Ajker Patrika

আউয়ালসহ তিনজন কারাগারে, এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ২৬ মে ২০২১, ১৮: ৪৭
আউয়ালসহ তিনজন কারাগারে, এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

ঢাকা: রাজধানীর পল্লবীতে ব্যবসায়ী সাহিনুদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এম এ আউয়ালসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

চার দিনের রিমান্ড শেষে তিনজনকেই দুপুরের পর আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন এম এ আউয়াল ও জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবু কে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামি নূর মোহাম্মদ হাসানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন জানান।

মহানগর হাকিম মাহমুদা বেগম নূর মোহাম্মদ হাসানের জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করেন। পরে তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এম এ আউয়াল ও জহিরুল ইসলাম বাবুর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন জামিন শুনানিতে বলেন এম এ আউয়ালকে ষড়যন্ত্র মূলকভাবে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। নিহতের সঙ্গে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এম এ আউয়ালের জায়গা দেখাশোনা করতেন সাহিনুদ্দিন। তাই এমএ আউয়াল এই খুন করতে পারেন না। তৃতীয় কেউ এই খুন করে আউয়ালের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। আদালত দু'জনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

গত ২০ মে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে এম এ আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। পরে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২১ মে আদালতে পাঠানো হয়। ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত প্রত্যেকের চার দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড প্রতিবেদনে বলা হয়, সাহিনুদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার বিষয়ে ইসলামি গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান, তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যগুলো গোপনীয়ভাবে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করা। আসামি জহিরুল ইসলাম বাবু ওরফে বাইট্টা বাবু হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই আসামিদের কারাগারে আটক রাখা হোক।

গত ১৬ মে বিকেলে জমির বিরোধের মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দিনকে পল্লবী থানার ডি-ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা আকলিমা বেগম গত ১৭ মে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৬ মে বিকেল ৪টার দিকে সুমন ও টিটু নামের দুই যুবক শাহীন উদ্দিনকে জমির বিরোধ মেটানো হবে জানিয়ে ফোন করে ডেকে নেন। শাহীন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে গেলে, সুমন ও টিটুসহ ১৪-১৫ জন মিলে তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যান। এ সময় শাহীনের ছয় বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে ছিল। গ্যারেজে ঢুকিয়ে শাহীনকে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা। এরপর তাঁকে ওই গ্যারেজ থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে আবার কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যান। ঘটনাস্থলেই শাহীনের মৃত্যু হয়।

আকলিমার অভিযোগ, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেডের এমডি আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করেছে। আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি জবরদখলে বাধা দেওয়ায় তাঁকে খুন করা হয়।

মামলার প্রধান আসামি করা হয় আউয়ালকে। অন্য আসামিরা হলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন, মো. আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, মনির, শফিক, টিটু, কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, আবদুর রাজ্জাক, মরন আলী, লিটন, আবুল, বাইট্যা বাবু, বড় শফিক, কালু ওরফে কালা বাবু, নাটা সুমন ও ইয়াবা বাবু। আসামিরা সবাই পল্লবী থানা এলাকার বাসিন্দা।

নুর মোহাম্মদ হাসানের জবানবন্দি

আসামি নুর মহাম্মদ হাসান তার জবানবন্দিতে লোমহর্ষক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন বলে জানা গেছে। নূর মোহাম্মদ হাসান প্রত্যক্ষভাবে এই হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নিজেকে জড়িয়ে এবং অন্যান্যদেরকে জড়িয়ে ঘটনার স্বীকারোক্তি দেন।

নূর মোহাম্মদ জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার দিন সকালে আসামি সুমন বেপারী তাদেরকে নিয়ে পল্লবীতে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই বিকেলে সাহিনুদ্দিনকে ডেকে এনে হত্যা করা হবে বলে পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই মিলে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। সুমন বেপারী হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময় ভাড়া করেন বলে জবানবন্দিতে বলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত