Ajker Patrika

৯৬ শতাংশ বাস-মিনিবাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালায় 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৪
৯৬ শতাংশ বাস-মিনিবাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালায় 

সরকার বাস ও মিনিবাসে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু নগরীতে চলাচলরত ৯৬ শতাংশ বাস-মিনিবাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের সঙ্গে জড়িত। তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়া বা সর্বনিম্ন ভাড়া কিছুই মানেন না। নামমাত্র কিছু বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা থাকলেও তা অনুসরণ করা হয় না। বিভিন্ন বাস কোম্পানি কর্তৃক তাদের পরিবহনের জন্য কোম্পানি কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন ভাড়ার চার্ট অনুসরণ করে ভাড়া আদায় করা হয়। এই কারণে সরকারের ভাড়া নির্ধারণের আইনগত যোগ্যতা এখানে চরমভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন বলে মনে করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। 

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষে যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধের বিষয়ে আলোচনায় অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি, সিটিং সার্ভিস গাড়ির গায়ে লিখে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ, তিন গুন কোন কোন ক্ষেত্রে পাঁচগুন পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আবার এই সব সিটিং বাসে বাদুড়ঝোলা করে যাত্রীও বহন করা হচ্ছে। একদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, অন্যদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন। এই সব সিটিং গাড়িতে দাঁড়িয়ে যাত্রী বহনের কারণে যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে হাতাহাতি-মারামারি ঘটনাও ঘটছে। কিছুদিন যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও প্রশাসন, মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, বিআরটিএ বা পুলিশ কারও কোন সহযোগিতা না পেয়ে এক সময় এই নৈরাজ্যর কাছে যাত্রীরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে। 

বাসের ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস লক্কড়-ঝক্কড়। যেগুলো গড় ক্রয়মূল্য ৬ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। এগুলোকে নতুন বাস হিসেবে ৩৬ লক্ষ টাকা ক্রয়মূল্য, সোয়া ১১ লক্ষ টাকা ব্যাংকের সুদসহ ৪৭ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা প্রতিটি বাসের ক্রয়মূল্য ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। 

আলোচনা সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, 'সড়কে যেমন নিরাপত্তা নেই। তেমন সড়কে কি ধরনের নৈরাজ্য চলছে সেটা আমরা সবাই জানি। বেসরকারি একটি সংস্থার তথ্য দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ৬০ জন করে মারা যাচ্ছে আর বছরের ২৩  হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। অন্যান্য দেশের তুলনায়  সড়কের মৃত্যু বেশি বাংলাদেশ। লন্ডনের চেয়েও আমাদের রাস্তা অনেক প্রশস্ত, কিন্তু তারপরে দেখবেন আমাদের এখানে যানজট লেগে থাকছে মিস ম্যানেজমেন্ট এর কারণে। রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।' 

কাজী রিয়াজুল হক আরও বলেন, 'আমাদের দেশ অনেক কিছুই করতে পেরেছে। কিন্তু যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, সঠিকভাবে বাস পরিচালনা করতে না পারে এবং দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে যদি আমরা নিজেদের রক্ষ করতে না পারি। তাহলে সমস্ত অর্জন ম্লান হয়ে যাবে।' 

গোষ্ঠীর স্বার্থের কাছে যাত্রী স্বার্থ জিম্মি হয়ে আছে উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড হোসেন জিল্লুর রহমান আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, 'যাত্রী অধিকারের জন্য ছয়টি  বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ যেগুলো মানতে হবে, ন্যায্য ভাড়া, চালক হেলপার ও কাউন্টারে দুর্ব্যবহারের অবসান করতে হবে, নারী যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, বাসে ওঠা নামার শৃঙ্খলা আনতে হবে, পর্যাপ্ত সড়কবাতি ও যাত্রী ছাউনি ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার সড়ক পরিবহন আইন করেছে। সেটার পূর্ণাঙ্গ কার্যকারিতা আমরা দেখতে পাই না। বরং কিছু ধারা আরও দুর্বল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সুতরাং সার্বিক উন্নয়নের জন্য যাত্রী কল্যাণের বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।' 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখনো আমরা মানবিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে এখনো জিম্মি যাত্রীরা। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তাদের পক্ষ নেয় পরিবহন মালিকেরা। ফলে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেও খুব একটা যাত্রীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারছি না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত