Ajker Patrika

সায়েন্স ল্যাব এলাকার সেই ভবনটি এক সপ্তাহ আগে ‘মাপজোখ’ করেছিল মালিকপক্ষ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সায়েন্স ল্যাব এলাকার সেই ভবনটি এক সপ্তাহ আগে ‘মাপজোখ’ করেছিল মালিকপক্ষ 

সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বিস্ফোরণের পরে ধসে পরা ভবনটি এক সপ্তাহ আগে মাপজোখ করেছিল কর্তৃপক্ষ। তবে কি কারণে মাপজোখ করেছিল তা কেউ জানাতে পারেননি।

আজ সোমবার দুপুরে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার স্টেট টেইলার্সের মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি ২০১৫ সাল থেকে ভাড়া নিয়েছি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কোনো গ্যাসের লাইন নেই। আমরা চা খাওয়ার জন্য ইলেকট্রিক কেটলিতে পানি গরম করতাম।’

ভবনটি ভেঙে হয়তো আরও বড় কিছু করার পরিকল্পনার কথা ভাবছিলেন মালিক। সে কারণে কয়েকজন গত সপ্তাহে মাপজোখ করতে গিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

আব্দুর রশীদ বলেন, ‘গত সপ্তাহে কয়েকজন এসে ভবনটি মাপজোখ করছিল। এ সময় তারা আমাদের টেইলার্সের ভেতরেও মাপ দেয়। তখন জানতে চাইলে বলেছে, মালিকের ভাই এসেছেন আমেরিকা থেকে, তিনি পাঠিয়েছেন মাপজোখ করতে।’

বিস্ফোরণের পর আগুনে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখানে আমার কাপড়ের গোডাউন ছিল। কয়েক দিন আগে ৫০ লাখ টাকার কাপড় তুলেছি, রমজানের ঈদ উপলক্ষে। এ ছাড়া অন্য পাশে প্রায় ২৭ লাখ টাকার কাপড়চোপড় ছিল। সবগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। দোকানের ফলস সিলিংসহ সব ভেঙেচুরে গেছে।’
 
গতকাল সায়েন্স ল্যাবের শিরিন ম্যানশন বিস্ফোরণের পর ধসে পরে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। পথচারীসহ আহত হন অর্ধশত মানুষ। মালিক শিরিন লন্ডনপ্রবাসী বলে জানিয়েছে ভবনের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম।

আবুল কালাম সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি ৪০ বছর ধরে এই ভবনে চাকরি করেন। নিচতলায় হোটেল ছাড়া ওপরে কোনো গ্যাসের লাইন নেই। কীভাবে এই বিস্ফোরণ হলো কিছুই বুঝছি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম বলেন, ‘আমি গত চার দিন ধরে অসুস্থতার জন্য ছুটিতে আছি। ওই ভবন থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ভাড়া ওঠে। আমি ভাড়া তুলে জাকিয়া ম্যামকে দিই তিনি সে টাকা বিদেশে শিরিন ম্যামের কাছে পাঠিয়ে দেন।’

তবে মাপজোখের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। 

নিহত তিনজনের লাশ হস্তান্তর
বিস্ফোরণে নিহত নিউ জেনারেশন কোম্পানির তিন কর্মীর ময়নাতদন্ত সম্পন্নের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে প্রভাষক ডা. ফাহমিদা নার্গিস মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন।

নিহতেরা হলেন নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার বটেশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিকের ছেলে সাদিকুর রহমান তুষার (৩১)। রাজবাড়ি সদর উপজেলার ধুলদি গ্রামের মৃত গোমেদ শেখের ছেলে শফিকুজ্জামান শফিক (৪৪) ও গাজিপুরের টঙ্গী কোনাপাড়া এলাকার মফিজউদ্দিন খলিফার ছেলে আব্দুল মান্নান (৬৩)। 

আহতদের জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন
এ ঘটনায় আহত ১২ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে ছয়জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, চারজন ঢাকা মেডিকেলে এবং দুজন পপুলার মেডিকেলে ভর্তি।

বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটে মোট ছয়জন ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে স্বপ্না রানি সাহা (৩৯) নামে এক নারীর শরীরের ১৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। আশরাফুজ্জামান ও হাফিজুর রহমানের শরীরে ৬ এবং ৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাকিদের মধ্যে আশা, জহুর আলী ও আকবরের শরীরে ৩৮, ৪৪ ও ৩৭ শতাংশ দগ্ধ। তবে আমরা কাউকে শঙ্কামুক্ত বলতে পারছি না।

তবে আহতদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক। 

নাজমুল হক জানান, ঢাবির ছাত্র নুর নবীসহ ৪ জন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছে। নুর নবীর মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। সোমবার সেখানে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কবির, জাকির হোসেন জুয়েল, আর জরুরি বিভাগের মিনি আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন সিএনজি অটোরিকশা চালক সোহেল। তবে নুর নবী ও সোহেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রতিনিয়ত তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত