Ajker Patrika

তেজগাঁওয়ে গুলি: ‘কেউ আর্থিক সহায়তা করলে হয়তো ভুবনকে বাঁচাতে পারব’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১: ৪৮
তেজগাঁওয়ে গুলি: ‘কেউ আর্থিক সহায়তা করলে হয়তো ভুবনকে বাঁচাতে পারব’

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত মোটরসাইকেল আরোহী অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র শীলের চিকিৎসার ব্যয় জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে তাঁর পরিবার। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে ভুবনের চিকিৎসায়। ধারদেনা করে এই ব্যয় বহন করছে তাঁর পরিবার। ভুবন রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। 

আজ শুক্রবার মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় ভুবন চন্দ্রের স্ত্রী রত্না রানী শীলের সঙ্গে। রত্না জানান, হাসপাতালে চার দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন তাঁর স্বামী। চিকিৎসার খরচ জোগাতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন ভুবনকে আরও এক মাস হাসপাতালে থাকা লাগতে পারে। স্বামীর চিকিৎসার সহায়তায় সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রত্না বলেন, ‘আমাকে এই মুহূর্তে কেউ আর্থিক সহায়তা করলে হয়তো ভুবনকে বাঁচাতে পারব। এই মুহূর্তে আমি চরম আর্থিক সংকটে আছি। আমার পক্ষে কখনই সম্ভব না পপুলারের ব্যয় বহুল চিকিৎসার ভার নেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, আমাকে সরকারি নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার, আর্থিক সহায়তা করার।’ 

রত্না আরও বলেন, ‘আমি অসুস্থ। ভারতে গিয়ে কয়েকবার চিকিৎসা করিয়েছি। ভুবন যা আয় করেছে সব আমার পেছনে চিকিৎসার জন্য খরচ করেছে। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আর কত ধারদেনা করব। কে আমাকে টাকা দেবে।’ 

গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সিটি পেট্রলপাম্প এবং বিজি প্রেসের মাঝামাঝি সড়ক দিয়ে ভাড়ায় মোটরসাইকেলে চড়ে বাসায় যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন ভুবন। তাঁর মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায় গুলি। শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীদের করা গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আহত হন ভুবন। তাঁকে প্রথমে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই ভুবনকে রাজধানীর ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ভুবনের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। গুলি সরাসরি গিয়ে তাঁর মস্তিষ্কে আঘাত করেছে। কপালের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে পেছন দিয়ে বের হয়ে গেছে। ৭২ ঘণ্টা পার হয়েছে। এর মধ্যে অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। 

ভুবনের চিকিৎসার দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রের নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কথা রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যখন সেটা করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং এর ফলে একজন নাগরিক মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায় এবং দায়িত্ব দুটিই ছিল।

লিটন আরও বলেন, চিকিৎসা ব্যয় অস্বাভাবিক হওয়ায় ভুবনের পরিবারের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। আজকের প্রেক্ষাপটে একটি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানের পক্ষে এ চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। আহত ভুবনের চিকিৎসার দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রের নেওয়া উচিত। 

রত্নার ভাই পলাশ মজুমদার বলেন, ‘আমরা কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি। প্রথম দিন হাসপাতালের খরচ এসেছে ৯৩ হাজার। পরদিন ৬৫ হাজার, তার পরদিন ৫৩ হাজার। শুক্রবারের বিলের হিসাব এখনো পাইনি। এখন পর্যন্ত সব মিলে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে।’ 

পলাশ আরও বলেন, ‘আজ রাতে চিকিৎসক একটা অপারেশন করবেন। আমাদের জানানো হয়েছে, মস্তিষ্কে থাকা স্প্লিন্টার অপসারণ করা হবে। অপারেশনে লাগবে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। চিকিৎসক আমাদের বলেছেন, ভুবনের ২০ ভাগ বাঁচার আশা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত