Ajker Patrika

অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে ড্রেজার জব্দ ও কারাদণ্ড প্রদানের অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও ভৈরব সংবাদদাতা
গতকাল দুপুরে ভৈরব প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী ইজারাদার মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তানভীর আহমেদ নাগিব। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল দুপুরে ভৈরব প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী ইজারাদার মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তানভীর আহমেদ নাগিব। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না পেয়ে ভৈরবের মেঘনা নদীতে এসে ইজারাদারের বৈধ ড্রেজার জব্দ এবং দুই শ্রমিককে কারাদণ্ড দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়ার বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার প্রশাসনিক সীমা লঙ্ঘন করে ভৈরবের সীমানায় প্রবেশ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি ৪টি ড্রেজার ও ৫টি বাল্কহেড জব্দ করেন। একইসঙ্গে দুই শ্রমিককে এক বছরের কারাদণ্ড দেন এবং ড্রেজার মালিকের কাছ থেকে দুই দিনের বালু উত্তোলনের জমা ১১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ইজারাদার মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তানভীর আহমেদ নাগিব।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভৈরব প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

লিখিত বক্তব্যে ইজারাদার তানভীর আহমেদ নাগিব জানান, চলতি বছরের ১৪ মে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর, লুন্দিয়া ও টুকচানপুর এলাকায় ১৬১০ একর জমিতে বালু উত্তোলনের ইজারা দেন। প্রশাসন সীমানা নির্ধারণ করে দিলে তারা নিয়ম মেনেই বালু উত্তোলন শুরু করেন। কিন্তু বালু উত্তোলনের শুরু থেকেই আশুগঞ্জের ইউএনও রাফে মোহাম্মদ ছড়া বিভিন্নভাবে বাধা দেন এবং প্রতিদিন এক লাখ টাকা করে ঘুষ দাবি করেন।

তাঁর দাবি অনুযায়ী ঘুষ না দেওয়ায় ইউএনও প্রশাসনিক সীমা লঙ্ঘন করে বারবার ভৈরবের সীমানায় এসে অবৈধভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৪টি ড্রেজার ও ১টি বাল্কহেড জব্দ করেছেন এবং ৭ জন শ্রমিককে ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর ৪টি ড্রেজার ও ৫টি বাল্কহেড জব্দ করে দুই শ্রমিককে কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি দুই দিনের বালু বিক্রির ১১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন। এতে তিনি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে বৈধভাবে বালু উত্তোলন করা সত্ত্বেও আশুগঞ্জ প্রশাসনের হয়রানির কারণে তিনি ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাগিব বলেন, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন টেন্ডারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ইজারা দিয়েছে। সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করেই তারা বৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। অন্যদিকে, আশুগঞ্জ প্রশাসন কোনো নিয়ম না মেনে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে প্রকল্পের ঠিকাদার মীর আক্তার কোম্পানির পক্ষে কিছু ব্যক্তিকে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ প্রশাসনের কাছে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সদুত্তর দেননি। পরে মীর আক্তার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এই বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে।

ভুক্তভোগী তানভীর আহমেদ নাগিব আশুগঞ্জের ইউএনও রাফে মোহাম্মদ ছড়ার এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিচার এবং তার প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, "গুগল ম্যাপে নিশ্চিত হয়ে আমরা দেখেছি ভৈরবের সীমানা পার হয়ে আশুগঞ্জের সীমানায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছিল। সে কারণেই আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৪টি ড্রেজার ও বাল্কহেড জব্দসহ জড়িত দুইজনকে সাজা দেওয়া হয়।"

গতকাল দুপুরে ভৈরব প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী ইজারাদার মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তানভীর আহমেদ নাগিব। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল দুপুরে ভৈরব প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী ইজারাদার মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তানভীর আহমেদ নাগিব। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইউএনও আরও বলেন, মোবাইল কোর্ট চলাকালে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের লোকজন স্পিডবোটে এসে সরকারি কাজে বাধা ও হামলা করে। তারা একটি জব্দকৃত ড্রেজার ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন বলে জানান।

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, "আমাদের সবারই প্রশাসনিক একটি সীমানা রয়েছে। মেঘনা নদীর একপাশে ভৈরব এবং অন্যপাশে আশুগঞ্জ। বৈধ ইজারাদাররা তাদের নির্ধারিত অংশে বালু উত্তোলন করতে পারবেন। সীমানার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।"

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তারা প্রশাসনিকভাবে নদীতে নিয়মিত তদারকি ও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৪ মে কিশোরগঞ্জ জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভৈরব উপজেলার "মেঘনা নদী বালুমহাল" ১৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজকে ইজারা দেওয়া হয়। ১৪৩২ বাংলা সনের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এই ইজারা কার্যকর থাকবে। প্রতিষ্ঠানটি ইজারা মূল্য বাবদ ১৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১৫% ভ্যাট বাবদ ২ কোটি ৩ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০% আয়কর বাবদ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করে। এরপর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন সাদেকপুর, লুন্দিয়া ও টুকচানপুর এলাকায় ৯টি দাগে মোট ১৬১০ একর ভূমি ইজারাদারকে দখল বুঝিয়ে দেয়। দখল বুঝে পাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রিজন ভ্যান থামিয়ে ছাগল-কাণ্ডের মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা, ১১ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

মাজার ভেঙে লাশ পোড়ানোর সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই: ইসলামী আন্দোলন

নুরাল পাগলার দাফনকে কেন্দ্র করে যেভাবে সহিংসতা ঘটল

জাকসুর ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল

তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের আয়োজক সুইটি গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত