Ajker Patrika

সার্ভিস লেনহীন মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি

  • ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বেশির ভাগ মহাসড়কে সার্ভিস লেন নেই
  • একই মহাসড়কে ভারী ও দ্রুতগতির যানবাহন ও ধীরগতির যান চলছে
  • সার্ভিস লেন ব্যবহারের নিয়ম, দণ্ডের বিষয়ে জানেন না ব্যবহারকারীরা
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০১: ০৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়ছেই। মহাসড়কে দ্রুতগতির যানবাহনের পাশাপাশি ধীরগতির যান চলাচল দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত সার্ভিস লেন না থাকায় মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। যেসব মহাসড়কে সার্ভিস লেন আছে, সেগুলোও কিছুদূর পরপর মহাসড়কে মিশেছে। সার্ভিস লেন ব্যবহারের নিয়ম জানেন না চালকেরা। নিয়ম অমান্যে দণ্ডের বিষয়েও নেই যথেষ্ট প্রচার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুধু নির্মাণকেই সমাধান মনে করে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সার্ভিস লেন নেই। যেগুলো আছে সেগুলোতেও চলাচলকারী যানবাহন প্রধান সড়কে উঠে ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ায় ঝুঁকির মাত্রা বাড়ে। দেশে যে উদ্দেশ্যে সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হয়, তা বাস্তবায়ন হয় না।

সবচেয়ে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। দেশের প্রথম চার লেনের এই মহাসড়কে নেই সার্ভিস লেন। ফলে এই মহাসড়কে ভারী ও দ্রুতগতির যানবাহনের পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, রিকশা ভ্যানসহ ধীরগতির যানবাহনও চলে পাল্লা দিয়ে।

ফলে ধীরগতির যানবাহনের কারণে ওই মহাসড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার কারণে প্রাণহানি হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্ভিস লেন থাকলে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমে যেত।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ২৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে উল্টো পথেও চলতে দেখা গেছে। এই উল্টো পথে চলাচল আটকাতে পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। অথচ আগের দিন কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে ইউটার্ন নেওয়া একটি প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওপর উল্টে পড়ে একটি কাভার্ড ভ্যান। এতে কারে থাকা একই পরিবারের চারজন নিহত হন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সার্ভিস লেন না রাখা বিরাট ভুল হয়েছে। এই মহাসড়কে ৬৬২টি ফিডার রোড রয়েছে। সার্ভিস লেন থাকলে যানগুলো ফিডার রোড থেকে সরাসরি মহাসড়কে উঠতে পারত না; কিংবা উল্টো পথে চলার সুযোগ পেত না। যেমন সার্ভিস লেন রয়েছে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে।

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েজুড়ে সার্ভিস লেন আছে। ফলে ধীরগতির যান মহাসড়কে তেমন ওঠে না। কিন্তু সাসেক-১ (গাজীপুর-এলেঙ্গা) মহাসড়কের পুরোটায় সার্ভিস লেন নেই। কিছুদূর পরপর সার্ভিস লেন মিশেছে মহাসড়কের সঙ্গে। গাজীপুরের ভোগড়া থেকে ঢাকা বাইপাস ফোর লেন এক্সপ্রেসওয়ের ৪৮ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভোগড়া থেকে ভুলতা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সাসেক-২ (এলেঙ্গা-রংপুর), ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক, আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পে সার্ভিস লেন করা হচ্ছে। হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের এক পাশে সার্ভিস লেন থাকলেও কিছুদূর পর মূল সড়কে মিশেছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কের প্রধান বৈশিষ্ট্য সার্ভিস লেন থাকতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। আমাদের একাধিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন থাকলেও সেগুলো কিছুদূর পরপর মূল সড়কের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব মহাসড়কে সার্ভিস লেন নেই, সেখানে অবশ্যই সড়ক ডিভাইডার রাখতে হবে; কিন্তু তাও করা হচ্ছে না।’

সওজ সূত্র বলেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের আদলে এক্সপ্রেসওয়ে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নকশাও তৈরি করা হয়েছে। এটি নির্মাণে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হতে পারে। এরই মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, এখানে অবকাঠামো তৈরি করাকেই দায়িত্ব শেষ বলে মনে করা হয়। কিন্তু ব্যবহারকারীদের সচেতন করার বিষয়ে চিন্তা করা হয় না। উন্নয়নশীল দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। চালকদের সচেতন করতে হবে, তাঁদের পথচলার নিয়ম ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানাতে হবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সূত্র বলেছে, কিছু এলাকায় সার্ভিস লেন করার প্রয়োজন ছিল ২০ ফুট। কিন্তু জায়গাস্বল্পতার কারণে ১৬-১৮ ফুট করতে হয়েছে। এগুলো ভবিষ্যতে সমন্বয় করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজের একাধিক প্রকৌশলী বলেন, মহাসড়কে সার্ভিস লেন হলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সব মহাসড়কে সার্ভিস লেন করা যাচ্ছে না। কৃষিজমি নষ্ট না করার নির্দেশনাও আছে। দেশে সার্ভিস লেনের প্রচলনও বেশি পুরোনো নয়। ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো নির্মাণের সময় সার্ভিস লেনসহ করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, সার্ভিস লেন ছাড়া মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সার্ভিস লেন থাকা মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কম, সেখানে দুর্ঘটনার হারও কম। এখন থেকে যেসব মহাসড়ক সম্প্রসারণ করা হবে, সেগুলো অবশ্যই সার্ভিস লেনসহ করার অনুরোধ জানান তিনি।

মহাসড়কে গতি ও যাত্রার সময় কমানোর জন্য সার্ভিস লেন প্রয়োজন বলে মনে করেন সওজ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, মহাসড়ককে নিরাপদ করার জন্য সার্ভিস লেন প্রয়োজন। একই সঙ্গে স্থানীয় মানুষের চলাচলের জন্য ধীরগতির যানবাহনের চলাচলও দরকার। বাজেটস্বল্পতার কারণে সব মহাসড়কে সার্ভিস লেন করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জমি নেই। কৃষিজমি নষ্ট হয়। মহাসড়কের পাশে বাজার আছে। মহাসড়ক সম্প্রসারণ করতে গেলে সেগুলো সরাতে হয়। এসব তাঁদের সীমাবদ্ধতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি অধ্যাপক কার্জনসহ ডিবি হেফাজতে ১৫ জন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

পুলিশের ওপর ৪ দফা হামলা, গাজীপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নিল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত