Ajker Patrika

ঢামেক শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম, হল ছাড়েননি কেউ

ঢামেক প্রতিবেদক
আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ১৭: ৩৯
একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢামেকের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢামেকের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা হলত্যাগের নোটিশ প্রত্যাখ্যান করে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও তাঁর টিমকে সশরীরে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাত্রাবাস পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে স্পষ্ট সমাধান দিতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার (২২ জুন) দুপুর ১২টার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢামেকের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন।

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আজ আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। জানতে চেয়েছি, হলত্যাগের নোটিশ ও ভবিষ্যৎ সংস্কারের অগ্রগতির বিষয়ে। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, হল ছাড়ব না। কর্তৃপক্ষ আজকের বৈঠকে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এ কারণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সশরীরে কলেজ ও হল পরিদর্শনে না এলে আমাদের আন্দোলন আরও কঠোর হবে।’

আবদুল্লাহ আল নোমান আরও বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, আন্দোলন দমন করতেই হল ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের জন্য নয়। অথচ এখনো কোনো সংস্কার কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। তাই আমরা হলে থাকব এবং আন্দোলন চালিয়ে যাব। স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে শিক্ষার্থীদের দাবি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ঢামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুল আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে কলেজ প্রশাসন একমত। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, এই জিনিসটা একবারে হয় না। বিগত ১৫ বছর ধরে হাসপাতালকে ৫ হাজার বেডে উন্নীত করে যে একটা মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে গত ১৫ বছরে একনেকে পাস হয় নাই। সেই মেগা প্রকল্পের স্বপ্ন দেখানোর কারণে কোনো বড় সংস্কার ঢাকা মেডিকেলে হয় নাই। যে কারণে কলেজের একাডেমিক ভবন ও ছাত্রদের হোস্টেলের এই দুর্দশা।’

কামরুল আলম আরও বলেন, ‘এর ভেতর ফজলে রাব্বি হলের মেইন বিল্ডিংয়ের চারতলায় অবস্থা খুবই খারাপ, যেটা আপনারা দেখেছেন এবং সেই চারতলা পিডব্লিউডি কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাস্তবিক অর্থে এই পরিত্যক্ত ভবনে কোনো ছাত্র থাকার কথা নয়। বর্তমান প্রশাসন গত নয় মাস ধরে এই পরিত্যক্ত ভবন থেকে আমাদের ছাত্রদের জীবনের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে নামানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে আসছে।’

তিনি জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদের হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের আগের মেগা প্রকল্প আর হবে না। দেশের ১৯টা মেডিকেলে ১৯টা হোস্টেলের কাজ হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ১৭টি কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাকি দুটা মেডিকেলের জন্য হোস্টেল প্রয়োজন নেই বলে ঢাকা মেডিকেলে সেই দুটি হোস্টেল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু সেটা একনেকের ব্যাপার, পরবর্তী একনেকে এটা পাস হবে বলে আশা করছি। এই বিষয়গুলো ছাত্রদের জানানো হয়েছে। আমি আশাবাদী তারা বাসায় ফিরে যাবে, আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে এবং পরে সুযোগ হলে আমরা একসঙ্গে মন্ত্রণালয়ে কথা বলব।’

উল্লেখ্য, গত ঈদের আগ থেকেই ঢামেকের শিক্ষার্থীরা পুরোনো ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলন করছেন। তাঁদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণের জন্য দ্রুত বাজেট পাস করতে হবে, ছাত্রাবাস নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, নতুন একাডেমিক ভবনের জন্য আলাদা বাজেট পাস করতে হবে, আবাসন ও অ্যাকাডেমিক ভবনের বাজেট পৃথকভাবে অনুমোদন করতে হবে ও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, সব প্রকল্প ও কার্যক্রমের অগ্রগতি শিক্ষার্থীদের সামনে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপনের জন্য শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ঠিক করতে হবে।

গত কয়েক দিন ধরে চলা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ গতকাল হোস্টেল ত্যাগের নোটিশ জারি করে। এতে বলা হয়, আজ দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত