Ajker Patrika

কানে কম শোনেন রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশদের ১২ %

মাহমুদ সোহেল
কানে কম শোনেন রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশদের ১২ %

যত দিন যাচ্ছে, দেশে শব্দ দূষণ তত বাড়ছে। বিশেষত রাজধানীতে শব্দ দূষণ এক ভয়াবহ মাত্রা পেয়েছে। এটা এতটাই যে, ঢাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশদের প্রায় ১২ শতাংশ কানে কম শোনেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। 

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়। গবেষণা তথ্য বলছে, তীব্র দূষণের কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সদস্যদের ১১ দশমিক ৮ শতাংশই কানে কম শোনেন। 

গবেষকেরা বলছেন, ঢাকার শব্দ দূষণের প্রধান কারণ দুটি। প্রথমটি গাড়ির হর্ন এবং দ্বিতীয়টি নির্মাণকাজ। রাজউকের কিছু বিধিনিষেধের কারণে ভবন নির্মাণে শব্দ এখন আগের চেয়ে কম হলেও গাড়ির হর্নের কারণে শব্দ দূষণ বেড়েছে। 

করোনা পরিস্থিতির কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ এখন আর নেই। সেই ধাপ পেরিয়ে আসার পর নীরবতা ভেঙে পুরো ঢাকা শহর জেগে উঠেছে। আর এই জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পুরো শহর আবারও শব্দ দূষণের কবলে পড়েছে। দেশি-বিদেশি নানা গবেষণায় বলা হচ্ছে, শহরের প্রায় সব এলাকাতেই শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। ঢাকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন এই দূষণের কবলে। কিন্তু কারও কোনো রা নেই। গাড়ির হর্ন বা নির্মাণকাজ তো আছেই, সঙ্গে মাইক লাগিয়ে চারপাশ কাঁপিয়ে নানা অনুষ্ঠানের বহর আছে। দিন বা রাত যেকোনো সময়ই যেকোনো অজুহাতে উচ্চ শব্দে মাইক বেজে চলাটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

অথচ, বাংলাদেশে রাত ১০টার পর উচ্চ শব্দের অনুষ্ঠান আইনবিরোধী। এটি করলে শাস্তির বিধান আছে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায়। যদিও এটি জানেন না অনেকেই। বিধিমালা অনুযায়ী, এই আইন অমান্যকারীকে প্রথমবারের অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। দ্বিতীয়বারের অপরাধের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর অধীনে এই বিধিমালা প্রণীত হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই আইনে কারও শাস্তি হয়নি। 

করোনা পরিস্থিতির কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ চলার সময় ঢাকার শব্দদূষণ পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো থাকলেও এখন তা আবার বদলে গেছেশব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী ঢাকার এলাকাগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা। এলাকাভেদে শব্দের আলাদা মানমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে। শব্দ মাপার একককে ডেসিবেল বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনের বেলা (সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়ার কথা। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল ও রাতে ৫৫ ডেসিবেল, শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবেল ও রাতে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দমাত্রা থাকার কথা। আর হাসপাতাল এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা থাকার কথা। 

কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ঢাকায় শব্দের মাত্রা সব সময় বেশি থাকছে। 

সম্প্রতি ঢাকার ১০টি স্থানে গবেষণা চালিয়ে এর চেয়ে বেশি শব্দ দূষণ পেয়েছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। গত এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই—এই চার মাস গবেষণাটি চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, ১০টি স্থানের মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ঘোষিত তিনটি নীরব এলাকাও রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—সংসদ ভবন এলাকা, শাহবাগ ও আহসান মঞ্জিল। এই তিন এলাকায় ৯৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ সময়জুড়ে শব্দ দূষণ মানমাত্রার চেয়ে বেশি ধরা পড়েছে। আবাসিক এলাকায় ৯৮ দশমিক ৩১ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকায় ৬৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, মিশ্র এলাকায় ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং শিল্প এলাকায় ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ সময় মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ দূষণ পাওয়া গেছে। 

গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও ক্যাপসের পরিচালক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্বের সেরা শব্দ দূষণ শহরের একটি। এখানে আইন আছে, মানুষ তা জানে না। কারও কারও ধারণা নিজের বাসায় রাত-বিরাতে উচ্চ স্বরে গান বাজানো অপরাধ নয়। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো হেনস্তার শিকার হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে ঢাকায়। 

শব্দ দূষণ কত ক্ষতি করতে পারে, ঢাকার অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আচরণগত পরিবর্তনও হয়। বিশ্বের যে দেশ যত উন্নত, সেই দেশের মানুষের মধ্যে তত সচেতনতা বাড়ছে। শব্দ দূষণের ক্ষতি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এখনই জোরালো প্রচার শুরুর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ে ভয়ের তথ্য দিচ্ছেন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও। তাঁরা জানান, দীর্ঘদিন শব্দ দূষণের মধ্যে থাকলে সেই ব্যক্তি অনেকাংশে বধির হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে দুশ্চিন্তা ও উগ্রতা বেড়ে যাওয়া এবং ঘুম কম হওয়ার সংকট বাড়ে। কমে যেতে পারে স্মরণশক্তি। সঙ্গে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ার বিষয়টি তো আছেই। 

এক গবেষণার বরাত দিয়ে ঢাকার ৩৫ শতাংশ মানুষ কানে কম শোনে বলে জানান নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ঢাকার ১৪ শতাংশ মানুষের কানে অসুখ আছে। তাদের শ্রবণ শক্তি কমেছে। বাড়ছে হৃদ্‌রোগ। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। বধিরতা বাড়ছে। গর্ভে থাকা সন্তানও শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে।’ 

শব্দ দূষণের এই নেতিবাচক প্রভাবে কিন্তু শুধু ঢাকাবাসী নেই। দূষণের মাত্রা দেশের সব ছোট-বড় শহরেই বেশি। এতে মোটাদাগে দেশের ২০ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি কমে গেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত ২০১৩ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। 

অথচ শব্দ দূষণ বিধিমালা অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের বাইরে প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) এ সম্পর্কিত আইন প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু প্রচারের অভাবে বিষয়টি নাগরিকেরা জানেন না। থানায়ও অভিযোগ করেন না কেউ। আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। 

দীর্ঘ দিন ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ে কাজ করছেন বাপার নির্বাহী সহসভাপতি ডা. আব্দুল মতিন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘দেশের ৯০ ভাগ মানুষ শব্দ দূষণ কী, তা জানে না। টেলিভিশন ও বেতারে শব্দ দূষণের কুফল নিয়ে প্রচার বাড়াতে হবে।’ 

শব্দ দূষণ বন্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের অনুমতি আছে। বাকি সব হর্ন ব্যবহারই অবৈধ। সরকারি, ক্ষমতাশালী ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা ঢাকায় বেশি শব্দ দূষণ করছে। এই দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের কিছু নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কেউ। এই অপরাধের দায়ে আজ পর্যন্ত কারও সাজা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ৪৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরের চালিতাতলী এলাকার মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকেছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। হাত থেকে লিফলেট দিয়ে দোকানদারের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ১৫–২০ জন নেতা-কর্মী।

বিএনপি প্রার্থীর খুব কাছাকাছি ছিলেন এক ডজনের বেশি মামলার আসামি সরওয়ার বাবলা (৪৩)। তাঁর গায়ে ছিল সাদা প্যান্ট ও গেঞ্জি। গেঞ্জির পেছনে বড় অক্ষরের ইংরেজি লেখা। বাবলার পিঠের কাছাকাছি একজন সেলফিতে ব্যস্ত, আচমকা পেছন থেকে একটি হাত ওঠে, বাড়ন্ত ওই হাতে ছিল স্বয়ংক্রিয় পিস্তল। কেউ কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঠাস ঠাস আওয়াজ। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাবলা। মুহূর্তের মধ্যে সটকে পড়ে হামলাকারীরা। সবার মুখে মাস্ক ছিল। সংখ্যায় তাঁরা আটজনের মতো ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী মো. শাহাবুদ্দিন ও মো. ইসমাইল জানান, গণসংযোগকালে সাত থেকে আটজনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ খুব কাছ থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।

ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বাবলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা পিতা আবদুল কাদের ও ভাই মো. আজিজ আহাজারি করে বলেন, ‘এভাবে গুলি করে বাবলাকে মারার ঘটনা নজিরবিহীন। কার কাছে বিচার চাইব?’

ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী মো. শাহাবুদ্দিন জানান, গণসংযোগের প্রচারণা দলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। কেউ কোনো কিছু আঁচ করতে পারেনি এ কারণে।

এ ঘটনায় পাশে থাকা বিএনপি প্রার্থী এরশাদের সঙ্গে শান্ত নামের আরও একজন গুলিবিদ্ধ হন। সবাইকে কাছাকাছি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা বাবলাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দুজন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এভারকেয়ার হাসপাতালের এজিএম রাম প্রসাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনজনের মধ্যে সরোয়ার বাবলা মারা গেছেন। অন্য দুজনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বায়েজিদ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে কাউকে ঘটনাস্থল থেকে কিংবা অন্য কোনো স্থান থেকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গোলাগুলির ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আহত দুজনের অবস্থা শঙ্কামুক্ত। ঘটনার বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’ যেকোনো মূল্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেয় সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা। আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে মাগরিবের নামাজের পরপর শুরু হওয়া নির্বাচনী গণসংযোগে এলোপাতাড়ি গুলির ঘটনা ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় যুবক খুন, স্ত্রী ও তাঁর মামাতো ভাই গ্রেপ্তার

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বগুড়ায় জহুরুল ইসলাম (৩৮) নামের এক যুবককে খুনের অভিযোগে তাঁর স্ত্রীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বগুড়া সদরের হাজরাদীঘি গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলামের রক্তাক্ত লাশ গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই গ্রামের একটি ধানখেত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরে নিহত যুবকের স্ত্রী শামিমা বেগম (২৮) ও বিপুল হোসেন (৩৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিপুল শামিমার মামাতো ভাই।

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, গতকাল সকালে হাজরাদীঘি গ্রামের একটি ধানখেতে জহুরুল ইসলামের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। নিহত যুবকের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল। লাশ উদ্ধারের পর নিহত যুবকের স্ত্রী পুলিশকে জানান, গত সোমবার রাত ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে কে বা কারা জহুরুলকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাতে জহুরুল আর ফিরে আসেননি। কিন্তু পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্ত করে নিহত যুবকের স্ত্রী শামিমা ও তাঁর মামাতো ভাই পার্শ্ববর্তী অন্তাহার গ্রামের হামিদুর রহমানের ছেলে বিপুল হোসেনকে সন্দেহ করে। পরে আজ ভোরে নিহত জহুরুলের বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী শামিমা ও বিপুলকে আটক করে।

থানায় দুজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে বের হয় চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিহত যুবকের স্ত্রী শামিমা পুলিশকে জানান, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী একে অপরের মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন। আর জহুরুল ও বিপুল একে অপরের খালাতো ভাই। জহুরুল ইসলামের বাড়ি কাহালু উপজেলায় হলেও বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর ছোটবেলা থেকেই তিনি মামার বাড়ি হাজরাদীঘি গ্রামে বসবাস করতেন। তিনি পেশায় বেকারি পণ্যসামগ্রী পরিবহনের ভ্যানচালক আর বিপুল পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। জহুরুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ১৫ বছর আগে। তাঁদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। জহুরুলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই বিপুলের সঙ্গে শামিমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরেও তাঁরা প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিপুল মাঝেমধ্যে শামিমার বাড়িতে আসতেন। শামিমার বাবা বিপুল ও জহুরুলের মামা হওয়ার কারণে গ্রামের লোকজন বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখতেন না। কিন্তু বিপুলের যাতায়াত পছন্দ করতেন না জহুরুল। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে জহুরুলের দাম্পত্যকলহ লেগেই থাকত। শামিমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বিপুল তাঁকে একটি ছোট মোবাইল ফোন কিনে দেন। সেই ফোনটি শামিমা লুকিয়ে রাখতেন। এভাবে দীর্ঘদিন সম্পর্ক চলার একপর্যায় স্বামীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিপুলের সঙ্গে পরামর্শ করেন শামিমা। দুজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সোমবার রাতে শামিমা দুধের সঙ্গে কৌশলে তাঁর স্বামীকে ১৫টি ঘুমের বড়ি সেবন করান। কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে পড়লে রাত ১১টার দিকে বিপুল শামিমার বাড়ি আসেন। এরপর বিপুল কাঁধে করে জহুরুলকে বাড়ি থেকে বের করে গ্রামের একটি মাঠে পরিত্যক্ত বাড়ির কাছে নিয়ে যান। এ সময় সঙ্গে শামিমাও সেখানে যান। এরপর জহুরুলের মাথা পরিত্যক্ত বাড়ির দেয়ালের সঙ্গে কয়েকবার আঘাত করেন। একপর্যায়ে একটি পুরোনো স্যানিটারি প্যানের পরিত্যক্ত ভাঙা অংশ দিয়ে জহুরুলের মাথায় একাধিক আঘাত করে পাশের ধানখেতে ফেলে রেখে দুজন চলে যান।

পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজার রহমান জানান, নিহত জহুরুলের মা-বাবার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ না থাকায় এ ঘটনায় গ্রেপ্তার শামিমার বাবা শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় দুজনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নেছারাবাদে স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

পিরোজপুরের নেছারাবাদে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে (৯) দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নেছারাবাদ থানায় মামলা দায়ের করেন।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন নয়ন (২০), অপূর্ব (২০) ও দুর্জয় হালদার (২০)।

বুধবার (৫ নভেম্বর) ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পিরোজপুর সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রতিবেশী দুর্জয় হালদারের ঘরে মোবাইল চার্জার আনতে গেলে মুখে গামছা বেঁধে নয়ন, অপূর্ব ও দুর্জয় জোরপূর্বক তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া আসামিরা বিভিন্ন সময়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

নেছারাবাদ থানার ওসি মো. বনি আমিন বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফে কোকো ক্রীড়া সংসদের আহ্বায়কের লাশ উদ্ধারের পর সম্পাদক পলাতক

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
নিহত মো. ইউনুস। ছবি: সংগৃহীত
নিহত মো. ইউনুস। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইউনুস সিকদারের (৫০) লাশ উদ্ধারের পর থেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম সবুর মিয়া পলাতক রয়েছেন।

উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার একটি সেতুর নিচ থেকে বুধবার সকাল ৮টার দিকে ইউনুস সিকদারের লাশ উদ্ধার করা হয়। ইউনুস উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন।

পরিবারের অভিযোগ, ইউনুস গতকাল মঙ্গলবার রাতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম সবুর মিয়ার বাড়িতে আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর থেকে সবুর মিয়া পলাতক।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর জানান, সেতুর নিচ থেকে ভাসমান অবস্থায় একজন পুরুষের মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ওপরে তুলে শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গ পাঠিয়েছে।

ওসি জানান, ধারণা করা হচ্ছে, লেনদেনসংক্রান্ত পাওনা টাকা আদায়ের জন্য এই হত্যাকাণ্ড। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

টেকনাফ পৌর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, ইউনুসকে কমিটির কথা বলে সবুর মিয়া আমন্ত্রণ জানান। মঙ্গলবার রাতে যাওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ সেতুর নিচে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনার পর সবুর মিয়া পলাতক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রঙ্গিখালী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ইউনুস প্রায়ই সবুর মিয়ার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। সবুর মিয়া, আবছার উদ্দিন, আনোয়ার হোসাইন ওরফে লেটাইয়্যা, মিজানুর রহমান ওরফে বাড়ু মিজানসহ কয়েকজন মিলে এলাকার দোকানে আড্ডাও দিতেন। কয়েক দিন ধরে ইয়াবাসংক্রান্ত পাওয়া টাকার বিরোধের জেরেই তাঁদের মধ্যে প্রকাশ্যে কথা-কাটাকাটির ঘটনা শোনা গেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে সবুর মিয়ার বাড়িতে ইউনুসকে আটকে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। এতে মারা যাওয়ার পর লাশ সেতুর নিচে রেখে বাড়িতে তালা দিয়ে সবুরসহ অভিযুক্তরা পালিয়ে যান।

নিহতের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কোনো প্রকার টাকার লেনদেন নেই। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

ওসি জানান, পাওয়া টাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কী লেনদেনের টাকা, জানা যায়নি। যাঁদের নাম বলা হচ্ছে, তাঁদের ধরতে চেষ্টা চলছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত