Ajker Patrika

ফরিদপুরে আসন পুনর্বিন্যাস: বিক্ষোভ-অবরোধে ঘি ঢাললেন নিক্সন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ৩২
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টানা ১১ ঘণ্টা দুটি মহাসড়ক ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা। এতে স্থবির হয়ে পড়ে উপজেলার সড়কপথ, দুর্ভোগে পড়েন দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ।

অবরোধ শেষে আগামীকাল বুধবার রেলপথ অবরোধ ও উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। তাঁরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে চলমান আন্দোলনের মধ্যে দুপুরে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে আন্দোলনের বিষয়ে তাঁকে বলত শোনা যায়, ‘আপনারা আন্দোলনে নেমেছেন—অবৈধ সরকার ও নির্বাচন কমিশনারকে উচিত জবাব দেবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দুই ইউনিয়ন ফেরত না দেবে এই অবৈধ সরকার। রোডঘাট যে যেখানে আছেন বন্ধ করে দেন।’

জানা যায়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত ৪৬টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন এনে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুরের দুটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।  

ফরিদপুর-৪-এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠে স্থানীয়রা।

শুক্রবার দিনভর উত্তাল হয়ে উঠেছিল ভাঙ্গা উপজেলা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুটি মহাসড়কসহ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ ব্লকেড করা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন এবং সোমবার পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

আজ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বর, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, পুখুরিয়া ও মাধবপুর এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুনসুরাবাদ, সোয়াদি এলাকায় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভাঙ্গা গোলচত্বরের দুটি মহাসড়ক অবরোধের কারণে তীব্র জনভোগান্তি দেখা দেয়। দুটি মহাসড়কের দুই পাশে ৪০ কিলোমিটারজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীসহ আটকে পড়া যানবাহনের লোকজন চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন।

ঢাকা থেকে পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায় একটি পরিবারকে। তাঁদের সঙ্গে বহনকৃত লাগেজ ও দুজন শিশু ছিল। জানতে চাইলে পুরুষ সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন হেঁটে ও ভ্যানে করে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘মানুষকে ভোগান্তি করে আন্দোলনের কোনো মানে হয় না।’ এ ছাড়া আটকে পড়া পরিবহনের চালকেরা খাদ্যসংকটেও ভুগেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলার আলগী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য এসকেন্দার হোসেন বলেন, ‘আমাদের নগরকান্দা দেওয়া হলে জারজ সন্তান হিসেবে গণ্য হব। আমরা রোহিঙ্গা হয়ে থাকতে চাই না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি পূরণ না হবে, ততক্ষণ সড়ক ছাড়ব না। ভাঙ্গার ওপর দিয়ে কোনো গাড়ি চলতে দেব না।’

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা খেলাফত মজলিসের সহসভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান মোল্যা বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হলে আগামীকাল শুধু সড়ক অবরোধ নয়, রেলপথও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভাঙ্গার সব অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার কোনো যোগাযোগ করতে দেব না। এটা আমাদের মা ও মাটির দাবি।’

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা জানান, আন্দোলনকারীরা তাঁদের দাবির সমর্থনে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। ওই স্মারকলিপিটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বর। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গোলচত্বর। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি বলেন, এ আন্দোলনে অবরোধকারীদের মধ্যে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মাত্রা বেড়েছে। ভাঙ্গার ইউএনও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেও তাদের মহাসড়ক থেকে সরাতে পারেনি।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘এটা একটা জাতীয় সমস্যা। স্থানীয় সমস্যা হলে আমাদের পক্ষে সমাধান করা সহজ হতো, কিন্তু জাতীয় সমস্যার সমাধান জাতীয়ভাবেই খুঁজে বের করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত