Ajker Patrika

শিল্পকলা একাডেমি: নাট্যকর্মীদের প্রাণবন্ত আড্ডা ফিরবে কবে

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঐতিহ্যবাহী বেইলি রোড ছেড়ে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার নাট্যচর্চার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা। এর তিনটি হলে নিয়মিত নাট্যচর্চা হয়ে আসছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। একে উপলক্ষ করে নাট্যকর্মীদের আড্ডায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠত শিল্পকলা চত্বর। কিন্তু ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন কারণে নাটকের প্রদর্শনী যেমন কমে গেছে, তেমনি সন্ধ্যায় নাট্যকর্মীদের জমায়েতও তেমন চোখে পড়ে না।

নাট্যকর্মী, সংগঠকদের সঙ্গে কথা বলে শিল্পকলা একাডেমিতে তাঁদের বিচরণ কমার কয়েকটা কারণ জানা গেল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নাট্যকর্মী বলেছেন, একাডেমির আশপাশে মবের (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) তাণ্ডবের পর থেকে অনেকে স্বাধীনভাবে নাট্যচর্চা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। কাকে কখন কোন রাজনৈতিক ট্যাগ দেওয়া হয়, তা নিয়ে আতঙ্কে আছেন। তা ছাড়া মাত্র দুটি মহড়াকক্ষ নাটকের জন্য দেওয়া হচ্ছে। বাকি কক্ষগুলো সরকারি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমির নাটক প্রদর্শনীগুলোয় দর্শকের খরা চলছে। শুক্রবার ছাড়া দর্শক পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আর নাটকের প্রদর্শনী জমে উঠছে না বলেই শিল্পী-কলাকুশলীদের আগের মতো জম্পেশ আড্ডাও তেমন হচ্ছে না।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত প্রায় ৫০টি নাট্যদল রাজধানীতে নিয়মিত নাটকের প্রদর্শনী করে। এর বাইরেও বেশ কয়েকটি নাটকের দল সক্রিয় রয়েছে। বেশির ভাগ দলই শিল্পকলা একাডেমির হলে প্রদর্শনী করতে চায়। তবে হলের সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় সাধারণত অনেক নাটকের দল আবেদন করেও সময়মতো হল পায় না। কিন্তু হল বরাদ্দের সাম্প্রতিক তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিলনায়তনগুলো ফাঁকা থাকছে।

গত বছরের আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে নাট্যাঙ্গনে কিছুদিন স্থবিরতা চলে। ১১ অক্টোবর থেকে সীমিতভাবে মিলনায়তন খুলে দেয় শিল্পকলা একাডেমি। কিন্তু এরপরে উত্তেজিত জনতার প্রতিবাদের মুখে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের মঞ্চায়ন বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদকে হেনস্তা করা হয়। এরপরে আবার কিছুদিনের জন্য থমথমে হয়ে পড়ে শিল্পকলা প্রাঙ্গণ। ধীরে ধীরে আবার প্রদর্শনী শুরু হলেও সংখ্যা তেমন বেশি নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নাট্যকর্মী বলেছেন, নাটকের প্রদর্শনী করতে গেলে ‘তৌহিদি জনতা’র নামে প্রদর্শনী বন্ধের হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন নাট্যকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় নাটক বন্ধের খবর পাওয়া গেছে। এসব কারণে নাট্যকর্মীরা তাঁদের শিল্পচর্চা করার ক্ষেত্রে স্বস্তি পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না।

বেইলি রোডে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির মিলনায়তনে গত নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত প্রাঙ্গণেমোরের নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায় কথিত তৌহিদি জনতার উড়ো চিঠিতে। পরে অবশ্য প্রশাসনের আশ্বাসে আবার নাটকটি মঞ্চায়িত হয়। প্রাঙ্গণেমোরের কর্ণধার অনন্ত হিরা বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমি আগে প্রাণবন্ত ছিল, তার একটা কারণ ছিল। আগে নাট্যকর্মী, নাটকের দর্শক ছাড়াও চিত্রকলাসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষেরা এখানে আড্ডা দিতেন। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি নেই। শিল্পকলায় কোনো প্রদর্শনী হলে দর্শককে টিকিট দেখিয়ে ঢুকতে হয়। সারাক্ষণ ফটকগুলো বন্ধ থাকে। শুধু ছোট পকেট গেট দিয়ে টিকিটধারীরা ঢুকতে পারেন। এমন অবরুদ্ধ পরিবেশে আমাদের সংস্কৃতিকর্মী বা দর্শকেরা অভ্যস্ত নন।’

হল খালি থেকে যাওয়ার বিষয়ে অনন্ত হিরা বলেন, ‘আমাদেরসহ বেশ কয়েকটি নাটকের দলকে পরিকল্পিতভাবে হল দেওয়া হয় না। আমি ৬ মাস ধরে হলের জন্য আবেদন করছি। কিন্তু হল দেওয়া হয় না। আবেদন করাই বন্ধ করে দিয়েছি। কেন দেওয়া হয় না, এটা হল বরাদ্দ কমিটি বলতে পারবে।’

থিয়েটার আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ঢাকার সভাপতি এবং প্রাচ্যনাটের দলপ্রধান আজাদ আবুল কালাম বললেন, ‘চব্বিশের ৫ আগস্টের পরে পুরো বাংলাদেশই একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে শিল্পকলায় প্রবেশে বিধিনিষেধ আছে। এর ফলে আগে অবাধ যে আড্ডা হতো, সেটা একটু কম। তবে শো হচ্ছে এখন। তিনটি হলই খোলা।’

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ বলেন, ‘বিষয়টি লক্ষ করেছি। অভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে এখনো সংস্কৃতিকর্মীরা স্বাভাবিকভাবে কাজে ফিরতে পারেনি। একটা অস্থিরতা রয়ে গেছে। ছুটির দিন ছাড়া দর্শকও শিল্পকলায় কম আসছে। আমরা দর্শকদের আগ্রহী করতে একাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।’

কামাল বায়েজিদ জানান, শিগগির গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজনে বাইরের দলগুলোকে দিয়ে ঢাকায় একটি নাটক উৎসব করার পরিকল্পনা আছে তাঁদের।

শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির একাডেমি প্রাঙ্গণের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতির একটা ব্যাখ্যা দিলেন। তাঁর কথায়, ‘নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখানে আছেন। এ কারণে শিল্পকলায় প্রবেশে বিধিনিষেধ আছে। আমরা চেষ্টা করছি দর্শক ও নাট্যকর্মীদের জন্য তা যতটা স্বাভাবিক করা যায়। আর এখন নাট্য প্রদর্শনীর জন্য দলগুলোর আবেদনই কম থাকে। এ কারণে অনেক সময় মিলনায়তন খালি থাকে। ছুটির দিনে নাটক প্রদর্শনীর বেশি আবেদন থাকে। তবে একটি ছুটির দিন আমরা মাত্র একটি দলকেই হল দিতে পারি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পোশাকের পর অস্ত্র প্রশিক্ষণও পাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত এডিরা

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত