Ajker Patrika

রাজধানীর গুলিস্তানে হকারের দখলে সড়ক-ফুটপাত

  • উচ্ছেদের ১০ মিনিটের মধ্যেই হকাররা ফিরে আসেন আগের জায়গায়।
  • হকার নেতারা বলছেন, পুনর্বাসনই হতে পারে হকার সমস্যা সমাধানের উপায়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
চলাচলের রাস্তা দখল করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। এতে চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন যানের চালক ও যাত্রীদের। গতকাল বিকেলে গুলিস্তানের লিংক রোডে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলাচলের রাস্তা দখল করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। এতে চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন যানের চালক ও যাত্রীদের। গতকাল বিকেলে গুলিস্তানের লিংক রোডে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘এই যে ভাই ব্রাশ ২০ টাকা, মাত্র ২০ টাকা। ব্র্যান্ডের ব্রাশ ২০ টাকা।’—রাজধানীর গুলিস্তানের একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে বেজে চলছে পথচারীদের উদ্দেশে হ্যান্ডমাইকের রেকর্ড। পাশের ভ্যান গাড়িতে থাকা ভ্রাম্যমাণ আরেক দোকান থেকে ভেসে আসছে, ‘গার্মেন্টস আইটেম পাচ্ছেন মাত্র ১০০ টাকা, গেঞ্জি পাচ্ছেন ১০০ টাকা।’ শার্ট বিক্রেতা এক হকার খালি গলায় ডেকে চলছেন, একটা কিনলে এক শ, জোড়া কিনলে দেড় শ।’

এভাবে হকারদের হাঁকডাক আর হ্যান্ডমাইকের রেকর্ডে দিনের বড় অংশ সরগরম থাকে রাজধানীর গুলিস্তান। রমরমা এই ব্যবসা চলছে রাস্তা দখল করে। গুলিস্তান এলাকার বায়তুল মোকাররম, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গোলাপ শাহ মাজার-সংলগ্ন সড়কের বড় অংশ দখলে রয়েছে হকারদের। এখানের হকারেরা জামা, প্যান্ট, জুতা, প্রসাধনীসহ হাজার রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। বাংলাদেশ হকার ইউনিয়নের তথ্য অনুসারে, গুলিস্তানে পাঁচ হাজার হকার রয়েছেন। সরকার বদলের পর সম্প্রতি হকারের সংখ্যা বেড়েছে।

ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে দোকান বসানোর কারণে পথচারীদের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়ছে। সড়ক সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় তীব্র যানজট লেগেই থাকে এখানে। পুলিশ মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ১০ মিনিটের মধ্যে হকারেরা ফেরেন আগের জায়গায়। হকার নেতারা বলছেন, জীবিকার তাগিদে অনেকে দোকান নিয়ে বসেন। উচ্ছেদের বদলে পুনর্বাসন করা হলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।

গত বুধবার দুপুর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তানের আশপাশের সড়কগুলোয় ভ্রাম্যমাণ দোকানের কারণে তিল পরিমাণ জায়গা অবশিষ্ট নেই। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ গুলিস্তান লিংক রোডের বেশির ভাগ জায়গাজুড়ে রয়েছেন হকারেরা। অবশ্য কিছু অংশে ভ্রাম্যমাণ দোকানের ফাঁক গলে রিকশা চলতে দেখা গেছে। তবে কিছু সময় পরপরই রিকশা, পথচারী আর ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের জটলা লেগে যাচ্ছে।

গাজীপুরের টঙ্গীর বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ব্যবসার কাজে সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন গুলিস্তান হয়ে সদরঘাটে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ‘গুলিস্তানের দুই মিনিটের পথ পার হতে আধা ঘণ্টা লাগে। মেইন রোডের অর্ধেকের বেশি হকারেরা দখল করে রাখেন। হেঁটে গেলেও রীতিমতো যুদ্ধ করে মানুষ ঠেলে গুলিস্তান পার হতে হয়।’

জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধ অনেক ভ্রাম্যমাণ দোকান দেখা গেছে। এক সারি দোকান ফুটপাতের ওপরে, আরেক সারি সড়কে। বুধবার বেলা ৩টার দিকে গোলাপ শাহ মাজার-সংলগ্ন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সামনে থেকে দুই পুলিশ সদস্যকে লাঠি হাতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেছে। পুলিশ দেখে অনেক ভ্রাম্যমাণ হকারেরা দোকান গুটিয়ে নেন। পুলিশ চলে যাওয়ার ১০ মিনিট পরই হকারদের ফিরে আসতে দেখা গেছে।

উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেওয়া পল্টন থানার পুলিশ সদস্য নাজমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা গুলিস্তানে ঘুরে ঘুরে হকারদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিই। এভাবে না করলে তাঁরা পুরো রাস্তা ব্লক করে দেন।’

গোলাপ শাহ মাজার-সংলগ্ন প্রধান সড়কে গার্মেন্টস আইটেম বিক্রি করেন মাহফুজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশকে দিনে দুই-আড়াই শ টাকা দিতে হতো। পুলিশ এখন টাকা নেয় না, তবে সুযোগ পেলেই দৌড়ানি দেয়।’

মাথায় ঝুড়ি ও হাতে টুল নিয়ে গুলিস্তানে হেঁটে হেঁটে জামাই পিঠা বিক্রি করেন রিপন ইসলাম। রিপন বলেন, তিনি সারা বছর পিঠা বিক্রি করেন। পুলিশ ঝামেলা করলে চকবাজর বা পল্টন এলাকায় গিয়ে বিক্রি করেন। পিঠা বিক্রির টাকায় তাঁর সংসার চলে।

বাংলাদেশ হকার ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গুলিস্তানের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেকার মানুষ রুটি-রুজির জন্য হকারি করে। স্বল্প বেতনের অনেক চাকরিজীবী আধা বেলা হকারি করেন। হকার বাড়ার কারণে যান চলাচলে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এর সমাধান আলাদা মার্কেট করে হকার পুনর্বাসন করা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত