Ajker Patrika

ফুলবাড়ীতে পৌনে দুইশ প্রতিষ্ঠানের ভার ইউএনওর কাঁধে, সেবা পেতে ভোগান্তি

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) 
ফুলবাড়ীতে পৌনে দুইশ প্রতিষ্ঠানের ভার ইউএনওর কাঁধে, সেবা পেতে ভোগান্তি

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ৬১টি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলা পরিষদ, এসিল্যান্ড অফিস, পৌরসভাসহ অন্তত ১৭৪টি প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. আল কামাহ্‌ তমালকে। এতে দাপ্তরিক কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে এবং সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে অভিযোগ করেন নাগরিকেরা ।

ফুলবাড়ী উপজেলায় ৩৪টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি কলেজ, একটি মহিলা কলেজ, ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪টি মাদ্রাসা ও ৩টি কারিগরি বিএম কলেজসহ মোট ৬১টি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতার কাগজে স্বাক্ষর করতে হয় ইউএনওকে। দেখতে হয় তাদের ফাইলপত্রও। কোনো প্রতিষ্ঠানের মামলা থাকলে সেখানে বাড়তি সময় ব্যয় হয়। এ ছাড়া উপজেলা (প্রাথমিক) শিক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে ১০৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বও তাকেই সামলাতে হচ্ছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশিক্ষণের জন্য দীর্ঘ ছুটিতে যাওয়ায় উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। একই ব্যক্তি উপজেলার চারটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নাগরিকদের। 

অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের স্থায়ী কমিটির ৯টিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আর ৮ টিতে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কয়েকটি কমিটিতে উপদেষ্টা এবং কিছু কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকেন। তারা না থাকায় ওই সব কমিটির দায়িত্ব এখন ইউএনওর কাঁধে। জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে শুরু করে শিক্ষা, কৃষি উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ভাতা, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা, বয়স্ক-বিধবা ভাতা, টেন্ডার, টিআর-কাবিখাসহ উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দপ্তরগুলোর বিভিন্ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ইউএনও। 

এদিকে ফুলবাড়ী থানায় গত এক মাস থেকে শূন্য পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) পদটি, গত ৫ আগস্টের পর ৫ জন উপপরিদর্শক (এসআই) অন্যত্র বদলি হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে পদায়ন করা হয়নি। একই ভাবে ১৪ জন পুলিশ কনস্টেবলের পদও শূন্য রয়েছে। সম্প্রতি বদলি হয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। ফলে ওসির দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ উপপরিদর্শক আরিফুজ্জামান। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজেও ইউএনওকে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। জনবলের এত ঘাটতি নিয়ে ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ ২৩০ বর্গকিলোমিটারের উপজেলায় দুই লাখ জনগণের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিভিন্ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকাল সরকার পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ ভেঙে দেয়। এরপর থেকে উপজেলা পরিষদসহ ৭টি ইউনিয়নের দায়িত্বে আছেন ইউএনও মীর মো. আল কামাহ্‌ তমাল ও পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী। সাম্প্রতিক সময়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ৪০ দিনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণে যাওয়ায় এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পালন করছে ইউএনও।

এ ছাড়া গত ২০ আগস্ট এমপিও ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ভেঙে দিয়ে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউএনওকে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ অংশ নিতে হচ্ছে এই কর্মকর্তাকে। এদিকে পৌর পরিষদের কাউন্সিলরদের অপসারণের পর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানদের দেওয়া হয়েছে এই দায়িত্ব। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, নিজেদের দপ্তরের সঙ্গে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে নাগরিক সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে ভেঙে পড়েছে দাপ্তরিক কার্যক্রমসহ নাগরিক সেবা। 

এদিকে ফুলবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর ফুলবাড়ী থানার এসআই তন্ময়, আরিফুল ইসলাম, বদিউজ্জামান, মুকতাদির ও আবুল কালাম আজাদকে বদলি করা হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুলতান মাহমুদকে, তারপর গত ১৫ অক্টোবর ওসি মোস্তাফিজার রহমান বদলি করায় পরিদর্শক শূন্য হয়ে পড়েছে থানাটি। এ ছাড়া গত ২ মাসে ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হলেও নতুন করে পদায়ন করা হয়নি। 

ওসির দায়িত্বে থাকা এসআই আরিফুজ্জামান বলেন, পুলিশের দায়িত্ব সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। তাই সরকারি দায়িত্ব পালন করতে কোনো অসুবিধা হয় না। 

এ বিষয়ে দিনাজপুর পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, ‘অতিরিক্ত ফোর্স দিয়ে টহল দেওয়া হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে থানায় নতুন ওসি পদায়ন করা হবে।’ 

এদিকে সাবেক জনপ্রতিনিধিরা জানান, তাদের কাছে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসতেন বিভিন্ন ধরনের সেবা নেওয়ার জন্য। তবে দায়িত্ব না থাকায় সব কাজের চাপ পড়েছে ইউএনওর ওপর। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ইউএনওর ওপর চাপ কমাতে কিছু কাজ অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া যেতে পারে। কারণ ইউএনওর পদটি এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাকে চাপমুক্ত রাখলে ভালো সেবা পাওয়া যাবে। এসব বাস্তবায়নে সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনা প্রয়োজন। 

পৌরসভায় সেবা নিতে আসা চক সাহাবাজপুরের আনেস সরকার জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে না পাওয়ায় একটি কাজের জন্য তাকে কয়েক দিন আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।

কৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, ওয়ারিশ সনদ নিতে এসে কর্মকর্তা না থাকায় ফেরত যেতে হচ্ছে। একই সমস্যায় পড়েছেন কাটাবাড়ী গ্রামের একরামুল হক। 

উপজেলা পরিষদ ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে গিয়ে সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, নামজারিসহ নানা জরুরি কাজে এসেছেন। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) নেই। ইউএনও অন্য কাজে ব্যস্ত, তাই ফিরে যেতে হচ্ছে। 

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুল হুদা চৌধুরী বলেন, পৌর পরিষদ ভেঙে দেওয়ায় ইউএনও ও এসিল্যান্ড প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের নিজেদের দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সে কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারছেন না, এর পরেও কোনো কাজ থেমে নেই। নিয়ম অনুযায়ী চলছে। তবে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ্‌ তমাল বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালনে কোনো অজুহাত চলে না। রুটিন মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। কাজের চাপ বেশি হলেও নাগরিক সেবা ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর: ৭ বছরেও জোড়া লাগেনি সেতু

বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
সাত বছরেও জোড়া লাগেনি তাহিরপুরের শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর দুই পাড়। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
সাত বছরেও জোড়া লাগেনি তাহিরপুরের শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর দুই পাড়। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় জাদুকাটা ও পাটলাই নদের ওপর ১২৯ কোটি টাকা প্রাক্কলনের দুটি সেতুর নির্মাণকাজ সাত বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দুই সেতুর বিল বাবদ ৮০ ভাগের বেশি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। আড়াই বছর মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাদুকাটা নদীর ওপর আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতু এবং পাটলাই নদের ওপর ডাম্পেরবাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেতু নির্মাণকাজ ফেলে রাখায় তমা কনস্ট্রাকশনের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা মাস ছয়েকের মধ্যে সেতু দুটির কাজ শেষ করবে।

এমন অবস্থায় বহুল কাঙ্ক্ষিত সেতু দুটির কাজ কবে শেষ হবে এবং চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে উপজেলার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ও খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা তাহিরপুর। এ ছাড়া উপজেলাটির ডাম্পেরবাজার এলাকার তিনটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি করা হয়। এসব কারণে জাদুকাটা ও পাটলাই নদের ওপর দীর্ঘ দিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি ওঠে।

সুনামগঞ্জ এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। জেলার দীর্ঘতম ৭৫০ মিটারের মৈত্রী সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা। এর মধ্যে ৬৭ কোটি ৬১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

একই মাসে পাটলাই নদের ওপর ডাম্পেরবাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪৫০ মিটার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টাকা। সেতু দুটি বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ৩০ মাস। সেই হিসাবে ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করেই ৩৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮৯৯ টাকা তুলে নিয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন। মৈত্রী সেতুর ৭৮ ভাগ কাজের বিপরীতে বিল তুলে নিয়েছে ৭০ ভাগ। ডাম্পেরবাজার সেতুর ৮৫ ভাগ কাজে বিল দেওয়া হয়েছে ৮০ ভাগ।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মৈত্রী সেতুটি মাঝখানের অংশের কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া ডাম্পেরবাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর সংযোগ সড়কের কাজও বন্ধ রয়েছে। সেখানে চারাগাঁও-বড়ছড়া শ্রমিক সর্দার কল্যাণ সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. বজলুল আমিনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, মূল সেতুর কাজ হলেও সংযোগ না হওয়ায় সেতুটি কাজে আসছে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকা মেঘালয় খাসিয়া পাহাড়ের নিকটবর্তী টাঙ্গুয়ার হাওর, টেকেরঘাট শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি), শিমুলবাগান, বড়গোপ টিলা, বারেকটিলা, লাকমাছড়া, সীমান্ত হাট, জাদুকাটা, অদ্বৈত জন্মধাম, শাহ আরেফিন (রহ.) মাজারকেন্দ্রিক পর্যটন, কৃষিপণ্য বিপণন এবং বাগলি, বড়ছড়া, চারাগাঁও—তিন শুল্ক স্টেশনের যাতায়াত সুবিধার্থে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ ছাড়া জেলা সদর থেকে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর সীমান্ত

এলাকা হয়ে মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।

তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মিয়া মো. নাছির মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ডাম্পেরবাজার সেতুর সামান্য কাজ বাকি আছে। মৈত্রী সেতুর কাজ আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে শেষ করা হবে। বিগত বন্যায় মৈত্রী সেতুর একাধিক পিলার ভেঙে অনেক নির্মাণসামগ্রী তলিয়ে গেছে। আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আমরা কাজ দ্রুত করার চেষ্টা করছি।’

এলজিইডির সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মৈত্রী সেতুর কাজ দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সম্প্রতি ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ডাম্পেরবাজার সেতুর কাজও শেষ হচ্ছে না। এ জন্য আমরা অসমাপ্ত কাজের প্রাক্কলন তৈরি করে প্রকল্প অফিসে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক প্রাক্কলনটি ফেরত পাঠিয়েছেন। ফের তা সংশোধন করে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী: টার্মিনাল নেই, নাকাল মানুষ

  • ৫৩ বছরেও নির্মাণ করা হয়নি নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল বা যাত্রীছাউনি।
  • যেখানে-সেখানে যাত্রী ও মালপত্র ওঠানো-নামানোয় বাড়ছে যানজট।
  • গত ১০ মাসে ২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
বাস টার্মিনাল না থাকায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের উর্বশী সিনেমা হলের সামনে সড়কে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাস টার্মিনাল না থাকায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের উর্বশী সিনেমা হলের সামনে সড়কে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জেলা দিনাজপুরের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা শহর ফুলবাড়ী। দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর গড়ে ওঠা জনবহুল এই শহর দিয়ে প্রতিদিন ছুটে চলে শত শত বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানকার মানুষ এখনো একটি নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল বা যাত্রীছাউনি থেকে বঞ্চিত। ফলে প্রতিদিনই শহরের রাস্তায় লেগে আছে যানজট ও জনদুর্ভোগ। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা। গত ১০ মাসে ২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত হয়েছে।

জানা গেছে, দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল উপজেলা ফুলবাড়ী। জেলা সদর থেকে ফুলবাড়ী হয়ে ঢাকাগামী আঞ্চলিক মহাসড়কটি ফুলবাড়ী উপজেলা শহর দিয়ে গেছে।

উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ছুটে চলে শত শত যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন। তবে ফুলবাড়ী হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটলেও আজও উপজেলার পৌর শহরে নির্মাণ হয়নি কোনো বাস টার্মিনাল। ফলে শহরের যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো এবং মালবাহী ট্রাকগুলো থেকে পণ্য আনলোড করা হয় সড়কের ওপরই। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে যানজট সৃষ্টি হয় প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সড়ক পারাপারে পথচারীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। বিশেষ করে ফুলবাড়ী নিমতলা মোড় ও নৈশকোচ কাউন্টারের সামনে এবং বটতলি মোড়ে সড়কের ওপর বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করায় পৌর শহর দিয়ে যাওয়া দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুলবাড়ী শহরের অংশে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।

ফুলবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৩ জন। আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশত।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘যানজটের কারণে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয়। শহরের যেখানে-সেখানে সড়কের ওপর গাড়ি থামায়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। কষ্টটা আমাদেরই পোহাতে হয়। একটা টার্মিনাল হলে এই ভোগান্তি অনেকটা কমে যেত।’

শিক্ষক মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল না থাকায় পৌর শহরের ঢাকা মোড় (শাপলা চত্বর) থেকে উর্বশী সিনেমা হল পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলো জায়গা সংকটে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় রয়েছে। ওইসব কাউন্টারে বাস সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। ফলে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে এর ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

দিনাজপুর মটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ফুলবাড়ী স্টান্ড শাখার সভাপতি মহসীন আলী সরকার বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব এক একর জায়গা রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংগতি না থাকার কারণে আমাদের পক্ষে বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ওই জায়গায় সরকার যদি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে দেয়, তবে যানজটসহ সড়ক দুর্ঘটনা ও শহরের যত্রতত্র দূরপাল্লার যানবাহন দাঁড়ানো বন্ধ হয়ে যাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসাহাক আলী বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু জটিলতা আছে অনেক। কারণ, দূরপাল্লার কোচগুলোর দাঁড়ানোর কোনো নির্ধারিত স্থান নেই। তারা পৌর শহরের ঢাকা মোড় এলাকায় যেতে চায় এবং কাউন্টার করে দিতে বলে। কিন্তু কাউন্টার করা ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। এটা কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে, যদি কখনো কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে এটা করা সম্ভব হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

একই আসনে মুখোমুখি বিএনপি ও জামায়াত দুই ভাই

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
আজিজুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক
আজিজুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে (চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর) বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী থেকে আপন দুই ভাইকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন জামায়াতে ইসলামীর মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক এবং বিএনপির আজিজুর রহমান।

তাঁরা জেলার রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাঁদের বাবার নাম মনছুর আহমেদ। তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।

গত সোমবার বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য আজিজুর রহমানের নাম রয়েছে। এদিকে কয়েক মাস আগে জামায়াত থেকে ওই আসনে তাঁর ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাককে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আপন দুই ভাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেও দুজনই জয়ের ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও এটি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি তাঁদের। এদিকে বিষয়টি এখন ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অনলাইন ট্রেডিং সাইট

অনলাইনে বিনিয়োগ করে নিঃস্ব ৪ শতাধিক পরিবার

  • সবার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নে।
  • ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের দাবি।
  • গত সোমবার সকালে সাইটটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
  • পুলিশি ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ ভুক্তভোগী মুখ খুলতে রাজি হননি।
মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ক্লিনো ইমেক্স (Cleano IMEX) নামক একটি অনলাইন ট্রেডিং সাইটে বিনিয়োগ করে সব খুইয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের চার শতাধিক পরিবার। দ্বিগুণ মুনাফার লোভে ধারদেনা, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এই প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করেছিল পরিবারগুলো। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্লিনো ইমেক্সে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছে তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই প্রতারণার শুরু সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে। প্রায় চার মাস আগে মালয়েশিয়াপ্রবাসী আশিক (২২) নামের এক যুবক গ্রামের দুই তরুণ—নিরব হোসেন ও আকাশ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আশিক তাঁদের জানান, ‘ক্লিনো ইমেক্স’ সাইটে টাকা রাখলে প্রতিদিন শতকরার ভিত্তিতে লাভ পাওয়া যায়। ১০০ টাকায় দৈনিক ৪ টাকা লাভ। এমন লোভনীয় প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে নিরব ও আকাশ কাজ শুরু করেন এবং কিছু টাকা লাভও তোলেন। এরপর তাঁরা গ্রামের আরও পাঁচজনকে নিয়ে মোট সাতটি দল তৈরি করে এই ‘লাভজনক’ স্কিম দ্রুত ছড়িয়ে দিতে থাকেন।

এই চক্রের প্রলোভনে পড়ে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া, শ্রীকোল, নেহালপুর, হিজলগাড়ি, বলদিয়া বড়শলুয়াসহ আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ নিরব ও আকাশের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা জমা দিতে থাকেন। হোয়াটসঅ্যাপ-ভিত্তিক পৃথক গ্রুপ তৈরি করে এই দুই হোতা বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন।

জানা যায়, শুধু নিরবের গ্রুপেই সদস্যসংখ্যা ছিল ২১৮ জন। নিজেদের বিনিয়োগ এবং অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া কমিশন মিলিয়ে নিরব ও আকাশ প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতেন, যা দেখে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ আরও বেশি আকৃষ্ট হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোয়ালিয়া গ্রামের এক কৃষক জানান, প্রথমে বিশ্বাস না হলেও গ্রামের অনেকের লাভ দেখে তিনি হালের গরু বিক্রি করে এবং নিজের জমানো টাকাসহ মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওই সাইটে দিয়েছিলেন। এখন সাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব হারিয়েছেন।

একই গ্রামের কালাম নামের একজন বলেন, ‘টাকা দ্বিগুণ হওয়ার আশায় উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম পাখি ভ্যানটি বিক্রি করে সেই টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন আমি পথের ফকির।’ ইজিবাইক চালক মিজানুর ছোট ভাইয়ের কথায় ১৮ হাজার টাকা জমা করে এখন বাকরুদ্ধ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু নেহালপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামেরই দুই শতাধিক ব্যক্তি ‘ক্লিনো ইমেক্স’ সাইটে ৬ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া শ্রীকোল, নেহালপুর, কুন্দিপুর, হিজলগাড়ি, বলদিয়া ও বড়শলুয়ার অন্তত দুই শ পরিবার বিভিন্ন পরিমাণে বিনিয়োগ করেন। গ্রামের সহজ-সরল মানুষজন—কেউ হালের গরু, গাভি, স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে, কেউ এনজিও বা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে, আবার কেউ-বা জমি বন্ধক রেখে এই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন।

গত সোমবার সকালে যখন সাইটটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, তখন গ্রামজুড়ে নেমে আসে হাহাকার। মান-সম্মানের ভয় এবং পুলিশি ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ ভুক্তভোগী প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) জামাল আল নাসের বলেন, ‘নিশ্চয়তা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে অসচেতনভাবে এই অনলাইন সাইটে টাকা বিনিয়োগ করছে। এ ক্ষেত্রে আমরা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও থামানো যাচ্ছে না। নেহালপুর ইউনিয়নের ঘটনাটি শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য থানা-পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত