Ajker Patrika

বোমা নাকি গ্যাস : বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে কে কী বললেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ২৮ জুন ২০২১, ১৬: ১৭
বোমা নাকি গ্যাস : বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে কে কী বললেন

ঢাকা: রোববার মগবাজারের ওয়্যারলেসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন সাতজন। ডিএমপির কমিশনার শফিকুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন। আর ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে আহত হ্ওয়ার সংখ্যা ৬৬। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৯, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৭, মনোয়ারা হাসপাতালে ছয়, আদ–দ্বীন হাসপাতালে তিন ও হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে দুজন চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকে এরই মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।

প্রথমে নাশকতা হিসেবে সন্দেহ হলেও আস্তে আস্তে সবার বক্তব্যেই জমে থাকা গ্যাসের কারণে এ দুর্ঘটনা—এমন তথ্যই জোরালো হচ্ছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এই বিস্ফোরণ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে না। গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে। এখনো ভবনের ভেতরে মিথেন গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সঠিক তদন্ত করে বিস্ফোরণের কারণ বের করা হবে।

পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ বলেন, বিস্ফোরণে বড় ধরনের একটা শক ওয়েভ তৈরি হয়েছিল। যার ফলে একমুখী ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। নাশকতা হলে চতুর্মুখী বিস্ফোরণ হতো। বোমা ও বিস্ফোরণ ইউনিট নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

সবগুলো বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করার কথাও জানান আইজিপি।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে রোববার রাতেই পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সংস্থাটির পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এটি ব্যবহারের অনুপযোগী। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। কেন এই বিস্ফোরণ তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তদন্ত একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। নির্দিষ্ট করে কারণ এখনই বলা যাচ্ছে না।

 সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে যান এবং ব্রিফ করেন পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবনটিতে হাইড্রোকার্বন গ্যাসের (মিথেন, ইথেন ইত্যাদি) উপস্থিতি মিলেছে। বিভিন্ন ধরনের গ্যাস মিলে এই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা প্রধান বিস্ফোরণ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের। তিনি জানান, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে যান পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দিচ্ছি না আমরা। কী কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমাদের অনেকগুলো টিম এখানে কাজ করছে। নাশকতার আশঙ্কা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও এখানে এসেছে। তারা তাদের মতো কাজ করছে।

ঘটনার তিন ঘণ্টার মাথায় বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে যান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। পরিদর্শন শেষে ঘটনা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, এটা নাশকতা নয়। বোমা বিস্ফোরণের মতো কিছু ঘটলে স্প্লিন্টার পাওয়া যেত। মানুষ স্প্লিন্টারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতো। ক্ষতিগ্রস্ত বাসগুলোতেও কোনো স্প্লিন্টারের কণা পাওয়া যায়নি। অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বোমার কোনো ঘটনা এখানে নেই। গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের কারণে তীব্র শব্দতরঙ্গ তৈরি হয়েছিল। এতে আশপাশের ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূল ভবনের সব পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটিতে গ্যাসের সংযোগ ছিল না বলে জানিয়েছে জাতীয় গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। রোববার রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত তিতাসের কর্মকর্তা মহিবুল হক আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মহিবুল হক বলেছেন, আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আগেই ভবনের গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি। তিতাসের জমে থাকা গ্যাসে বিস্ফোরণ হয়নি। তবে সিলিন্ডারে জমা গ্যাসে বিস্ফোরণ হতে পারে।

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ঢাকা দক্ষিণ) মো. কামরুজ্জামানও রোববার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, আমরা সব ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছি। ভেতরে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক শর্টসার্কিট, এসির বিস্ফোরণ কিংবা জেনারেটরের বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে অন্য কোনো কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে কি না, সেটা তদন্তের পর জানা যাবে।

রোববার গভীর রাতে ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। উত্তর সিটি করপোরেশনের পুরো ইউনিট এখানে আছে। তারা কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যে রকমের ব্যবসা করি না কেন, আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সব লাইন ঠিক করে, নিরাপদ অবস্থায় রাখতে হবে। সামান্য ভুলে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, তা আবারও প্রমাণ হলো। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত