পড়ে। এ ছাড়া পরিবহনমালিক সমিতিকে বিকল্প পথে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত