ফজলুল কবির
যেদিক থেকেই আসা যাক, সুস্থ মানুষেরই জ্যামিতি পাল্টে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। আর রোগগ্রস্তদের অবস্থা কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। জায়গাটা যেহেতু হাসপাতাল, সেহেতু সেখানে অসুস্থদেরই তো যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সে কথা মাথায় রেখে রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশের সড়কের সংস্কার হবে, তেমন আশা করা কঠিন। কারণ, চলছে তো সবই।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে সাধারণ মানুষ মিটফোর্ড হাসপাতাল নামেই চেনে। এবং সেই সূত্রে এর আশপাশের এলাকাকেও তাই। ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালগুলোর একটি এটি। সরকারি এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সাধারণ মানুষই আসেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর যাবতীয় পথ যেন সবাইকে নিরস্ত করতে চায়। ভালো উদ্যোগ বলা যেত, যদি তা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কার করে করা হতো।
সে যাক। হাসপাতালটিতে যাওয়ার প্রতিটি সড়কে চলছে সংস্কারকাজ। ফলে যানজট একেবারে বাঁধাধরা ব্যাপার। চকবাজার হয়ে বা বংশাল হয়ে বা ইসলামপুরের সটান রাস্তা ধরে—যেভাবেই যাওয়া যাক এক বেদম পথ–যন্ত্রণা সঙ্গী হবে।
হাসপাতালের মূল গেট দিয়ে ঢোকার সময়ই গেটে দেখা হবে ডাব বিক্রেতা থেকে শুরু করে নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। নাকে এসে লাগবে নানা রাসায়নিকের মিলিত একটি গন্ধ। প্রথমে কিছুটা ভালো লাগলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথা ধরে যাবে। কিন্তু বারবার সরানোর উদ্যোগ সত্ত্বেও যে রাসায়নিকের গুদাম ও ব্যবসা সরানো যায়নি, তাকে অপরিবর্তনীয় মেনেই এগিয়ে যেতে হবে।
হাসপাতালের মূল বড় গেট বন্ধ থাকায় লোকজনকে চলাচল করতে হয় পকেট গেট দিয়ে। করোনার এই সময়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার যে বার্তা সেকেন্ডে সেকেন্ডে প্রচার করা হয়, তার অন্তঃসারশূন্যতা মুহূর্তেই দৃশ্যমান হবে। কারণ, এই যে এত লোক—এরা তো দিব্যি করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেঁচে আছে।
গেটটি পার হওয়ার পর অবশ্য বিস্তৃত পরিসর। কিন্তু লিফটের সামনেই তা সংকীর্ণ হয়ে গেছে ভোজবাজির মতো। দু নম্বর ভবনের নিচতলায় সবাই হুড়োহুড়ি করছে লিফটে চড়তে। নিচতলায় দুই পাশে দুটি লিফট থাকলেও একটি সচল। অন্যটিতে চলছে সংস্কারকাজ। ফলে লিফটের সামনের লাইন জিলাপির প্যাঁচ খেয়ে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বেচারা লিফট খুলতেই তাতে হুড়মুড়িয়ে সবাই উঠতেই ককিয়ে উঠল লিফট। পারিবারিক প্রয়োজনে টানা তিন দিন হাসপাতালের এই লিফট ব্যবহার করতে হওয়ায় এটা যে নৈমিত্তিক, তা একেবারে বোঝা হয়ে গেল।
এবার না হয় অন্দরে ঢোকা যাক। হাসপাতালে মোহন উদ্যান থাকার কথা নয়—এটা জানা কথা। কিন্তু তাই বলে এমন! ছয়তলায় মেডিসিন বিভাগে ভর্তির দিন কত লোক ভর্তি হয় একসঙ্গে? গুনতে যাওয়া পণ্ডশ্রম হবে বলে সে চেষ্টা করা হলো না। রোগীদের গোঙানির সঙ্গে আত্মীয় পরিজনদের আলাপ–চিৎকার মিলেমিশে একাকার। কোনো একটি আলাপ বিশেষ হয়ে ওঠা ভীষণ কঠিন। এর মধ্যেই কম বয়সী একজন চিকিৎসককে দেখা গেল বেশ ছোটাছুটি করছেন। ওয়ার্ডের এ মাথা–ও মাথা ছুটছেন। ফাইল দেখছেন। ভালো করে তাকাতে দেখা গেল এমন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আছেন। সময়টা বিকেল বলে সিনিয়রদের দেখা গেল না।
এতসব আলাপের মধ্যেই হঠাৎ এক নারী কণ্ঠ বেশ জোরালো হয়ে শোনা গেল। কান পেতে অনেকক্ষণ শোনার পর বোঝা গেল তিনি সিনিয়র আয়াদের একজন। সরকারি হাসপাতালে যে স্ট্রেচার, বেড, হুইলচেয়ার ইত্যাদি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে একটা বাণিজ্য চলে এই শ্রেণির কর্মীদের মাধ্যমে, তা তাঁর কথায় বেশ পরিষ্কার। কোনো রাখঢাক নেই। বললেন, ‘সবই যদি তোরা খাবি, খা। তোগো পেটে কত জায়গা রে?’ তাঁকে থামাতে একজন পুরুষ এগিয়ে এলেন। বেশ নরম গলায় তাঁকে বোঝাচ্ছেন, ‘এত খেপছস কেন? পরেরটা তুই পাবি।’
আরও কিছুক্ষণ কান পেতে শুনতেই বোঝা গেল, তাঁরা দুজনই একটি ক্ষমতা সমীকরণের অংশ, যারা এই স্ট্রেচার, বেড, টেস্ট ইত্যাদি নিয়ে চলা বাণিজ্যের ভাগীদার। এ নিয়ে গোটা দেশের মতোই একটা দলাদলি চলে। এক অংশ অন্য অংশের বাণিজ্যে ভাগ বসানোর চেষ্টা করে। আর এ থেকেই কেউ রাগে, কেউ হাসে। ঠিক রাষ্ট্রের মতোই ব্যাপার–স্যাপার। মুশকিল হচ্ছে এখানে তো সব অসুস্থ লোকেদের নিয়ে কারবার, যাদের অনেকের জীবন এক সরু সুতার ওপর ঝুলছে।
যেদিক থেকেই আসা যাক, সুস্থ মানুষেরই জ্যামিতি পাল্টে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। আর রোগগ্রস্তদের অবস্থা কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। জায়গাটা যেহেতু হাসপাতাল, সেহেতু সেখানে অসুস্থদেরই তো যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সে কথা মাথায় রেখে রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশের সড়কের সংস্কার হবে, তেমন আশা করা কঠিন। কারণ, চলছে তো সবই।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে সাধারণ মানুষ মিটফোর্ড হাসপাতাল নামেই চেনে। এবং সেই সূত্রে এর আশপাশের এলাকাকেও তাই। ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালগুলোর একটি এটি। সরকারি এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সাধারণ মানুষই আসেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর যাবতীয় পথ যেন সবাইকে নিরস্ত করতে চায়। ভালো উদ্যোগ বলা যেত, যদি তা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কার করে করা হতো।
সে যাক। হাসপাতালটিতে যাওয়ার প্রতিটি সড়কে চলছে সংস্কারকাজ। ফলে যানজট একেবারে বাঁধাধরা ব্যাপার। চকবাজার হয়ে বা বংশাল হয়ে বা ইসলামপুরের সটান রাস্তা ধরে—যেভাবেই যাওয়া যাক এক বেদম পথ–যন্ত্রণা সঙ্গী হবে।
হাসপাতালের মূল গেট দিয়ে ঢোকার সময়ই গেটে দেখা হবে ডাব বিক্রেতা থেকে শুরু করে নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। নাকে এসে লাগবে নানা রাসায়নিকের মিলিত একটি গন্ধ। প্রথমে কিছুটা ভালো লাগলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথা ধরে যাবে। কিন্তু বারবার সরানোর উদ্যোগ সত্ত্বেও যে রাসায়নিকের গুদাম ও ব্যবসা সরানো যায়নি, তাকে অপরিবর্তনীয় মেনেই এগিয়ে যেতে হবে।
হাসপাতালের মূল বড় গেট বন্ধ থাকায় লোকজনকে চলাচল করতে হয় পকেট গেট দিয়ে। করোনার এই সময়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার যে বার্তা সেকেন্ডে সেকেন্ডে প্রচার করা হয়, তার অন্তঃসারশূন্যতা মুহূর্তেই দৃশ্যমান হবে। কারণ, এই যে এত লোক—এরা তো দিব্যি করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেঁচে আছে।
গেটটি পার হওয়ার পর অবশ্য বিস্তৃত পরিসর। কিন্তু লিফটের সামনেই তা সংকীর্ণ হয়ে গেছে ভোজবাজির মতো। দু নম্বর ভবনের নিচতলায় সবাই হুড়োহুড়ি করছে লিফটে চড়তে। নিচতলায় দুই পাশে দুটি লিফট থাকলেও একটি সচল। অন্যটিতে চলছে সংস্কারকাজ। ফলে লিফটের সামনের লাইন জিলাপির প্যাঁচ খেয়ে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বেচারা লিফট খুলতেই তাতে হুড়মুড়িয়ে সবাই উঠতেই ককিয়ে উঠল লিফট। পারিবারিক প্রয়োজনে টানা তিন দিন হাসপাতালের এই লিফট ব্যবহার করতে হওয়ায় এটা যে নৈমিত্তিক, তা একেবারে বোঝা হয়ে গেল।
এবার না হয় অন্দরে ঢোকা যাক। হাসপাতালে মোহন উদ্যান থাকার কথা নয়—এটা জানা কথা। কিন্তু তাই বলে এমন! ছয়তলায় মেডিসিন বিভাগে ভর্তির দিন কত লোক ভর্তি হয় একসঙ্গে? গুনতে যাওয়া পণ্ডশ্রম হবে বলে সে চেষ্টা করা হলো না। রোগীদের গোঙানির সঙ্গে আত্মীয় পরিজনদের আলাপ–চিৎকার মিলেমিশে একাকার। কোনো একটি আলাপ বিশেষ হয়ে ওঠা ভীষণ কঠিন। এর মধ্যেই কম বয়সী একজন চিকিৎসককে দেখা গেল বেশ ছোটাছুটি করছেন। ওয়ার্ডের এ মাথা–ও মাথা ছুটছেন। ফাইল দেখছেন। ভালো করে তাকাতে দেখা গেল এমন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আছেন। সময়টা বিকেল বলে সিনিয়রদের দেখা গেল না।
এতসব আলাপের মধ্যেই হঠাৎ এক নারী কণ্ঠ বেশ জোরালো হয়ে শোনা গেল। কান পেতে অনেকক্ষণ শোনার পর বোঝা গেল তিনি সিনিয়র আয়াদের একজন। সরকারি হাসপাতালে যে স্ট্রেচার, বেড, হুইলচেয়ার ইত্যাদি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে একটা বাণিজ্য চলে এই শ্রেণির কর্মীদের মাধ্যমে, তা তাঁর কথায় বেশ পরিষ্কার। কোনো রাখঢাক নেই। বললেন, ‘সবই যদি তোরা খাবি, খা। তোগো পেটে কত জায়গা রে?’ তাঁকে থামাতে একজন পুরুষ এগিয়ে এলেন। বেশ নরম গলায় তাঁকে বোঝাচ্ছেন, ‘এত খেপছস কেন? পরেরটা তুই পাবি।’
আরও কিছুক্ষণ কান পেতে শুনতেই বোঝা গেল, তাঁরা দুজনই একটি ক্ষমতা সমীকরণের অংশ, যারা এই স্ট্রেচার, বেড, টেস্ট ইত্যাদি নিয়ে চলা বাণিজ্যের ভাগীদার। এ নিয়ে গোটা দেশের মতোই একটা দলাদলি চলে। এক অংশ অন্য অংশের বাণিজ্যে ভাগ বসানোর চেষ্টা করে। আর এ থেকেই কেউ রাগে, কেউ হাসে। ঠিক রাষ্ট্রের মতোই ব্যাপার–স্যাপার। মুশকিল হচ্ছে এখানে তো সব অসুস্থ লোকেদের নিয়ে কারবার, যাদের অনেকের জীবন এক সরু সুতার ওপর ঝুলছে।
রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের দুই রেলিং ঢুকে আছে একটি বাসের মাঝ বরাবর। যাত্রী নিতে আরেক বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ‘রইছ’ নামের বাসটির এই দশা হয়। ৪ জুন সকালের এই দুর্ঘটনায় বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। যাত্রী বেশি নিতে বাসচালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা, লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন বাস দুর্ঘটনা
৩ ঘণ্টা আগেগোপালগঞ্জ জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে বছরের পর বছর বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস পার্ক করে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন সড়কের এক লেন দখল করে রাখা হচ্ছে এসব যানবাহন। এতে প্রতিদিন যানজটসহ নানা ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। মালিক-শ্রমিকেরা বলছেন, নির্ধারিত স্ট্যান্ড না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় গাড়ি রাখছেন তাঁরা।
৪ ঘণ্টা আগেআলুতে বছরের পর বছর লাভ করে অভ্যস্ত জয়পুরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তবে এবার পড়েছেন বড় ধরনের বিপাকে। একদিকে বাজারে আলুর দাম অস্থির, অন্যদিকে হিমাগারে সংরক্ষণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন সবাই। সংরক্ষণ মৌসুমের শুরুতে স্থানীয় প্রশাসনের চাপে ভাড়া না বাড়াতে বাধ্য হলেও পরে কিছু হিমাগারের মালিক নানা অজুহা
৪ ঘণ্টা আগেনীলফামারীর সৈয়দপুরে চলছে জুয়ার জমজমাট আসর। উপজেলার দেড় শতাধিক স্থানে এসব আসর বসে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন ২০-৩০ লাখ টাকা লেনদেন হয় এসব আসরে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে জুয়াড়িদের কাছে হাতবদল হয় ৬ থেকে ৯ কোটি টাকা। এদিকে, জুয়ার কারণে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হচ্ছে। জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে এলাকায় বেড়েছে
৪ ঘণ্টা আগে