Ajker Patrika

কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল: সাড়ে ৩ কিলোমিটারজুড়ে সংঘাতের চিহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ২৩: ২৩
কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল: সাড়ে ৩ কিলোমিটারজুড়ে সংঘাতের চিহ্ন

একই সময় কাছাকাছি স্থানে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ডাকা নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা ছিলই। যদিও উভয় দলের পক্ষ থেকেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলা হচ্ছিল। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের দূতাবাসগুলো বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরব হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো তাদের নজরে রয়েছে ধরে নিয়ে সংঘাত না হওয়ার বিষয়ে আশাবাদীও ছিলেন সাধারণ মানুষ।

অবশ্য সমাবেশের দুই দিন আগে থেকেই সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জল ও স্থলপথে গণপরিবহনে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। ঢাকার প্রবেশমুখে মোড়ে মোড়ে বসানো হয় তল্লাশি চৌকি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষও। 

কমলাপুর রেলস্টেশনের বাহিরের অংশে রাখা একটি জিপে আগুন দেওয়া হয় সংঘর্ষের সময়। ছবি: প্রতিবেদকশেষ পর্যন্ত সমাবেশ শান্তিপূর্ণ থাকল না। আজ শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি অনেকটা শান্তই ছিল। তবে বেলা ২টা থেকে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রথমে কাকরাইলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর সেখানে হাজির হয় পুলিশ। পুলিশ উপর্যুপরি টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। প্রথমে বিএনপি কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ পিছু হটলেও পরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশের দিকে অগ্রসর হয়। দ্রুতই সমাবেশস্থল থেকে নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয়। 

এরপর কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তায় থেমে থেমে চলতে থাকে সংঘর্ষ। বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। 

আগুনে পোড়ানো কমলাপুর  পুলিশ বক্স। ছবি: প্রতিবেদকএই প্রতিবেদনে লেখা পর্যন্ত (৬টা ৩৪ মিনিট) রাজধানীর বিভিন্ন অংশে গাড়ি পোড়ানোর খবর পাওয়া যাচ্ছিল। বিএনপির সমাবেশস্থল নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে শুরু করে ফকিরাপুল পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। 

চলমান এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মারধরের শিকার পুলিশের একজন কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নয়াপল্টনে পুলিশ গুলি করেছে। সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা যুবদলের এক নেতা হাসপাতালে মারা গেছেন। 

স্টেশনের সামনের মালটানা গাড়িতেও  আগুন দেওয়া হয়। ছবি: প্রতিবেদকআজকের পত্রিকার প্রতিবেদকেরা এসব অঞ্চল থেকে জানিয়েছেন, রাস্তায় কোনো গণপরিবহন নেই। কাকরাইল থেকে কমলাপুর ও পল্টন ফকিরাপুল এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বেলা ১টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে টানা ছয় ঘণ্টা। এই এলাকার রাস্তায় এখন শুধু গাড়ির ধ্বংসাবশেষ, ইটপাটকেল, ব্যানার ও লাঠিসোঁটা পড়ে আছে। 

দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষএর আগে দুপুর ১২টায় রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড় এলাকায় প্রধান বিচারপতির বাসার সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা একটি গাড়িতে করে বায়তুল মোকাররমের দিকে যাচ্ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির এক দেড় শ নেতা-কর্মীর একটি মিছিলকে লক্ষ্য করে গাড়ি থেকে টিজ করতে থাকেন গাজীপুর থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা।  বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মিছিল থেকেই আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় সংঘর্ষ। 

রয়েল কোচ কাউন্টারের সামনে রাখা এই পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ছবি: প্রতিবেদক

তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ এসে বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। তখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। রমনা থানার ওসি আবুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ তাঁদের প্রতিহতের চেষ্টা করে। পুলিশ উপর্যুপরি টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। 

সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। পাশেই প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও পড়ে ইটপাটকেল। বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তায় বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে আসে নয়াপল্টনে সমাবেশস্থলে। সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। 

বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের আন্তর্জাতিক বাস ডিপো অফিস, কমলাপুর মোড়ের পুলিশ বক্স, ঢাকা দক্ষিণ সিটির আবর্জনা ব্যবস্থাপনা অফিসসহ একাধিক স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

আরামবাগ এলাকায় মতিঝিল পোস্ট অফিস হাই স্কুল সংলগ্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের অন্তত সাতটি  ময়লা টানা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ছবি: প্রতিবেদক

বিকেলে রাজধানীর আরামবাগে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ওই এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এরপরই আশপাশে অফিস, যানবাহন ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তত সাতটি ময়লার গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

আরামবাগ ও ফকিরাপুল এলাকায় দেখা যায়, পল্টন থেকে আরামবাগের দিকে চলে আসা বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল ছুড়ছে। পুলিশও তাঁদের প্রতিহত করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে রয়েল কোচ পরিবহনের একটি বাস ও কমলাপুর রেলস্টেশনের ভেতরে থাকা একটি জিপে আগুন দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার পাঁচটি দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ইটপাটকেলের তোপে মুখে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে পিছু হটে পুলিশ। রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড় এলাকায় প্রধান বিচারপতি বাসভবনের সামনে বেলা সোয়া ১টা নাগাদ এ ঘটনা ঘটে ৷ 

দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কাকরাইলে বিকেল সাড়ে ৫টায় একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসটি কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। পরবর্তীকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কারা আগুন দিয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ দুজন যুবক এসে বাসে পেট্রল ছিটিয়ে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো বাস জ্বলতে থাকে। আগুন দেওয়ার পর ওই দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে কাকরাইল মোড় দিয়ে চলে যায়।

রাস্তায় পড়ে আছে পুলিশের ছোড়া টিয়ার সেল। আরামবাগ এলাকায়। ছবি: প্রতিবেদকবিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে আরামবাগ, কমলাপুর এলাকার শান্ত হতে শুরু করে। পুরো এলাকা পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারদের নিয়ন্ত্রণে। সড়কে যাত্রীবাহী যানচলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে অল্প পরিমাণে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করছিল। সাধারণ মানুষ পথে নেমেছে। তাঁরা এসব যানবাহনে চলাচল করছেন। তবে কমলাপুর এলাকায় আগুন দেওয়া ভাঙচুর করা দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়নি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজধানীর সাত এলাকায় ১২ ককটেল বিস্ফোরণ, তিন গাড়িতে আগুন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৭
ধানমন্ডি লাইব্রেরীর সামনে বাসে আগুন। ছবি: সংগৃহীত
ধানমন্ডি লাইব্রেরীর সামনে বাসে আগুন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে সারা দিন ধরে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সাত এলাকায় ১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। যদিও এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত হয়নি।

আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের পাশে শাহ আলী মার্কেটের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। একই সময়ে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপরও একটি ককটেল বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে পুলিশ।

মিরপুর মডেল থানার কর্মকর্তারা জানান, ফুটওভার ব্রিজের ওপর থেকে কেউ ককটেল নিক্ষেপ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

এর এক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার শিহাব সরকার বলেন, খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ধানমন্ডি বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, আগুন লাগার সময় বাসে কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন, তবে তাঁরা সবাই নিরাপদে নেমে আসতে সক্ষম হন। কেউ হতাহত হননি।

এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর চারটি স্থানে সাতটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মিরপুরের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি, মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে ‘প্রবর্তনা’র সামনে ও ভেতরে দুটি, ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের সামনে দুটি এবং ধানমন্ডি ৯/এ এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে আরও দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়।

মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টা ২৬ মিনিটে এবং অপরটি ভোররাত ৩টা ৫৫ মিনিটে বিস্ফোরিত হয়। দুটি ককটেল অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সামনে বিস্ফোরিত হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ভবনেরও কোনো ক্ষতি হয়।

আজ সরেজমিনে দেখা যায়, ককটেল বিস্ফোরণের পর গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ভবনের সামনের ফুটপাতে ও প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখা যায় তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ও একজন কর্মকর্তা বসে আছেন। সামনেই অভ্যর্থনাকক্ষ। কাচের দরজার অভ্যর্থনাকক্ষের প্রবেশের মুখে লালচে ককটেল বিস্ফোরণের দাগ ও বিস্ফোরিত অংশ পড়ে ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেসব নিয়ে গেছে।

ঘটনার বিষয়ে গ্রামীণ ভবনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আল হেলাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাত ২টা ২৬ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণ হয়। এরপর ভোররাত ৩টা ৫৫ মিনিটে দ্বিতীয় ককটেল হামলার ঘটনা হয়।

গ্রামীণফোন ভবনের অভ্যর্থনার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। ছবি: সংগৃহীত
গ্রামীণফোন ভবনের অভ্যর্থনার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। ছবি: সংগৃহীত

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, হামলাকারীরা দুটি মোটরসাইকেলে করে মিরপুর ১০ নম্বরের দিক থেকে আসে, এরপর ভবনের সামনে মোটরবাইক থামিয়ে পেছনে বসা হেলমেট পরা ব্যক্তি সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে ককটেল ছুড়ে মেরে মিরপুর-১ নম্বরের দিকে পালিয়ে যান। এরপর আরও একটি মোটরসাইকেলে করে প্রায় এক ঘণ্টা পর আরও দুজন একই কায়দায় এসে ককটেল ছুড়ে চলে যান। তবে তাঁদের মুখ দেখা যায়নি। ঘটনার পর আলামত ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়েছে পুলিশ।

মিরপুর মডেল থানার ফটক থেকে আনুমানিক এক শ গজ দূরে গ্রামীণ ভবনের ফটক। থানা ফটকে ও গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের সামনে সব সময় পুলিশের পাহারা থাকে। এর মধ্যেই এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

একটি হামলার দেড় ঘণ্টা পর আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা কাউকে আটকাতে পারেনি। এ বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সারোয়ার হোসেন বলেন, মোটরবাইকে করে এসে হামলা চালিয়ে তারা দ্রুত চলে যায়। তখন গভীর রাত ছিল, কত মোটরবাইক যায়, কোনগুলোকে আটকাবে।

ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, বিস্ফোরিত ককটেলের ভেতরের পেরেক, কাচের টুকরা, জর্দার কৌটা ও স্কচটেপ পড়ে রয়েছে।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, মোটরসাইকেলে এসে দুজন ব্যক্তি এই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের মাথায় হেলমেট ছিল। চেহারা বোঝা যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুজনকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে হামলার পর সকাল ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের সৈয়দ স্যার সড়কের ৬/৮ ভবনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনা ও বীজবিস্তার ফাউন্ডেশনের সামনের সড়কে ও সীমানার ভেতরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়।

দুজন হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান বলে জানিয়েছেন প্রবর্তনার নিরাপত্তাকর্মী মো. মোস্তফা।

নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা বলেন, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বান্দরবান থেকে তাঁদের দুটি বস্তায় জিনিসপত্র আসে। সেগুলো তিনি ভেতরে ঢোকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় একটি মোটরবাইকে দুজন এসে ভবনের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়ান। পরে তাঁরা পশ্চিম দিকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর আবার ঘুরে আসেন। একজন বাইক থেকে নামেন, প্রথমে একটি ককটেল মারেন, সেটি সীমানাপ্রাচীর থেকে উড়ে একটি পিকআপ ভ্যানের ওপর পড়ে। এরপর আরও একটি নিক্ষেপ করলে সেটি ফুটপাতে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় ওই ভবনে থাকা চারজন পুলিশ সদস্য বাইরে বের হন। তাঁরা বের হওয়ার আগেই বাইক নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তাদের মোটরবাইকের নম্বরপ্লেট কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। সিসি ক্যামেরা থাকলেও তাদের হেলমেটের কারণে চেহারা দেখা যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এর আগেও একবার পেট্রলবোমা হামলা হয়েছিল। তখন আগুন ধরে যায় ভবনের উত্তর পাশে। এরপর ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করতে সব সময় পুলিশ রাখা হয়। এর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, প্রবর্তনার সামনের সড়ক ও ভবনের ভেতরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে কেউ আহত হয়নি।

এ ছাড়া ভোরে শাহজাদপুরে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস এবং সকাল সোয়া ৬টার দিকে মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাছে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজীপুরে তানভীর সিদ্দিকীর ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ ২ বিএনপির নেতার

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে তানভীর সিদ্দিকীর ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ ২ বিএনপির নেতার

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর বড় ছেলে ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে থানায় দুটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

সোমবার (১০) দুপুরে অভিযোগ দুটি করেন গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহনশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মিনার উদ্দিন ও কালিয়াকৈর পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি এ কে আজাদ।

অভিযোগে বলা হয়েছে, চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ, বিভ্রান্তিমূলক ও রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য প্রচার করে আসছেন। এসব বক্তব্য তিনি নিজের ফেসবুক আইডি ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা করা হয়েছে এবং সেসব মামলায় তিনি কারাবরণ করেছেন। ৭ নভেম্বর তিনি তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে প্রকাশিত এক বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহনশ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বলেন, ‘চৌধুরী ইরাদ সিদ্দিকী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়া বানচাল করার চেষ্টা করছেন।’

গাজীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা তাঁর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। তিন বছর ধরে তাঁর সঙ্গে আমাদের কোনো পারিবারিক যোগাযোগ নেই। তিনি কিছুটা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন, যা এলাকাবাসী জানেন। প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে উসকানি দিচ্ছে।’

কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়ালিদুর রহমান বলেন, ‘চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়গুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফটিকছড়িতে বনকর্মীদের ওপর হামলা, আহত ৫

 ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
ফটিকছড়িতে বনকর্মীদের ওপর হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফটিকছড়িতে বনকর্মীদের ওপর হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটতে বাধা দেওয়ায় বন বিভাগের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ সোমবার ভোরে উপজেলার হাসনাবাদ বিটের করলিয়া বড়টিলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা শিফাত আল রাব্বানী, বাগানমালি মো. সোহেল, স্থানীয় যুবক এমদাদ প্রমুখ।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সৃজিত সংরক্ষিত আকাশমণিগাছ কেটে পাচারের চেষ্টা করছিল সংঘবদ্ধ গাছ চোরদের একটি দল। খবর পেয়ে শিফাতের নেতৃত্বে বনপ্রহরীরা ঘটনাস্থলে গেলে গাছ চোরেরা পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় করিম নামের একজনকে আটক করা হলে পথে তাঁর সহযোগীরা হামলা চালিয়ে তাঁকে ছিনিয়ে নেন।

বন বিভাগ জানিয়েছে, হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন পেলারখিল এলাকার আলমগীর, শাহজাহান ও আবছার; করালিয়া এলাকার আবিদ আলী, শাহাব উদ্দিন ও করিম; খিল্লাপাড়ার বাসিন্দা আলমগীর।

এ বিষয়ে শিফাত আল রাব্বানী বলেন, এটি পরিকল্পিত হামলা। হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে, দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বনাঞ্চল রক্ষায় নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি বনে হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চারটি আসন ফিরে পেয়ে বাগেরহাটে আনন্দ মিছিল

বাগেরহাট প্রতিনিধি
আসন ফিরে পাওয়ায় বাগেরহাটে আনন্দ মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
আসন ফিরে পাওয়ায় বাগেরহাটে আনন্দ মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাট জেলার সংসদীয় আসন চারটি বহাল রাখার আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আসন ফিরে পাওয়ায় সোমবার বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।

সন্ধ্যা ৭টায় বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার প্রেসক্লাবের সামনে এসে মিছিলটি শেষ হয়। পরে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন বিএনপির নেতারা।

এদিকে আসন ফিরে পাওয়ায় মাগরিবের নামাজের পর বাগেরহাট পুরাতন কোর্ট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত হয়েছে। দোয়া মোনাজাতে জেলা বিএনপি ও সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম অংশগ্রহণ করেন।

াগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চারটি আসন ছিল। হঠাৎ একটি আসন কমিয়ে দেওয়ায় আমরা বিক্ষোভ করেছি, হরতাল করেছি। আমরা আইনের আশ্রয়ও নিয়েছিলাম। আজ উচ্চ আদালত আমাদের আসন ফিরিয়ে দিয়েছেন। এতে পুরো বাগেরহাটবাসী খুশি। আল্লাহর রহমতে আর কোনো শক্তি আমাদের আসন ফিরিয়ে নিতে পারবে না।’

নির্বাচন কমিশন গত ৩০ জুলাই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে জেলায় তিনটি করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করেন। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন নেতা-কর্মীরা। এরপরও গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন জারি রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে।

পরে ৭ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে বাগেরহাটের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে দুটি রিট করা হয়। বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জেলা ট্রাক-মালিক সমিত একটি রিট করে। অন্যটি করেন চিতলমারী উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান শামীম। রিটে বাংলাদেশ সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও অ্যার্টনি জেনারেলকে বিবাদী করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত