Ajker Patrika

মৌলভীবাজার হাসপাতালে বরাদ্দের অভাবে বন্ধ হচ্ছে ডায়ালাইসিস

  • ১৭টি ডায়ালাইসিস যন্ত্রের মধ্যে সচল আছে ১৫টি। এর মাধ্যমে বর্তমানে ১৫ রোগী সেবা পাচ্ছেন।
  • প্রত্যেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের প্যাকেজে ৪৮টি সেশনে এই সেবা পান।
  • বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসে প্রতি সেশনে লাগে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত
মৌলভীবাজার হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেনারেল হাসপাতালে সরকারি অর্থ বরাদ্দের অভাবে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। ভর্তুকির টাকা না থাকায় পুরোনো প্যাকেজের আওতায় থাকা ১৫ রোগী ছাড়া গত এক মাস ধরে নতুন কোনো রোগীকে এই সেবার আওতায় নেওয়া হচ্ছে না। পুরোনো রোগীদের সেবাদানও আগামী সেপ্টেম্বরে শেষ হচ্ছে। ফলে জেলার সীমিত আয়ের রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে ১৭টি ডায়ালাইসিস যন্ত্র থাকলেও সচল আছে ১৫টি। যার মাধ্যমে বর্তমানে ১৫ রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটিতে প্রত্যেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের প্যাকেজে ৪৮টি সেশনে এই সেবা পান। প্রতি সেশনের মূল্য পড়ে ৪০০ টাকার মতো। একজন রোগী সপ্তাহে দুটি সেশন নিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে বাকি টাকা সরকারিভাবে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এমন ভর্তুকি বরাদ্দ থাকলে হাসপাতালটিতে প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ সেশন দেওয়া যায়। এ জন্য আগামী এক বছর এখানে ডায়ালাইসিস চালু রাখতে ১ কোটি টাকার প্রয়োজন।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাদের কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের ডায়ালাইসিস নিতে হয়। মৌলভীবাজারে সদর হাসপাতাল ও এক-দুটি বেসরকারি হাসপাতালে এটি করানো হয়। সরকারি হাসপাতালে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। আর বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসে প্রতি সেশনে লাগে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। কেউ কেউ সিলেট শহরে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এভাবে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সবকিছু শেষ করে অনেকে নিঃস্ব হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন।

কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত প্রায় ২ কোটি মানুষ। এই রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল, যা বহন করার মতো আর্থিক অবস্থা ২৫ শতাংশ রোগীর নেই। যাদের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন তাদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ রোগী অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছে না।

লোকমান আহমেদ নামের এক রোগী বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিস করিয়েছি। মধ্যখানে ইনফেকশন হওয়ায় প্রাইভেট হাসপাতালে কিছুদিন করাই। কয়েক দিন আগে সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম, কিন্তু শুনলাম সেখানে নতুন রোগীদের জন্য এই সেবা বন্ধ আছে। সরকারি বরাদ্দ যা ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। প্রতি সপ্তাহে আমার দুটি ডায়ালাইসিস লাগে। প্রাইভেট হাসপাতালে প্রতি সেশনে খরচ আসে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া যাতায়াতসহ অন্যান্য খরচ আছে। প্রাইভেটে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা নেওয়া অনেক ব্যয়বহুল, যা সব রোগী বহন করতে পারে না। সরকারি হাসপাতালে এই সেবা বন্ধ হলে অনেক কিডনি নষ্ট রোগী চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে পারেন।’

এ বিষয়ে কথা হলে মৌলভীবাজার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) প্রণয় কান্তি দাশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের আগের কয়েকজন কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের আরও এক থেকে দেড় মাস এই সেবা দেওয়া যাবে। তবে গত এক মাস ধরে নতুন কোনো রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবার আওতায় আনা যায়নি। আমরা আগামী এক বছরের সেবা চালু রাখার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করি, হাসপাতালে পুরোপুরি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হওয়ার আগে বরাদ্দ পাব।’

যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, ডায়ালাইসিস সেবাটি চালু রাখার জন্য। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছি ১ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য। এই টাকা পেলে অন্তত এক বছর চলবে সেবাটি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত