Ajker Patrika

মাটির স্বাস্থ্য ভালো না হলে ফসল উৎপাদন কমে যাবে: কৃষিসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। ছবি: আজকের পত্রিকা
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাটির স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে ফসল উৎপাদনে ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। আজ রোববার (১ জুন) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) বার্ষিক কর্মশালায় মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা বিভাগভিত্তিক মাটি পরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।

কৃষির জন্য প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে মাটির স্বাস্থ্য ঠিক রাখা উল্লেখ করে কৃষিসচিব বলেন, ‘মাটির স্বাস্থ্য সঠিক না হলে সব ধরনের ফসল উৎপাদনে ঘাটতি হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, অনেক জায়গায় ডিলাররা মানহীন সার সরবরাহ করছে। এতে জমির স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে ও ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।’

তিনি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান, ‘সারে ভেজাল দেওয়াদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’ তখন কৃষি কর্মকর্তা জানান, ৫০টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কৃষির মোট বাজেটের ৭০ শতাংশই সারে ভর্তুকিতে চলে যায়। সেখানে আমরা সার প্রয়োগ কমাতে পারলে অনেক টাকা বেঁচে যাবে।’

কর্মশালায় মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা জানান, অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাটির স্বাস্থ্য ও গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। এতে ব্যয় বাড়ছে ও ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, কৃষকেরা না জেনে বা কৃষিবিদদের পরামর্শ না শুনে ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে বেশি বেশি করে সার প্রয়োগ করছেন। কোথাও কোথাও এ সারের ব্যবহার ৩-৪ গুণ বেশি দাঁড়াচ্ছে। তা ছাড়া ফসলকে রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে অধিক পরিমাণে কীটনাশকের প্রয়োগ করছেন। তাতে করে উপকারী পোকামাকড় মারা যাচ্ছে। জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।

খুলনা বিভাগের উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে তিন হাজার মাটির নমুনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩ হাজার ৩৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, খুলনার কৃষকেরা প্রয়োজনের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি সার ব্যবহার করছে। আধা কেজি জিংক সারের জায়গায় ৮ কেজি দস্তা ব্যবহার করছে। এমনকি গুঁড়া চুনকে সালফার হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব সার ফসলে প্রয়োগ করায় গাছের পাতা পুড়ে যায়।

সিলেটের মোট জমির ৯৫ শতাংশই অম্লীয় মাটিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে ফসফরাসের ব্যবহার বাড়ছে। আর ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২৬০টি সারের স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, এই সময়ের মধ্যে জিংক সারে ৫৩ শতাংশ ভেজাল পাওয়া গেছে।

বরিশাল বিভাগের উপস্থাপনায় বলা হয়, এ অঞ্চলের সারের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ ভালো ও ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভেজাল সার পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের উপস্থাপনায় বলা হয়, চট্টগ্রামে ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহার করায় মাটিতে ফসফরাসের পরিমাণ বাড়ছে। তা ছাড়া রংপুর অঞ্চলের ২ লাখ ৭৮০ হাজার হেক্টর জমি অম্লতা পাওয়া গেছে। এতে মাটির উর্বরতা কমছে।

এসআরডিআইর মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে দুই দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত